— ফাইল চিত্র।
রাজায় রাজায় যুদ্ধে উলুখাগড়ার প্রাণ যাওয়ার কথা আছে প্রবাদে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অন্তত অত নগণ্য নন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যনির্বাহক হিসাবে তাঁর পদটি যারপরনাই গুরুত্বের ও সম্মানের। কিন্তু এ ঘোর অকাল, এবং স্থানটিও পশ্চিমবঙ্গ, তাই উপাচার্যের মেয়াদের ‘জীবন’ ও ‘মরণ’ও রাজানুগ্রহনির্ভর— দেখিয়ে দিল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা। সাত মাস আগে আচার্য তথা রাজ্যপাল নিজে উপাচার্যকে বহাল করেছিলেন, এ বার তাঁরই চিঠি এল: উপাচার্য দায়িত্ব থেকে অপসারিত। আবার এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের চিঠি এল আইনি নীতি-নিয়মের উল্লেখ করে: উপাচার্য বহাল। একই দিনে অপসারণ ও পুনর্বহাল, এ-হেন নাটকীয়তা অন্য যেখানেই মানাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পরিসরে, উপাচার্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে খেলার পুতুল করে এ জিনিস হলে তাকে ছেলেখেলা বলতে হয়। বাংলার দুর্ভাগ্য, এই ছেলেখেলা তাকে দেখতে হল।
আরও দুর্ভাগ্যের যা— উপাচার্যকে ঘিরে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের এই দড়ি টানাটানি আজকের নয়, চলছে বিগত এক দীর্ঘ সময় ধরে, রাজ্যের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘিরে। এক দিকে রাজ্যপাল নিজ ইচ্ছামতে, রাজ্য সরকারকে অগ্রাহ্য করে অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের বহাল করছেন, অন্য দিকে রাজ্য সরকার আবার আইন ও নীতি তুলে ধরে সেই নিয়োগের বিরুদ্ধাচরণ ও আচার্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছে। ব্যাপার গড়িয়েছে শীর্ষ আদালতেও, সুপ্রিম কোর্ট সমস্যার সমাধানে গত বছর শেষ দিকে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছিল, গোড়ায় আলোচনা ফলপ্রসূ বলা হলেও অচিরেই রাজ্য সরকার আদালতে জানায়, আচার্য তথা রাজ্যপাল তাঁর দেওয়া কথা রাখেননি, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তালিকা ‘বিবেচনা’ করা ও তা থেকেই নিয়োগের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। স্থায়ী উপাচার্য দূরস্থান, অন্তর্বর্তিকালীন উপাচার্য নিয়েও যে দুই তরফের যুদ্ধং দেহি মনোভাব এখনও বহাল তা তো মালদহের ঘটনাতেই প্রমাণিত।
রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান ‘বনাম’ রাজ্য সরকার ও তার প্রধান— এই দ্বৈরথ কদাচ বাঞ্ছিত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে তো তা কাম্য নয়ই, কারণ রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মতান্তর-মনান্তরের বলি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের হতে হলে সমূহ ক্ষতি বিশ্ববিদ্যালয়েরই— পড়াশোনা, অর্থ বরাদ্দ, নিয়োগ, সব ক্ষেত্রে, দৈনন্দিন ব্যবস্থাপনাতেও। এ কথা আর নতুন করে বলে দিতে হবে না যে সাংবিধানিক ভাবে রাজ্যপালের কাজ যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সম্পর্কের সেতু গড়া, সেখানে সাম্প্রতিক কালে এই পদাধিকারী হয়ে দাঁড়িয়েছেন কেন্দ্রের অনুবর্তী উপগ্রহ, রাজ্যের প্রতি বিরূপ। যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা ভারতের সম্পদ, কেন্দ্র ও রাজ্য রাজনৈতিক মতাদর্শে বিরোধী হলেও তার ছায়া প্রশাসনে পড়বে না— এ-ই তার মূল কথা। সেই ঐতিহ্য আজকের পশ্চিমবঙ্গে প্রতি পদে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, সাধারণ নির্বাচনের আবহে রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের পারস্পরিক সুর চড়ানো ভুল বার্তা দিচ্ছে নাগরিকদের। সর্বোপরি, রাজনৈতিক অহং-এর এই খেলায় অসহায় পুতুল হচ্ছেন উপাচার্যেরা, বৃহদর্থে রাজ্যের সার্বিক উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাই। এই কদর্য দড়ি টানাটানি অবিলম্বে বন্ধ হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy