—প্রতীকী ছবি।
এত দিন সিনেমার পর্দায় এমন দুর্ঘটনার দৃশ্য দেখা যেত: বাস বা গাড়ি ধাক্কা দিচ্ছে অন্য বাস বা গাড়িকে, উল্টে যাচ্ছে পথপার্শ্বের ফল বা আনাজের দোকান, যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষে ভূপাতিত হওয়ার আগে শূন্যে ভাসছে মানুষের শরীর। পর্দায় এই সবই রোমাঞ্চকর, কারণ দর্শকের জানা যে দিনশেষে সবটাই নকল, ফিল্মি কায়দায় বানানো, রক্ত ঝরলেও তা প্রাণান্তক নয়। কিন্তু ছবির সেই দৃশ্যই যখন বাস্তব হয়ে ওঠে, তখন রোমাঞ্চ হয়ে ওঠে আতঙ্ক। যেমন হল গত সপ্তাহের কলকাতায় ডায়মন্ড হারবার রোডে, একই দিকে ধাবমান দু’টি বেসরকারি বাসের গতির রেষারেষি পৌঁছল চরম আতঙ্কবিন্দুতে: একটি বাস গতি সামলাতে না পেরে আচমকা বাঁ দিকে ঘুরে হুড়মুড়িয়ে এসে পড়ে পথের পাশে একটি ফলের দোকানে, বাস ও দোকানের মাঝে পড়ে পিষ্ট হন পঁচাত্তর বছরের এক বৃদ্ধ, যিনি রাস্তার উপরেও নয়, রাস্তার ধারে নিরাপদে দাঁড়িয়ে ছিলেন অটো ধরবেন বলে। অন্য বাসটি দু’টি গাড়িকে ধাক্কা দেয়, সংঘর্ষ এতই তীব্র যে বাসটি একটি গাড়ির উপর উঠে যায় এবং শেষে ধাক্কা দেয় পথের পাশে মেট্রোরেলের স্তম্ভে।
বৃদ্ধ মানুষটি পরে হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। দু’টি বাস মিলিয়ে কুড়ির উপর যাত্রী কমবেশি আহত, ফলের দোকান ও অন্য গাড়ি দু’টির ক্ষতি হয়েছে, জখম হয়েছে একটি গরু। সব মিলিয়ে এই হল মহানগরীর এক প্রান্তের একটি দিনের একটি দুর্ঘটনার ‘ক্ষয়ক্ষতি’র খতিয়ান। নিজের জীবন দিয়ে, বিনা দোষে চরম ক্ষতিস্বীকারের মূল্যে বাঁচছে এই শহরের সাধারণ মানুষ। আর যারা এ কাণ্ড ঘটাল? দুর্ঘটনার পরে বাসচালকের পলায়ন এ শহরে নৈমিত্তিক ঘটনা, পরে তাদের পুলিশ আটক করেছে, এবং বাস আটকের সূত্রে বেরিয়ে এসেছে ভয়ঙ্করতর তথ্য: গতির ঝড় তোলা একটি বাসের বিরুদ্ধে সিগন্যাল লঙ্ঘন, সেন্ট্রাল লাইন লঙ্ঘন, বেপরোয়া গতি ও বিপজ্জনক ড্রাইভিং-সহ তিনশোরও বেশি ট্র্যাফিক আইন ভঙ্গের ‘কেস’ নথিবদ্ধ! পৃথিবীর কোন ‘সভ্য’ মহানগরে এর পরেও এমন কোনও বাস পথে নামতে পারে, এবং কোনও রকম শিক্ষা না নিয়ে পুনর্বার বেলাগাম গতি ও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, তার উদাহরণ জানা আছে কি?
একই ঘটনা যে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর হয়ে চলেছে তার কারণ কলকাতায় বেসরকারি বাস নিয়ন্ত্রণে পুলিশের এক সার্বিক দায়িত্বহীনতা। পুলিশ কর্তৃপক্ষ আইনি অসহায়তার দোহাই দেয়: একটি বাসের বিরুদ্ধে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গের অজস্র কেস থাকলেও শহরের পথে তার চলা থামানো যায় না, তেমন আইনই নেই! কার্যত আইনভঙ্গের জেরে জরিমানা জমতেই থাকে, বিরাট অঙ্ক জমলে বাস কর্তৃপক্ষ লোক আদালত মারফত প্রতিকার চায়, এ দিকে অগুনতি কেস মাথায় নিয়েও পথে বাসের বেপরোয়া গতি থামে না। কলকাতায় এই মুহূর্তে চলা বেসরকারি বাসের কতগুলি যে এ রোগে আক্রান্ত তার ইয়ত্তা নেই; জনসাধারণ যে বাসে চড়েও দিনশেষে জীবিতাবস্থায় ঘরে ফিরছেন সে-ই আশ্চর্যের। আবার বাসে না চড়লেই যে তার ধাক্কায় প্রাণটি যাবে না সে নিশ্চয়তাও এ শহরে নেই, উপরের দুর্ঘটনাতেই প্রমাণিত। বাসচালক ও মালিকের ঔদ্ধত্য নাকি পুলিশের ব্যর্থতা, আইনের নির্জীবতা নাকি পরিবহণ দফতর তথা সরকারের চরম ঔদাসীন্য, কে কতটা দায়ী সেই হিসাব বুঝতে বুঝতেই পরের দুর্ঘটনাটি ঘটে যাবে, নিশ্চিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy