—প্রতীকী ছবি।
শিশু বিক্রির মতো জঘন্য অপরাধ ঘটে চলেছে রাজ্যের আইভিএফ সেন্টারগুলির একাংশে। কলকাতার নোনাডাঙা রেল কলোনি এলাকার এক সদ্যোজাতকে বিক্রির অভিযোগের তদন্ত করতে নেমে পুলিশ জেনেছে, বেশ কিছু সুপরিচিত নার্সিংহোম, আইভিএফ সেন্টার এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মীরা শিশু বিক্রির সঙ্গে জড়িত। ইতিপূর্বেই এমন ইঙ্গিত মিলেছিল যে, আইভিএফ চিকিৎসার কেন্দ্রগুলিকে ব্যবহার করে শিশুপাচার চক্র নানা রাজ্যে সক্রিয় হয়েছে। এ বছরই মার্চ মাসে শিলিগুড়িতে পুলিশ ফাঁদ পেতে ধরেছিল চার দুষ্কৃতীকে, যারা সাত লক্ষ টাকার বিনিময়ে সাত দিনের শিশুকন্যাকে বিক্রির চেষ্টা করছিল। ওই শিশুকে আনা হয়েছিল বিহারের একটি আইভিএফ সেন্টার থেকে। গত দু’-তিন বছরে বিভিন্ন জেলা-শহরে শিশু বিক্রির ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে নার্সিংহোমের আয়া এবং অন্যান্য কর্মী জড়িত। এই দালাল বা মধ্যস্থতাকারীদের ধরাই যথেষ্ট নয়, তাদের পিছনে কোনও বড় সংগঠক রয়েছে কি না, তা-ও জানা জরুরি। প্রশাসনিক নজরদারি এড়িয়ে কী করে এমন চক্র গড়ে উঠতে পারল? ভুলে যাওয়া চলে না, ২০১৭ সালে জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিঙের হোম থেকে শিশুপাচারের তদন্তে নেমে সিআইডি দু’টি জেলার শিশুসুরক্ষা আধিকারিক এবং দার্জিলিঙের শিশুকল্যাণ কমিটির সদস্য এক ডাক্তারকেও রেখেছিল চার্জশিটে। অন্তত সতেরোটি শিশুকে বেআইনি ভাবে দত্তক দেওয়াতে তাঁদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছিল সিআইডি। উত্তর ২৪ পরগনায় শিশুপাচার চক্রের সঙ্গে হোম কর্তৃপক্ষের ও জেলার ‘স্পেশালাইজ়ড অ্যাডপশন এজেন্সি’-র যোগসাজশ মিলেছিল। অতএব দালালদের ধরাই যথেষ্ট নয়, সংগঠিত অপরাধ চক্রটিকে প্রকাশ্যে আনা দরকার।
শিশু বিক্রির যে ঘটনাগুলি সংবাদে এসেছে, সেগুলিতে পাড়া-প্রতিবেশীই বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছে। তার পরে তদন্তে নামছে পুলিশ। প্রশ্ন হল, এই চক্রগুলি যে সক্রিয় রয়েছে, তা জেনেও রাজ্য পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আইভিএফ কেন্দ্র এবং নার্সিংহোমগুলিকে সতর্ক করেনি কেন? নজরদারি আরও কড়া হয়নি কেন? কেনই বা নারী ও শিশুকল্যাণ দফতর, বা শিশু-অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফ থেকে শিশু কেনা-বেচার ঝুঁকির বিষয়ে প্রচার করা হয়নি? অভিভাবকহীন শিশুকে গ্রহণ, এবং দত্তক দানের বৈধ ব্যবস্থা বিষয়ে মানুষকে, বিশেষত শিশুসন্তান গ্রহণে আগ্রহী দম্পতিদের যথেষ্ট অবহিত করা দরকার। শিশুকে ভরণপোষণের জন্য যে কারও হাতে তুলে দেওয়া, বা সে বিষয়ে মধ্যস্থতা করা যে বেআইনি, তা অনেক দরিদ্র মানুষ এখনও জানেন না। হাসপাতাল, নার্সিংহোমের এক শ্রেণির কর্মী তার সুবিধা নেন।
নতুন প্রযুক্তির সুবিধার বিপরীতে সব সময়েই থাকে নতুন ধরনের প্রতারণার ঝুঁকি। আইভিএফ, সারোগেসি প্রভৃতি প্রযুক্তির অপব্যবহার করে মানবশরীরকে সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র করে তোলা, এবং শিশুকে পণ্য করে ফেলার নিদর্শন ভারতে কম নেই। এ সব রুখতে আইন ও বিধি কঠোর করা হয়েছে। শিশু চুরি, শিশুপাচারের পুরনো চক্রগুলো যাতে এই কাজে লাগাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে নার্সিংহোম, আইভিএফ কেন্দ্রের পরিচালকদেরও। শিশুকে পণ্য করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy