Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
india

আশাকুহক

দ্রুত যাহা বোঝা সম্ভব, তাহা হইল— সীমান্ত এলাকায় উষ্ণতার হ্রাস অত্যন্ত জরুরি ছিল, এবং আপাতত তাহার কিছু ইশারা দেখা দিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৩৭
Share: Save:

ভারত ও চিন দ্বৈরথে একটি মীমাংসার পথ খুলিতেছে, দুই দেশই আপাতত সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত লইয়াছে: এই মর্মে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সংসদে গৌরব প্রকাশ করিয়াছেন। ইতিমধ্যে চিনও সরকারি বিবৃতি দিয়াছে যে, পূর্ব লাদাখ সীমান্তে সেনা প্রত্যাহারের কাজ সুষ্ঠু ভাবে, অঘটনবিহীন ভাবে, ঘটিতেছে। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত ফিঙ্গার তিনের বেশি দূর আগাইবে না। এবং চিন ফিঙ্গার এইট পর্যন্ত তাহার গণ্ডি বলিয়া মানিবে। মাঝখানের অঞ্চলটি হইবে বাফার জ়োন। বিষয়টি ভারতের পক্ষে জয় না পরাজয়, না কি দুই পক্ষেরই কিছু ছাড়িয়া দিয়া সমঝোতার প্রয়াস, এই সব কূট প্রশ্নের মীমাংসা দ্রুত হইবে না। দ্রুত যাহা বোঝা সম্ভব, তাহা হইল— সীমান্ত এলাকায় উষ্ণতার হ্রাস অত্যন্ত জরুরি ছিল, এবং আপাতত তাহার কিছু ইশারা দেখা দিয়াছে। আপাতত শব্দটি জরুরি। কেননা, এই রকম দ্বিপাক্ষিক বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে চিনের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সদর্থক মানসিকতা লইয়া বিস্তর সংশয় আছে, এবং সেই সংশয় কেবল ভারতের বিপক্ষে নহে, অন্যান্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও চিন সম্পর্কে বিলক্ষণ ছড়াইয়া পড়িয়াছে। চিন বলে এক, এবং করে আর এক— পশ্চিম ও পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশই তাহার এই চারিত্রিক বিশিষ্টতা বিষয়ে বিলক্ষণ অবহিত।
সুতরাং, চিন্তার বিষয় দুইটি। প্রথম কথা, অতীতে এত বার চিন এই ভাবে স্বীকৃত চুক্তি ভাঙিয়া ভারতীয় ভূখণ্ডে নিজের মতো করিয়া সেনা প্রবেশ করাইয়াছে যে, আশাবাদিতার মাত্রা না চড়ানোই ভাল। বিশেষত, ডোকলাম ও গালওয়ান সংঘর্ষের পর দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাস একেবারে নিম্নতম বিন্দুতে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। প্রত্যাবর্তনের প্রতিশ্রুতি তাই সাফল্যের সোপানস্তম্ভের প্রথম ধাপটি মাত্র। সাফল্য আসিতে পারে কেবল পরবর্তী ধাপগুলির পর— যে ধাপগুলি হইল প্রতিশ্রুতি পূরণের মানসিকতা, তাহার প্রচেষ্টা এবং সেই প্রচেষ্টা ধরিয়া রাখিবার সঙ্কল্প। উদ্বেগের দ্বিতীয় কারণটি এই অনিশ্চয়তার সহিত ঘনিষ্ঠ ভাবে সংযুক্ত। যে বাফার জ়োন-এর চুক্তি হইয়াছে, এক অর্থে তাহা ভারতের পশ্চাদপসরণ, এবং চিনা আগ্রাসনেরই নমুনা। কেন ভারত তাহার নিজেদের অঞ্চলের উপর টহলদারির অধিকার হারাইতে স্বীকৃত হইল, বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলিয়াছেন। স্বাভাবিক ভাবেই, ইহার মধ্যে চিনা নমনীয়তার ইঙ্গিত নাই, বরং আগ্রাসী মানসিকতারই ছাপ রহিয়াছে।
লক্ষণীয়, ফিঙ্গার এইট অবধি চিনের অধিকার সাব্যস্ত হইলেও, ইতিমধ্যেই ফিঙ্গার ফোরে চিনা উদ্যোগে রাস্তা নির্মিত হইয়াছে, নানাবিধ নজরদারির ব্যবস্থাও পাকা হইয়াছে। এখন যদিও নূতন চুক্তিমতে তাহা ব্যবহারের সুযোগ রহিল না, কিন্তু নির্মাণের ইতিহাসটি রহিল, রহিল সেই বন্দোবস্তে পুনরায় পৌঁছাইবার সম্ভাবনাও। বাস্তবিক, গত বৎসরের ঘটনাবলিকে যদি চিনা বিদেশনীতির বিক্ষিপ্ত আক্রমণাত্মক মুহূর্ত বলিয়া ধরিয়া লওয়া যায়, তাহা হইলে আলাদা কথা। নতুবা, চিনের নব-উদ্যমে আগ্রাসনের সম্ভাবনা দিল্লিকে ভবিষ্যতে প্রতি মুহূর্তই তটস্থ রাখিবে। ফিঙ্গার ফোর হইতে এইট, এই বাফার জ়োনের মধ্যে অনেকখানি নিজের জায়গা ছাড়িয়া দিয়াও শেষ পর্যন্ত আগ্রাসী প্রতিবেশীকে সন্তুষ্ট করা যাইবে কি না, ইহাই আপাতত দিল্লি-বেজিং সম্পর্কের মূল প্রশ্ন। একমাত্র এক পথেই শান্তি স্থাপন সম্ভব। বিশ্বের এই দুই জনবহুলতম দেশ যদি স্বার্থপ্রলোভনের বাহিরে গিয়া, সঙ্কীর্ণ জাতীয়তাবাদী জিগিরের ঊর্ধ্বে উঠিয়া নিজেদের সীমান্ত সমস্যার সমাধান করিতে বসে, তাহা হইলে হয়তো কিছু পরিবর্তন ঘটিতে পারে। তবে, আপাতত তেমন কোনও সঙ্কেত নাই। সুতরাং আপাতত ভারতীয় পক্ষের সন্তুষ্টিরও তেমন কোনও অবকাশ নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

india China Indo China Border Indo China Relation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy