Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Food Safety and Standards Authority of India

অমৃত ও বিষ

স্থূলতা-সহ হরেক অসংক্রামক রোগের প্রকোপ যখন তীব্র হচ্ছে ভারতে, তখন প্যাকেট-বন্দি খাবার নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে বইকি।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫২
Share: Save:

বাজারজাত খাবারের প্যাকেটে নাম, দাম কিংবা ছাড়ের কথা যে ভাবে লেখা থাকে, পুষ্টিগুণ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি সে ভাবে দ্রষ্টব্য হয় না। কোনও খাবারে বিভিন্ন উপাদান কী পরিমাণে উপস্থিত আছে, তা জানানো আইনি দায়বদ্ধতা— ফলে, প্রায় সব বাণিজ্যিক সংস্থাই অতি ক্ষুদ্র হরফের ফাঁক গলে বেরোতে চায়। লাঠিও ভাঙে, সাপটিও মরে না। এর ফলে প্রভাবিত হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। তাই খাবারে পুষ্টিগুণ সম্পর্কে গ্রাহকদের আরও বেশি সচেতন করতে প্যাকেটের উপরে খাবারে শর্করা, নুন ও সম্পৃক্ত চর্বি-র মাত্রা কত— তা আরও বড় হরফে উল্লেখ করার প্রস্তাবে সায় দিল ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা ও মান বিষয়ক কর্তৃপক্ষ (এফএসএসএআই)। প্রথমে গণ-আলোচনার জন্য সিদ্ধান্তটিকে প্রস্তাব আকারে প্রকাশ করা হবে। তার পর এটিকে নির্দেশ হিসাবে কার্যকর করা হবে।

স্থূলতা-সহ হরেক অসংক্রামক রোগের প্রকোপ যখন তীব্র হচ্ছে ভারতে, তখন প্যাকেট-বন্দি খাবার নিয়ে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন আছে বইকি। সাম্প্রতিক গার্হস্থ ভোগ্যপণ্য সমীক্ষা ২০২২-২৩’এ দেখা যাচ্ছে, প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যের পিছনে খরচ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বেড়েছে— অর্থাৎ, ‘ফাস্ট ফুড’-এর প্রতি আকর্ষণের বৈশ্বিক প্রবণতা ভারতেও স্পষ্ট। পণ্যগুলি সহজলভ্য, অভিভাবকরাও সচেতন নন— ফলে, মুখরোচক খাবারের স্বাদে আসক্ত হয়ে পড়ায় সেগুলি নিয়মিত খাচ্ছে বহু শিশু, যা উদ্বেগজনক ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিপদকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন’স ইমার্জেন্সি ফান্ড-এর ‘ওয়ার্ল্ড ওবেসিটি অ্যাটলাস’ (২০২২) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতে স্থূলকায় শিশুর সংখ্যা দু’কোটি সত্তর লক্ষ ছাড়াতে পারে। উন্নত দেশগুলিতে চটজলদি খাবারের কুফল বিষয়ে এত দিনে সচেতনতা তৈরি হয়েছে, প্রতিকারের নানা প্রচেষ্টাও হয়েছে। যেমন, অতিরিক্ত ওজন, হৃদ্‌রোগ এবং ডায়াবিটিস থেকে বাঁচতে স্কুলগুলিতে সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া, তা নিয়ে নিয়মিত প্রচার ইত্যাদি। কিন্তু এ দেশে এ সব কাজ এখনও প্রায় কিছুই হয়নি। এই অবস্থায় এফএসএসএআই-এর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত প্যাকেটজাত পণ্যে ক্ষতিকর প্রভাবের ক্ষেত্রে যেমন এক স্বীকারোক্তি, তেমনই জনস্বাস্থ্যের উন্নতির প্রচেষ্টায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও বটে।

কোনও উদার গণতন্ত্রে রাষ্ট্র মানুষের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না— কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠের অপছন্দের গোমাংস ভক্ষণ করলেও না, কেউ স্বাস্থ্যের পক্ষে অতি ক্ষতিকর ফাস্ট ফুড খেলেও না। তবে, যে খাবারটি মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ— এবং, যা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতিরই কারণ হয় না, জনস্বাস্থ্যের উপরেও যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে— সেই খাবার থেকে মানুষকে দূরে সরানোর জন্য ‘নাজ’ বা একটু ঠেলা দেওয়া যেতেই পারে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ রিচার্ড থেলারের এই তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রয়োগ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে হয়েছে এবং হচ্ছে। সতর্কতামূলক প্রচার বা প্যাকেটের গায়ে সতর্কীকরণ যে মানুষের মনে প্রভাব ফেলতে পারে, সিগারেটের জনপ্রিয়তার ঘাটতিই তার দৃষ্টান্ত। অন্য দিকে, স্বাস্থ্যকর খাবার মানুষের কাছে সহজলভ্য করাও একটি কার্যকর ‘নাজ’। ফাস্ট ফুডের ক্ষেত্রেও ক্ষতির মাত্রা কতখানি, তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি। অমৃতের স্বাদ আশা করে কেউ যাতে বিষ পান না করেন, তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy