Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Fertilizer

সারের জোগান

কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, আরও বেশি সারের আর্জি করা হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এতে আশ্বস্ত হওয়া চলে কি?

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৫:১৬
Share: Save:

আলু লাগানোর মুখে সারের জোগানে ঘাটতি, এই সঙ্কট চাষের মরসুমের মতোই ফিরে ফিরে আসে। বাংলায় আলু চাষের জমি তৈরির জন্য চাষির পছন্দ নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ (এনপিকে) সারের সংমিশ্রণে তৈরি (১০:২৬:২৬) সুষম সার। প্রতি বছরই নভেম্বরের গোড়ায় এই সারের জোগান কম আসে, বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে চাষিকে কিনতে হয়। সংবাদে প্রকাশ, পূর্ব বর্ধমানে প্রতি বস্তা সারের দাম নির্দিষ্ট মূল্যের থেকে তিনশো থেকে চারশো টাকা বেশিতে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। যথাযথ রসিদও তাঁরা পাচ্ছেন না। বিপণনের কৌশলে ১০:২৬:২৬ সারের সঙ্গে অন্য কোনও সার বা কৃষিসামগ্রী নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এমন নানা অনিয়ম নিয়ে কিছু দিন হইচই হয় প্রতি বছরই। তার পর আলু চাষের কাজ শুরু হয়ে গেলে বিষয়টি থিতিয়ে যায়, যত দিন না ফের চাষের সময় হয়। অথচ, বিষয়টির গুরুত্ব যথেষ্ট। চাষের উপকরণের বাজারের উপরে সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাবে চাষির বিপন্নতা বাড়ে, ফসলের দামও বাড়ে। এটা উৎপাদক ও উপভোক্তা, দু’জনের জন্যই ক্ষতিকর। সেই সঙ্গে রয়েছে করের টাকার অপব্যবহারের প্রশ্ন। ১০:২৬:২৬-সহ এনপিকে সারগুলির জন্য কেন্দ্র বিপুল ভর্তুকি দেয়। ২০২১-২২ সালে ওই শ্রেণির সারে ভর্তুকি ছাড়িয়েছিল পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। প্রতি বছর জোগানে টান পড়ার কারণ কেবলই রাজনীতি, না কি বাজারে সারের ঘাটতি, তা ভাবা দরকার। সেই সার নিয়ে কালোবাজারি হলে তাতে ভর্তুকির উদ্দেশ্যই বৃথা হয়ে যায়। সর্বোপরি, এতে প্রমাণিত হয় যে, চাষের বাজারের উপরে কেন্দ্র বা রাজ্য, কোনও সরকারেরই নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজারের রাশ বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী চাষির আয় দ্বিগুণ করার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তা বাস্তবায়িত না হওয়ার অন্যতম কারণ এই নিয়ন্ত্রণহীনতা।

প্রশ্ন হল, কেন বার বার সারের ঘাটতি হচ্ছে? যে কোনও সঙ্কটের মতো, এ ক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার বিষয়টিকে কেন্দ্রের অপদার্থতা বলে দেখাতে উৎসুক। কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে, আরও বেশি সারের আর্জি করা হয়েছে কেন্দ্রের কাছে। এতে আশ্বস্ত হওয়া চলে কি? বীজ বপনের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে, সুলভ সার এলেও লাভ নেই। একই ভাবে আলুর মরসুমের শুরুতে আলুবীজ নিয়ে চূড়ান্ত অনিয়ম দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গ আলু উৎপাদনে দ্বিতীয়, কিন্তু তার অধিকাংশ আলু বীজ আসে পঞ্জাব থেকে। এক-এক বছর বীজের খরচ দাঁড়ায় মোট উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক।

সারে ঘাটতির সমাধানও শোনা যায় প্রতি বছর— ১০:২৬:২৬ ছাড়া অন্য যে সব অনুপাতে এনপিকে পাওয়া যায় বাজারে, সেগুলির ব্যবহারে উৎসাহ দান অথবা তার বিভিন্ন উপকরণ কিনে নিজেই মিশিয়ে ব্যবহার করতে চাষিকে প্রশিক্ষণ দান। তবে তার জন্য যে প্রচার চালানো প্রয়োজন, তা হচ্ছে কোথায়? যে পণ্যটি কোনও কারণে চাষির আস্থা পেয়েছে, তার প্রতি চাষির ঝোঁক থাকাই স্বাভাবিক। বিকল্পকে গ্রহণযোগ্য করতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হবে, না হলে চাষি বেশি দামেও পরিচিত জিনিসটি কিনবেন। এর জন্য চাষি ‘অবুঝ’ বলে দোষারোপ করে লাভ নেই। বরং কী করে চাষিকে বোঝানো যায়, তার কৌশল রপ্ত করতে হবে সরকারি আধিকারিকদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Fertilizer Farming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy