আবহাওয়া-বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামী বছরগুলিতে গ্রীষ্ম কঠোরতর হতে চলেছে। ফাইল চিত্র।
নববর্ষ এসেছে। কিন্তু এই বছর ‘এসো হে বৈশাখ’ বলার মতো যথেষ্ট দাপট বঙ্গবাসীর গলায় ছিল কি? শেষ চৈত্র থেকেই প্রবল গরমে ধুঁকছে গোটা রাজ্য। চৈত্র পেরিয়ে বৈশাখ পড়লেও একটি যথাযথ কালবৈশাখীও জোটেনি তার কপালে। অতএব, অগ্নিস্নানে শিশু থেকে বৃদ্ধ— নাগরিক-প্রাণ ওষ্ঠাগত। তবে, এই পরিণতি বিস্ময়ের অবকাশ বোধ হয় তেমন রাখেনি। এমন অচেনা আবহাওয়া বিশ্ব উষ্ণায়নেরই অমোঘ পরিণতি। প্রতি বছর বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে তাবড় রাষ্ট্রনেতারা উপস্থিত হয়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে বেঁধে রাখার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন, লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেন, তার কার্যত নাকের ডগা দিয়েই গত এক দশকে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে— শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, সারা বিশ্বে, প্রায় প্রতিটি কোণে। যেমন, প্রায় নিয়ম করে প্রতি বছরই সুজলা-সুফলা বঙ্গদেশের গ্রীষ্ম আরও কঠোর, আরও অ-সহ্য হয়ে উঠছে। ক্যালেন্ডারের নিয়ম মেনে কালবৈশাখী আর আসে না, এলেও তা নেহাতই ক্ষণিকের অতিথি। সবচেয়ে বড় কথা, ক্রমশ বাংলার চিরপরিচিত আর্দ্র গরমের জায়গা করে নিয়েছে শুষ্ক মরু বাতাস। ফলে, ঘাম কম হচ্ছে, টান ধরছে ত্বকে, বার বার জল পান করেও মিটছে না তৃষ্ণা।
আবহাওয়া-বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামী বছরগুলিতে গ্রীষ্ম কঠোরতর হতে চলেছে। চ্যালেঞ্জ হল, এই পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে দৈনন্দিন যাপনকে মানিয়ে নেওয়া। রাষ্ট্রনেতারা যতই আগামী দিনে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে উষ্ণায়নে লাগাম পরানোর প্রতিশ্রুতি শোনান, ক্ষতি যা হওয়ার, হয়ে গিয়েছে। অপূরণীয় ক্ষতি। সেই ক্ষতিকে স্বীকার করে ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্মাণই আশু কর্তব্য হওয়া উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধুমাত্র কঠোরতর গ্রীষ্মেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সামুদ্রিক ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি, অ-সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের আগমন, সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি-সহ নানা ক্ষেত্রে সেই আঘাত ইতিমধ্যেই পরিলক্ষিত। খাদ্যসঙ্কট বৃদ্ধি পেয়েছে। বাদ যায়নি জনস্বাস্থ্যও। সুতরাং, ভারতের মতো জনবহুল দেশে এই সমস্ত দিক পর্যালোচনা করে তার মোকাবিলার জন্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকাঠামো নির্মাণ অবিলম্বে প্রয়োজন। রাজনীতি নয়, দায় ঠেলাঠেলিও নয়, জলবায়ুর মার দলীয় প্রতীক বিচার করে না। এই কথাটি আত্মস্থ করে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে একযোগে পরিকাঠামো নির্মাণে শামিল হতে হবে।
প্রশ্ন হল, সেই দূরদর্শিতা সরকারগুলির আছে কি? একটি উদাহরণ দেখা যাক। প্রতি বছর যেমন গরমের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলেই পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের উদ্যোগ শুরু হয়। অতিরিক্ত গরমে পড়ুয়াদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাটি যেমন বাস্তব, তেমনই সময়ে পাঠ্যক্রম শেষ না হওয়াও বাস্তব বইকি। কাজেই, ভারসাম্য রক্ষা প্রয়োজন ছিল। গরম বাড়বে, তা ধরে নিয়েই শিক্ষাবিদ এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে শিক্ষাবর্ষে পরিবর্তন আনা যায় কি না, অথবা গরমের ছুটি দীর্ঘায়িত করে অন্য ছুটিগুলিকে সংক্ষিপ্ত করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তার প্রয়োজন ছিল। তা কি হয়েছে? এক সপ্তাহের ছুটি প্রকৃত সমস্যার সমাধান করতে পারে না। যেখানে আবহাওয়ার পরিবর্তন দীর্ঘস্থায়ী, আপৎকালীন সিদ্ধান্ত দিয়ে তার মোকাবিলা অসম্ভব। পশ্চিমবঙ্গের দুর্ভাগ্য, সে রাজ্যের সরকার, অন্তত শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই পথেই হাঁটতে আগ্রহী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy