Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Israel-Hamas Conflict

মৃত্যুমিছিল

কে আগে আক্রমণ করেছে, কার প্রতিআক্রমণ আসলে আত্মরক্ষা— যে কোনও যুদ্ধ বা সামরিক অভিযানের রণনীতি-কূটনীতির এ-হেন তর্কের সমান্তরালে ঘটে চলে সাধারণ মানুষের মৃত্যুমিছিল।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫১
Share: Save:

অর্থনীতির হিসাব থেকে সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়তার খতিয়ান— জীবন এখন সংখ্যাসর্বস্ব। এমনকি মৃত্যুও। তাই সংখ্যা দেখে যেমন আমরা উৎফুল্ল হই, তেমনই শিউরেও উঠতে হয় যখন খবর আসে— গত বছর অক্টোবরের শেষ থেকে এ বছর ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত চার মাসে ইজ়রায়েলি হানায় গাজ়ায় মারা গিয়েছে ১২,৩০০-রও বেশি শিশু। যুদ্ধ কিংবা অন্য যে কোনও অবস্থায় একটিমাত্র শিশুর মৃত্যুও যেখানে চরম বেদনাবহ, সেখানে গাজ়ায় শিশুমৃত্যুর এই বিরাট সংখ্যাটি আমাদের শুধু যন্ত্রণাই দেয় না, স্তব্ধ করে— কারণ প্যালেস্টাইনি শরণার্থীদের ত্রাণকাজে নিয়োজিত রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থাটি জানাচ্ছে, ২০১৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত চার বছরে সারা পৃথিবীতেও এত শিশু মারা যায়নি। সংস্থার প্রধান বলেছেন, গাজ়ায় ইজ়রায়েলের যুদ্ধ শিশুদের উপর নেমে আসা যুদ্ধ; তাদের শৈশব, তাদের ভবিষ্যতের উপর নেমে আসা যুদ্ধ।

কে আগে আক্রমণ করেছে, কার প্রতিআক্রমণ আসলে আত্মরক্ষা— যে কোনও যুদ্ধ বা সামরিক অভিযানের রণনীতি-কূটনীতির এ-হেন তর্কের সমান্তরালে ঘটে চলে সাধারণ মানুষের মৃত্যুমিছিল। ইতিহাস সাক্ষী, যে কোনও যুদ্ধের প্রধান বলি আক্রান্ত ভূখণ্ডের নারী ও শিশুরা। অতীত কিংবা বর্তমান থেকে যদি ইহুদি, রোহিঙ্গা বা প্যালেস্টাইনি, বাংলাদেশ সুদান ইউক্রেন গাজ়ার মতো জাতি ও স্থান-নামগুলি ঊহ্যও রাখা হয়, তবু পড়ে থাকবে সংখ্যাতীত শিশুমৃত্যুর হিসাব। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার, নারী, শিশু ও শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলির, কিংবা রেড ক্রস-এর মতো আন্তর্জাতিক সেবা ও ত্রাণ সংস্থার বছর বছর প্রকাশিত রিপোর্টও রাষ্ট্রশক্তির সংবিৎ ফেরাতে পারেনি, শিশুমৃত্যুও বন্ধ হয়নি। ইজ়রায়েল যেমন সাফ জানিয়েছে কোনও রকম আন্তর্জাতিক চাপেই তারা যুদ্ধ থেকে সরবে না, গত রবিবারেই নতুন হুমকি দিয়েছে মিশর সীমান্তে রাফা শহর অভিযানের, দশ লক্ষাধিক প্যালেস্টাইনি সাধারণ মানুষ যেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। সুতরাং শিশুমৃত্যুর সংখ্যাও এখনই থামার নয়।

যে শিশুরা মারা গেল তারা যুদ্ধে যায়নি। যুদ্ধ অনেক সময়ই শিশুদের ব্যবহার করে, কখনও সহায়কের ভূমিকায়, কখনও টোপ হিসাবে। তাতেও তারা মারা যায়: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শিকার হিসাবে শিশুমৃত্যুর মর্মন্তুদ অনুসন্ধান করেছেন অনেক গবেষক-ইতিহাসবিদ। গাজ়ায় যে ইতিহাস নিরন্তর লেখা হয়ে চলেছে এই সময়ের প্রচারমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলির বয়ানে, তা শুধু যুদ্ধের তাৎক্ষণিক বীভৎসতার নয়, এক বহুদূরপ্রসারী ক্ষতির ইতিহাস। সেখানে লেখা থাকছে গুঁড়িয়ে যাওয়া শহরের তলায়, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে থাকা শিশুদের কথা, যাদের উদ্ধারও করা যাচ্ছে না। লেখা থাকছে নিখোঁজ শিশুদের কথা; যুদ্ধের জন্য খেতে না-পাওয়া, চূড়ান্ত অপুষ্টিতে ভোগা ‘জীবিত’ শিশুদের কথা: এক-একটি ওয়ার্ড এমন শিশুতে ভরে থাকা সত্ত্বেও গোটা হাসপাতাল নীরব, কেননা চিৎকার করে কাঁদতে হলেও যেটুকু স্নায়বিক শক্তির প্রয়োজন, এই শিশুদের সেটুকুও নেই, যুদ্ধজনিত ‘ট্রমা’-য় হারিয়েছে বাক্‌শক্তি। যুদ্ধের পিছনে ছায়ার মতো হাজির অনাহার ও দুর্ভিক্ষ, মুছে যাবে আরও বহু প্রাণ। শিশুমৃত্যুর সংখ্যা কোন তুঙ্গ স্পর্শ করলে যুদ্ধও লজ্জায় মুখ ঢাকবে, তারই বোধ হয় অপেক্ষা এখন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy