Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Congress

কংগ্রেসের অন্দরকথা

কেবল মধ্যপ্রদেশে নয়, সমগ্র ভারতেই আকার ও প্রকার, দুই দিক দিয়ে গণতন্ত্রের সাধনাটি কংগ্রেসে নতুন করে বলবৎ হওয়া চাই। দলের স্বার্থে। সর্বোপরি, দেশের স্বার্থে।

Picture of Rahul Gandhi.

রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ০৪:৫৮
Share: Save:

ভারতীয় গণতন্ত্র নিয়ে অনেক গৌরবগাথা প্রচলিত দেশের ভিতরে এবং বাইরে। কিন্তু অবাক কাণ্ড, যে বিষয়টির উপর গণতন্ত্রের নির্ভর, সেই রাজনৈতিক দল-বিষয়ক আলোচনা কিংবা ভাবনাচিন্তা এ দেশে বেশ উদ্বেগজনক ভাবে অনুপস্থিত। অথচ, রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে কেবল কাজকর্মই তো নয়, তার আকারপ্রকারও কিন্তু একটি অতি জরুরি আলোচ্য বিষয় হওয়ার কথা। অর্থাৎ, অন্য ভাবে বলতে গেলে, দলীয় গঠনতন্ত্রের চালচলন সরাসরি গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি নয়া রায়পুরে কংগ্রেসের যে প্লেনারি অধিবেশন হয়ে গেল, তার কার্যপ্রণালী দেখে এই বৃহত্তর ভাবনাটি এসে উপস্থিত হয়। সেখানে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক আবহ নিয়ে বহু আলোচনার মধ্যে দেখা গেল, অধিকাংশ নেতাই বেশ গর্বিত, গান্ধী পরিবারের অনুপস্থিতিতেই সমস্ত কাজ সাধিত হওয়ায়। তাঁদের মতে, এ হল অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের লক্ষণ— যদিও প্রকৃত সত্য হল, কারও অনুপস্থিতি মানেই হস্তক্ষেপের অভাব না-ও হতে পারে। দূর থেকে সিদ্ধান্ত প্রভাবিত করার হরেক উপায় থাকতে পারে। এখানে অন্য কতকগুলি জরুরি প্রশ্ন আছে। রায়পুরের বৈঠকে জানা গেল, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের জন্য সেখানে কোনও নির্বাচন হবে না। নতুন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে নতুন ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের বেছে নেবেন। এই সিদ্ধান্তের কারণ, মতান্তর কমিয়ে একটি সংহত চেহারায় দলকে নিয়ে আসা। এখন দলের মধ্যে ঐক্যস্থাপন প্রথম জরুরি কাজ, তাঁদের মতে। কিন্তু প্রশ্ন হল, মতান্তর কমাতে গিয়ে কোনও নেতা— তিনি যত উচ্চ পদেই আসীন হোন— একা হাতে কমিটির সব সদস্যকে একা বেছে নেবেন। এটা কি কোনও ‘গণতান্ত্রিক’ পদ্ধতি হতে পারে?

প্রশ্নটি ছোট হলেও জরুরি। কংগ্রেস যদি বিজেপির প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করতে চায়, তা হলে কেবল নিজেকে বাইরে থেকে সংহত দেখানোটাই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়, ভিতর থেকেও তাকে এক প্রকার সংহতির প্রয়াসী হতে হবে। অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ কমাতে হবে। সেই ক্ষোভ কিন্তু এমন একক সিদ্ধান্ত-ভিত্তিক পদ্ধতিতে নির্মূল বা হ্রাস করা দুরূহ। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাস ঘাঁটলেই বোঝা যাবে, ঠিক এই দোষেই কংগ্রেস প্রথমাবধি দুষ্ট। অনেক মতগোষ্ঠীকে জায়গা দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন কংগ্রেস এগিয়ে থেকেছে, তেমনই সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে কংগ্রেস গান্ধী-আমল থেকেই ‘অগণতান্ত্রিকতা’র অভিযোগে স্নাত হয়েছে।

অনেক মতগোষ্ঠী ও জনগোষ্ঠীকে জায়গা দেওয়ার কাজটিও আবার শুরু হয়েছে নতুন করে। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অর্ধেক পদ দলিত, ওবিসি, আদিবাসী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, মহিলা ও তরুণ সমাজের জন্য সংরক্ষিত রাখার ঘোষণা শোনা গেল রায়পুরে। অবশ্যই বিজেপির সঙ্গে মোকাবিলায় শক্তি সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী মোদীর মুসলমানদের কাছে পৌঁছনোর সাম্প্রতিক চেষ্টা কংগ্রেসকে কিছুটা চিন্তায় ফেলেছে। গণতান্ত্রিক আবহে এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক প্রয়াস স্বাভাবিক। কিন্তু কেবল আসন সংরক্ষণের মাধ্যমেই বিষয়টির সমাধান হয়ে যাবে, এমন ভাবনার মধ্যে বিপদ আছে। এবং এই বিপদও জাতীয় কংগ্রেসের ইতিহাসে বারংবার ঘটতে দেখা গিয়েছে। প্রয়োজন, নীতি প্রণয়ন এবং সামাজিক সংযোগের ক্ষেত্রে এই সমস্ত গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করা। কংগ্রেস নেতারা মানুন না মানুন, তাঁদের দল সেই কাজে বিশেষ রকম পিছিয়ে আছে। একটি ভারত জোড়ো যাত্রা সঙ্কটের নিরাময় করতে পারবে বলে মনে হয় না। সুতরাং, কেবল মধ্যপ্রদেশে নয়, সমগ্র ভারতেই আকার ও প্রকার, দুই দিক দিয়ে গণতন্ত্রের সাধনাটি কংগ্রেসে নতুন করে বলবৎ হওয়া চাই। দলের স্বার্থে। সর্বোপরি, দেশের স্বার্থে।

অন্য বিষয়গুলি:

Congress Democracy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy