Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Uttarakhand

দেবভূমি?

উত্তরকাশীর পুরোলা উত্তেজিত হয়ে উঠল হিন্দু ঘরের নাবালিকাকে মুসলমান তরুণের অপহরণের অভিযোগে, তির সেই ‘লাভ জেহাদ’-এর দিকে।

Pushkar Singh Dhami.

পুষ্কর সিংহ ধামী। ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ ০৫:৪৮
Share: Save:

একদা ‘দেবভূমি’ বলা হত উত্তরাখণ্ডকে, সরকারি পর্যটন বিভাগের প্রচারে এখনও বলা হয়, কিন্তু সেই রাজ্যেই সরকারের নাকের ডগায় সাধারণ মানুষ তথা ‘নাগরিক’দের যা হাল হচ্ছে, দেবতারাও হয়তো নড়েচড়ে বসবেন। উত্তরকাশীর পুরোলা উত্তেজিত হয়ে উঠল হিন্দু ঘরের নাবালিকাকে মুসলমান তরুণের অপহরণের অভিযোগে, তির সেই ‘লাভ জেহাদ’-এর দিকে। বিজেপি জমানায়, বিজেপি-শাসিত যে কোনও রাজ্যে এ-হেন পরিস্থিতিতে যা হওয়ার তা-ই হল: শহর ছাপিয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ, তাঁদের বাজারঘাট দোকানপাটে ঝাঁপ ফেলার হিড়িক, রাস্তায় হিন্দুত্ববাদীদের উগ্র হিংস্র প্রতিবাদ মিছিল— ‘সৌজন্যে’ স্থানীয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল। এখানেই শেষ নয়, সংগঠন দু’টি ডাক দিয়েছিল ‘মহাপঞ্চায়েত’-এরও, ২০২১-এর ডিসেম্বরে হরিদ্বারের ধর্ম সংসদের মতোই আর এক বিদ্বেষের প্ররোচনাভূমি, হত্যার ঘোষণামঞ্চ হয়ে ওঠার আশঙ্কা ছিল যেখানে।

উত্তরাখণ্ড হাই কোর্টের কড়া নির্দেশে, ১৪৪ ধারা জারি করে এবং পুষ্কর সিংহ ধামী সরকারের পুলিশ দিয়ে শেষবেলায় মহাপঞ্চায়েত আটকানো গিয়েছে, নয়তো পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াত ভাবতেও আতঙ্ক হয়। কিন্তু এ যে সাময়িক ঠেকিয়ে রাখা, স্থায়ী সমাধান নয়, সেটিও পরিষ্কার; আজ ‘লাভ জেহাদ’-এর ছলে যা শুরু হয়েছে, অচিরেই তা ধরে নেবে অন্য বিষয়, অন্য কৌশল। বলতে গেলে তা শুরু হয়ে গিয়েছে এর মধ্যেই— মহাপঞ্চায়েত-এর ঘোষণায় উঠে এসেছে ‘ল্যান্ড জেহাদ’-এর কথাও, স্থানীয় এলাকায় সংখ্যালঘুদের জমিজমা কেনা তথা বসবাসের উপরে ফতোয়া। জমি, বাড়ি, দোকান, ব্যবসা— জীবন ও জীবিকার প্রধান ক্ষেত্রগুলি থেকে সংখ্যালঘুদের উত্তরাখণ্ড-ছাড়া করার এই হিন্দুত্ববাদী অভিসন্ধি আজ প্রকট স্থানীয় সমাজজীবনেও। পুরোলার বাসিন্দাদের সঙ্গে একজোট হয়েছে ‘ব্যাপার মণ্ডল’ তথা ব্যবসায়ী সংগঠনও, সংখ্যালঘু ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ করে অন্যত্র চলে যেতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে; ‘বহিরাগত’ প্রতিটি মানুষের কাগজপত্র ও পরিচয় পরীক্ষা করার শুধু যে দাবিই উঠেছে তা নয়, জেলা প্রশাসনের অধীনে পুলিশ ও রাজস্ব আধিকারিকদের নিয়ে গড়া দল এরই মধ্যে লেগে পড়েছে কাজে।

প্রকৃতি যেখানে অকাতর ভাবে সুন্দর, যুগ যুগ ধরে যা প্রকৃত ধর্মান্বেষীর সাধনভূমি, সেই উত্তরাখণ্ডের ভবিতব্য কি তবে এই বিদ্বেষ আর হিংসা? এখানেই এসে পড়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকা। নাগরিক ধর্ম-বর্ণ-জাতি-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে নাগরিক, তাঁর জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ সরকারের; সেই লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলাকে নিশ্ছিদ্র করার কাজটিও। দুর্ভাগ্য, পুষ্কর সিংহ ধামীর সরকার ঘোষিত ভাবে রয়েছে হিন্দুত্ববাদীদের পাশেই— ভারতের যে ক’টি রাজ্যে ধর্মান্তরণ আইন হয়েছে উত্তরাখণ্ড তার অন্যতম, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজ মুখে বলেন ‘লাভ জেহাদ’ ও ‘ল্যান্ড জেহাদ’ বরদাস্ত না করার কথা, গত বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে জোর গলায় বলেছিলেন, ভোটে জিতলে রাজ্যে চালু হবে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারের ছত্রছায়ায় হিন্দুত্ববাদীদের রবরবা যে বাড়বেই, তা নিয়ে আর সন্দেহ কী। শুধু সেই সব মানুষের কথা ভেবে দুঃখ হয়, যাঁরা এই দেবভূমিকে ‘স্বভূমি’ মনে করেছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarakhand Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE