নারীবান্ধব কেরল’ কর্মসূচি শুরু করিতেছে পিনারাই বিজয়নের সরকার। বিবাহের পরে পণের চাপে সম্প্রতি এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় রাজ্যে ব্যাপক আলোড়ন উঠিয়াছে; সামনে আসিয়াছে পণের জন্য নিষ্ঠুরতা, হেনস্থা, অত্যাচার, খুন এবং নারীদের উপরে অন্যান্য পারিবারিক হিংসার বেশ কতকগুলি ঘটনা। ইহারই মধ্যে টিভিতে অসংবেদনশীল মন্তব্যের জেরে রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রধানকে পদত্যাগও করিতে হইয়াছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করিয়াছেন একগুচ্ছ পদক্ষেপ: চব্বিশ ঘণ্টার হেল্পলাইন, সক্রিয় ও তৎপর পুলিশ, ফাস্টট্র্যাক আদালত, জেলায় জেলায় পারিবারিক সমস্যা নিষ্পত্তি কেন্দ্র ইত্যাদি। শাসক দলের কর্মীদের বলা হইয়াছে বাড়ি বাড়ি যাইয়া জনসংযোগ করিতে, নারী সুরক্ষা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টি তুলিয়া ধরিয়া সচেতন করিতে।
পণের ন্যায় কুপ্রথা রুখিতে, নারীর সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করিতে এই সমস্তই জরুরি সন্দেহ নাই, তবে ইহাই যথেষ্ট নহে। মনে রাখিতে হইবে যে, নারীহিংসার এই সব ঘটনা ঘটিয়াছে কেরলে, শিক্ষার হার এবং বিশেষত নারীসাক্ষরতার হার যে রাজ্যে সর্বাধিক। শুধু তাহাই নহে, সামাজিক ও অন্যান্য মানব উন্নয়ন সূচকের নিরিখে নীতি আয়োগের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে এই রাজ্য সারা দেশে সর্বাগ্রে। অতিমারিকালে কেরল ছিল কোভিড-মোকাবিলার দৃষ্টান্তস্বরূপ, নারী স্বাস্থ্যমন্ত্রী-পরিচালিত রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী হইতে নার্স, চিকিৎসক-সহ ‘ফ্রন্টলাইন’ কর্মীদের উপর নির্ভর করিয়াছিল, তাঁহাদের বৃহদংশই নারী। সিপিএম শাসিত কেরল দলীয় মতাদর্শগত ভাবেও নারী ও পুরুষের সমানাধিকারে বিশ্বাসী। এই সব সত্ত্বেও সাম্প্রতিক নারীহিংসার ঘটনাগুলি চোখে আঙুল দিয়া দেখাইতেছে, নারী-অনুকূল সরকার-প্রশাসন থাকিলেও নারী সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত নহে। শিক্ষিত, মানবোন্নয়নে অগ্রগণ্য কেরলের রাজ্য-রাজনীতিতে স্থানীয় স্তরে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকিলেও বিধানসভা ও লোকসভায় কম, একুশ সদস্যের রাজ্য মন্ত্রিসভায় মাত্র তিন জন নারী। শিক্ষায় কেরলের নারীরা বহু পথ আগাইয়া আসিয়াছেন সত্য, কিন্তু রাজ্যের অর্থনীতি দেখিলে চোখে পড়িবে, শ্রমক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের হার বিশ শতাংশের কাছাকাছি মাত্র। প্রশাসনের নারীবান্ধব ভাবমূর্তি ও কর্মকাণ্ডের বিপরীতে রাজনীতি-অর্থনীতিতে নারীদের অবস্থানই প্রমাণ, নারীদের ক্ষমতায়নে কেরল সরকারের অনেক কাজ পড়িয়া আছে।
সেই কাজসমূহের মধ্যে প্রধান, পরিবার ও সমাজমন হইতে নারীবিদ্বেষের বীজ তুলিয়া ফেলা। সাম্প্রতিক কালে বহু-আলোচিত মালয়ালম ছবি দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন দেখাইয়াছে, শিক্ষিতা, রুচিশীল নারীরা বিবাহের পরে স্বামীগৃহে দৈনন্দিন সাংসারিকতার মধ্যেই কী করিয়া বিভেদ ও হিংসার শিকার হইয়া থাকেন। সেখানে পণের ব্যাপার ছিল না, থাকিলে অবস্থা কী রূপ দাঁড়াইত, বাস্তবজীবনের হিংসার ঘটনাগুলি সাক্ষী। সমাজমনে প্রোথিত সংস্কারগুলির অনেকাংশই নারীর মর্যাদা, সমানাধিকার ও ক্ষমতায়নের পরিপন্থী— সরকার তাহা দেখিয়াও না দেখিলে, বহিরঙ্গে নানা কর্মসূচি লইলে কাজ হইবে না। দরকার ভিতর হইতে প্রতিরোধ, নারীদের ভাষা, প্রত্যয় জোগানো। সমাজকে সমদর্শনের পথে পরিচালিত করাও প্রশাসনের কাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy