— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এই রাজ্যের সঙ্গে সরকারি নানা বিভাগের দুর্নীতির যোগসূত্রটি বর্তমানে এতই ঘনিষ্ঠ, নতুন বছরও যে এ বিষয়টি দিয়েই শুরু হবে, তা এক রকম জানাই ছিল। বিশেষত শিক্ষা বিভাগে দুর্নীতির তল-কূলের খোঁজ এখনও অবধি মেলেনি। উপরন্তু স্পষ্ট, শুধুমাত্র নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়েই নয়, নানা প্রাতিষ্ঠানিক এবং পরিচালন সংক্রান্ত সংগঠিত দুর্নীতিও শিক্ষা ক্ষেত্রে বহু দূর বিস্তৃত। পুরসভা পরিচালিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শৌচাগার সংস্কারে দুর্নীতি এর অন্যতম। দুর্নীতির পরিমাপটিও নেহাত সামান্য নয়, অঙ্কের হিসাবে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা। খোদ পুরসভার শিক্ষা বিভাগই জানিয়েছে, ২০১৭-২০ সালের মধ্যে কলকাতায় ৫০টি পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৩টি শৌচাগার সংস্কারের কাজে প্রতিটির জন্য খরচ দেখানো হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা করে। সেই টাকার বেশির ভাগই নির্দিষ্ট কাজে লাগেনি। অ-নিয়মের অভিযোগ আরও। যেখানে শৌচাগার সংস্কারের আগেই সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলিতে সর্বশিক্ষা মিশনের নোটিস টাঙানোর কথা, সেখানে নোটিস ছাড়াই কাজ শুরু হয়েছে। এ-ও জানা গিয়েছে যে, সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার পরে ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পরিদর্শন ছাড়াই শুধুমাত্র শিক্ষকদের দিয়ে ‘জোর করে’ সই করিয়ে নেওয়া হয়েছিল। যে সব বিদ্যালয়ের নিজস্ব প্যাড নেই, সেখানে ভুয়ো প্যাড তৈরি করে শৌচাগার তৈরির কমপ্লিশন সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে।
পুরো বিষয়টিই অস্বচ্ছতা এবং অ-নিয়মের আধারস্বরূপ। যে কোনও শিশু নিজ বাড়ির গণ্ডির বাইরে বিদ্যালয়েই সর্বাধিক সময় অতিবাহিত করে। সুতরাং, সেই ‘দ্বিতীয় গৃহ’-এর সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, পরিকাঠামোর সংস্কার ঠিক ভাবে হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এবং কর্তৃপক্ষের উপর নজরের দায় সরকারের। অথচ, এই রাজ্যে বিশেষত সরকারি এবং সরকার-পোষিত স্কুলগুলির ক্ষেত্রে সেই কাজটি সর্বাধিক অবহেলিত। বহু ক্ষেত্রে স্কুলবাড়িটিই ভগ্নাবস্থায় কোনও ক্রমে টিকে থাকে, উপযুক্ত শৌচালয় তো দূর স্থান। ঝড়বৃষ্টিতে শৌচালয়ের ছাদ ভেঙে পড়লে সেগুলি মেরামতের কাজটিও সম্পন্ন হয় না। শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলের এক বেলা ভরপেট গরম খাবারের গুরুত্ব যতটা, পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের গুরুত্ব তার চেয়ে কিছুমাত্র কম নয়। অথচ, গোড়া থেকেই এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে তাদের আপস করে চলার মন্ত্র নীরবে শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় সংবিধানে বর্ণিত সকল শিশুর শিক্ষায় অধিকারের কথা প্রশাসনকে বারে বারেই মনে করাতে হয়। সেই শিক্ষার অর্থ কি শুধুই বই খুলে পাঠ? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের উন্নতিসাধন কি তার অন্তর্ভুক্ত নয়? অথচ, ঠিক এইখানটিতে এই রাজ্যে, বৃহত্তর ক্ষেত্রে দেশেও, সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির মধ্যে এক লক্ষণীয় বিভাজন বর্তমান। পুরসভা পরিচালিত অবৈতনিক বিদ্যালয়গুলি শহরের বস্তিবাসী শিশুদের প্রধান ভরসাস্থল। সেই জন্যই কি সংস্কারের টাকায় যথেচ্ছ কারচুপি করা চলে? কর্নাটকে সরকার-পরিচালিত তিনটি বিদ্যালয়ে অনগ্রসর শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে বাধ্য করা হয়েছে বলে খবর। আর কলকাতায় পুরসভার স্কুলে তছনছ করা হয়েছে শৌচাগার সংস্কারের টাকা। পরিচ্ছন্ন বিভাজনহীন ভারতের স্বপ্ন-দেখা গান্ধীজির দেশে এই সব ছবি আশাব্যঞ্জক নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy