ফাইল চিত্র।
সদ্যসমাপ্ত জি৭ শীর্ষবৈঠকে ভারতের স্থান হইল এ বারও। ইতিপূর্বে ২০১৪ ও ২০১৯ সালে সর্বাধিক উন্নত অর্থনীতির সাতটি দেশের জোটের এই বৈঠকে যোগদান করিয়াছে নয়াদিল্লি, ‘শুভাকাঙ্ক্ষার সঙ্গী’ তকমাও মিলিয়াছে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত-সহ কয়েকটি দেশকে জি৭ জোটে স্থায়ী ভাবে যুক্ত করিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। তাহা হয় নাই, তবে এই বার ‘উন্নততর পুনর্গঠন’-এর লক্ষ্যে আয়োজিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদী উল্লিখিত স্বাস্থ্য বিষয়ক জোটের প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাইয়াছে। বহুদেশীয় প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীগুলিকে পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতির অঙ্কে সাজাইবার কথা বহু দিন যাবৎ বলিয়া থাকে নয়াদিল্লি। এগারোটি সমমনস্ক দেশ সম্মিলিত হইবার ফলে অতিমারি ঠেকাইবার লড়াই শক্তি অর্জন করিবে। তাহার সহিত পোক্ত হইবে মুক্ত বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন রুখিবার উদ্যোগ ও বিশ্বের বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ এবং গণতান্ত্রিক সমাজগঠনের লক্ষ্য। বস্তুত, পশ্চিমি দেশগুলির সহিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সূত্রে ভারতের কথোপকথন হইয়া থাকে, প্রধানমন্ত্রী তাহাদের ‘স্বাভাবিক মিত্র’ বলিলেন, বহুদেশীয় জোটের মিলিত অগ্রগতিতে তাহা সহায়ক হইবে।
অধুনা ‘পুনর্গঠন’-এর অর্থ ভাইরাসের প্রকোপ হইতে রক্ষা পাওয়া, অতএব বৈঠকে টিকা লইয়া সর্বাধিক কথা খরচ হইয়াছে। বহু দেশেই টিকার প্রবল আকাল, বিশ্ব জুড়িয়া ১০০ কোটি ডোজ় পাঠাইবার অঙ্গীকার করিয়াছেন রাষ্ট্রনেতারা, বিশেষত দরিদ্র ও মাঝারি আয়ের দেশগুলিতে। টিকার অভাব ভারতেও, নয়াদিল্লির বরাদ্দে তাই নজর থাকিবে। স্মরণীয়, চলতি মাসের সূচনায় বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সহিত বৈঠকের পর ভারতে টিকা পাঠাইবার কথা ঘোষণা করিয়াছিল ওয়াশিংটন। তাহারা জানাইয়াছিল, বিগত বৎসরের কঠিন পরিস্থিতিতে আমেরিকার পাশে দাঁড়াইয়াছিল ভারত, এই বার প্রতিদানের পালা। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ঢেউ আসিবার পূর্বে ৭২টি দেশে ভারতে প্রস্তুত টিকা রফতানি করিয়াছিল নয়াদিল্লি। শর্তহীন ভাবে বিশ্বকে রক্ষা করিবার এই অঙ্গীকারই সাম্প্রতিক জি৭ বৈঠকের অন্যতম নির্যাস।
জরুরি গণতন্ত্রের প্রশ্নটিও। বৈঠক পরবর্তী বিবৃতিতে চিনকে কটাক্ষ করিয়া শিনচিয়াং ও হংকং-এ জনতার উপর নিপীড়নের নিন্দা করা হইয়াছে। বেজিং-কে কেবল মানবাধিকার রক্ষার পাঠ পড়াইয়া ক্ষান্ত দেয় নাই জি৭ গোষ্ঠী, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ (বিআরআই)-এর পাল্টা আন্তর্জাতিক মহা-পরিকাঠামো নির্মাণের ঘোষণাও করিয়াছে। ‘একনায়কতন্ত্র’-এর বিপরীতে ‘বহু গণতন্ত্রের জোট’ তৈরির এই উদ্যোগ নয়াদিল্লির পক্ষে স্বস্তির। লাদাখের সীমান্তে চলমান বিবাদ বৎসরকাল পার করিয়াছে, দক্ষিণ চিন সাগরে ভারতের সামরিক ও অর্থনৈতিক উদ্যোগে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়াছে বেজিং, উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলির সহিত চিনের যোগ ভারতের চিন্তার কারণ— জি৭-এর ঘোষণা তাই বিশেষ তাৎপর্যবাহী। এবং, জি৭ কর্তৃক পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে বিআরআই-এর বিরোধিতা ইসলামাবাদের বিপরীতে নয়াদিল্লিকে অনেকখানি আয়ুধ জোগাইবে। ইহা কেবল চিন নহে, তাহার ‘সুখ-দুঃখের সঙ্গী’র প্রতি দৃঢ় বার্তাও বটে। পুনর্গঠন স্পষ্টতই হইতেছে। কোভিড-মুক্তির নিরিখে, নূতন আন্তর্জাতিক সমীকরণেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy