প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
দেশ চালানো যাঁদের কাজ, সমাজমাধ্যমে তাঁদের আচরণ দেশের ভিতরে কী প্রভাব ফেলে তা সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে ভারতে, বিশ্বের নানা দেশেও। কিন্তু সমাজমাধ্যমের আচরণ ছায়া ফেলেছে কূটনীতিতে, এ খুব চেনা দৃশ্য নয়। সেই কাণ্ডটিই সম্প্রতি ঘটল মলদ্বীপ ও ভারতের মধ্যে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লক্ষদ্বীপ সফরে গিয়ে ‘এক্স’ হ্যান্ডলে দ্বীপভূমির অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও দ্বীপবাসীর আন্তরিকতার কথা তুলে ধরেছিলেন কতকগুলি ছবিতে। গন্তব্য-তালিকায় লক্ষদ্বীপকে রাখার কথা বলেছিলেন। সেই মন্তব্যেই অদৃশ্য জুজু দেখে মলদ্বীপের কিছু নেতা-মন্ত্রী ভেবে নিলেন, বুঝি দ্বীপদেশ মলদ্বীপকে ছোট করা হচ্ছে লক্ষদ্বীপকে তুলে ধরে। মলদ্বীপের এক মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিদ্রুপ করে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিলেন, অন্য কিছু নেতা-মন্ত্রী ও অগণিত সমাজমাধ্যম-ব্যবহারকারীও সক্রিয় হয়ে উঠলেন। মলদ্বীপে ক্ষমতাসীন পিপিএম-পিএনসি জোট ‘ভিজ়িট মলদ্বীপ’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রচারেও নামল। প্রত্যুত্তরে ‘বয়কট মলদ্বীপ’ হ্যাশট্যাগের ব্যবহারে ভারতীয় সমাজমাধ্যম-ব্যবহারকারীরা মনে করিয়ে দিয়েছেন মলদ্বীপে আসা পর্যটকদের বিপুলাংশই ভারতীয়, বলেছেন এ বার থেকে মলদ্বীপে কোনও ভারতীয় যাবে না। বিমানের উড়ান বন্ধ করা হচ্ছে। মলদ্বীপ যে ভারতের আর্থিক ও অন্য নানা সাহায্যের উপর নির্ভরশীল, মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিনা প্ররোচনায় ঝগড়া বাধালে কলহকারীই প্রাথমিক বিপাকে পড়ে যায়। পররাষ্ট্রবিরোধিতার আবেগ গোড়ায় কাটে ভাল, কিন্তু কূটনীতি ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বাস্তব সামনে এসে দাঁড়াতে মলদ্বীপও ঢোঁক গিলেছে। সরকার নেতা-মন্ত্রীদের মন্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত’ বলে তাঁদের থেকে দূরত্ব তৈরি করেছে, এমনকি সেই মন্ত্রীদের সাসপেন্ডও করা হয়েছে। দিল্লিতে মলদ্বীপের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কড়া কথা শুনিয়েছে সাউথ ব্লক, মলদ্বীপের বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকেও ভারতের অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন ভারতীয় হাই কমিশনার। গত বছর নভেম্বরে সরকার বদলেছে মলদ্বীপে, নতুন প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর পূর্বসূরির মতো ‘ভারতই প্রথম’ নীতি নিয়ে চলবেন না, তাঁর সাম্প্রতিক চিন সফরও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্যের প্রশ্নে চিন ও ভারতের যে দ্বন্দ্ব, তাতে মলদ্বীপ কোন পক্ষ নেবে সেটিই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া বাধানো বুদ্ধির কাজ নয়— মলদ্বীপের পক্ষেও নয়, ভারতের পক্ষেও নয়। অর্বুদ-কোটি মোদীভক্ত চটে উঠে সমাজমাধ্যমে বিষোদ্গার করতে চাইলে করুন, কিন্তু সরকারি নীতিতে তার ছাপ না পড়াই ভাল। বিশেষ করে সামনে যখন আছে প্রতিস্পর্ধী পরাক্রান্ত প্রতিবেশীর উত্তুরে ছায়া, এবং সেই প্রতিবেশীর লেজুড় হওয়ার জন্য একাধিক ছোট প্রতিবেশীর আঁকুপাঁকু হাবভাব। ইতিমধ্যেই বেজিং ভারতকে ‘মুক্তমনা’ হওয়ার উপদেশ দিয়ে এক রকম আত্মশ্লাঘা দেখিয়েছে। অতঃপর আন্তর্জাতিক কূটনীতির অঙ্গনে নিজেকে ছেলেমানুষ হিসাবে দেখানোর ঝুঁকি বিষয়ে মোদীর ভারত আরও সতর্ক হবে, এটাই কাম্য। কোন দেশের কোন মন্ত্রী সমাজমাধ্যমে কী বলছেন, তার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি বৈদেশিক নীতির অভিমুখটির গুরুত্বের যে কোনও তুলনাই হয় না, আশা করা যায় দিল্লি এই গোড়ার কথাটা ভুলে যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy