—প্রতীকী ছবি।
মধুর সম্পর্ক, ভবিষ্যতের স্বপ্ন, জীবনের উদ্যাপন— সব কিছুই নতজানু হয় টাকার সামনে। যৌতুক, যার দান এবং গ্রহণ উভয়েই এ-দেশে আইনত নিষিদ্ধ, তাকে কেন্দ্র করে এখনও বহু পরিবার সর্বস্বান্ত হয়, বহু মেয়ের প্রাণ অকালে ঝরে। ভারতের এখনও সাড়ম্বরে চালু থাকা পণপ্রথার মর্মান্তিক ছবিটি আরও এক বার প্রকট হল কেরলে। সে রাজ্যের চিকিৎসক শাহানার আত্মহত্যার ঘটনাটি ফের সেই অন্ধকারকে সামনে নিয়ে এল। পাত্রপক্ষের দেড়শোটি সোনার গিনি, একটি বিলাসবহুল গাড়ি, এবং ১৫ একরের জমির দাবি শাহানার পরিবার মেটাতে অক্ষম ছিল। সেই অজুহাতে তাঁর সহপাঠী-প্রেমিক শাহানার সঙ্গে সম্পর্কটি ভেঙে দেন। আঘাত সহ্য করতে পারেননি শাহানা।
পাত্র এবং পাত্রী উভয়েই উচ্চশিক্ষিত— চিকিৎসক, এবং সরকারি মেডিক্যাল কলেজের স্নাতকোত্তরের পড়ুয়া। শিক্ষা, মেধা, এবং বিচারবুদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের অন্যান্য স্তরের তুলনায় তাঁরা অগ্রগণ্য। তা সত্ত্বেও ছেলেটি প্রাচীন সামাজিক কুপ্রথার শিকল কেটে বেরোতে পারেননি। পণের দাবি শুধুমাত্র তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকেই ওঠেনি, তিনি স্বয়ং তা সমর্থন করেছেন। স্পষ্ট যে, যতই ১৯৬১ ও ১৯৮৫ সালে আইন করে যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ হোক, এই ভয়ঙ্কর প্রথা সমাজের এত গভীরে তার শিকড় বিস্তার করেছে যে, সেখানে শিক্ষার আলোও পৌঁছতে পারেনি। সেই কারণেই উচ্চশিক্ষিত, মেধাবী কন্যার বিয়েতে পণ দেওয়া নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হয় পরিবারকে, আজও। শিক্ষাজগতে, পেশাজগতে একটি মেয়ে যতই নিজেকে সসম্মানে প্রতিষ্ঠিত করুন, এখনও এ-দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁকে মাপা হয় নগদ টাকা, গাড়ি, মোটরবাইক, জমি কিংবা সোনার গয়নার বিনিময়েই। ভবিষ্যৎ জীবনের স্বার্থে মেয়েদের প্রতিষ্ঠিত হতেই হবে, আত্মসম্মান বোধও গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু পণপ্রথাকে রুখতে শুধুমাত্র এইটুকু যথেষ্ট নয়। কেরলের ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল।
সর্বোপরি, কেরলের ঘটনা দেখিয়ে দিল যে, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সূচকের নিরিখে কোন রাজ্য কোথায় দাঁড়িয়ে, পণপ্রথার ক্ষেত্রে তা-ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে পণজনিত কারণে বধূমৃত্যুর হার দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। তৃতীয় স্থানে মধ্যপ্রদেশ। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, শিক্ষার হার এবং রাজ্যগুলিতে সার্বিক ভাবে নারীর অবস্থার নিরিখে এই পরিসংখ্যান প্রত্যাশিত। কিন্তু কেরলের মতো শিক্ষিত এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নততর অবস্থানে থাকা রাজ্যও যখন বারংবার পণপ্রথার কারণে সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নেয়, তখন অনুমান করা যায় যে, এই রোগের বিস্তার আসলে সমাজের এক বৃহৎ অংশের, শিক্ষিত-অল্পশিক্ষিত নির্বিশেষে, পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায়, এবং সেই কারণেই হয়তো রাতারাতি তাকে উপড়ে ফেলা সহজ নয়। তাই শুধুমাত্র আইন করে, শাস্তির ভয় দেখিয়েই দায় মিটবে না। প্রয়োজন পণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে আরও সক্রিয় উদ্যোগ। এবং অবশ্যই মেয়েদের যোগদান। যে পরিবারে নববধূর তুলনায় পাওনাগন্ডার হিসাব অধিক মূল্যবান, সেই পরিবারে সম্মান, সুখ কোনওটাই যে মিলবে না— পণের টাকা নগদে মিটিয়ে দিলেও নয়— মেয়েদেরও এ-বার তা বুঝে নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy