Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Teachers

অকর্তব্য

অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতটিতে বড় ধরনের গোলযোগ স্পষ্ট। কোথাও শিক্ষক আছে, ছাত্র নেই। আবার কোথাও এক জন শিক্ষককেই একাধিক বিষয় পড়াতে হয়।

teachers

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪ ০৭:৫৭
Share: Save:

শিক্ষার মানোন্নয়ন গৌণ, মুখ্য বিষয় অবশ্যই জনবাদী রাজনীতি। তাতে আগামী দিনের নির্বাচনী হিসাবনিকাশের অঙ্কটি সহজতর হয়। সুতরাং, শিক্ষাদানের বাইরে শিক্ষককে নিযুক্ত করা হোক নানাবিধ সরকারি প্রকল্প রূপায়ণের কাজে— সম্প্রতি এমনই মানসিকতায় আক্রান্ত ভারতের কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলি। ওড়িশার কটক শহরে যেমন কয়েকশো শিক্ষকের কাছে নির্দেশ এসেছে, জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আওতায় কার্ডধারীদের মধ্যে ১০০০ টাকা করে সরকারি অনুদান বণ্টনের। ইতিপূর্বে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী উপভোক্তাদের চাল, গম এবং অন্যান্য শস্য ভর্তুকিযুক্ত মূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু গত বছর থেকে খাদ্যশস্য ক্রয়ে উপভোক্তাদের প্রদেয় মূল্যটুকুরও দায়িত্ব কেন্দ্র স্বয়ং নিজের হাতে নেয়। অথচ, এত দিন ওড়িশার মতো রাজ্যে রাজ্য সরকারই উপভোক্তাদের হয়ে খাদ্যশস্য ক্রয় করেছে, এবং শাসক দল সমগ্র প্রকল্পের কৃতিত্ব দাবি করেছে। অতঃপর কেন্দ্র সেই কৃতিত্বের দাবি আত্মসাতে উদ্যত হলে ওড়িশা সরকার ভোটের মুখে উপভোক্তাদের হাতে অতিরিক্ত নগদ ১০০০ টাকা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষকদের প্রয়োজন সেই কাজেই।

শিক্ষাক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক। সরকারি খাদ্যশস্য প্রাপকদের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়া এবং প্রাপ্তি স্বীকার করে তাঁদের স্বাক্ষর সংগ্রহ করা এক জন শিক্ষকের কাজ নয়। যে সময়টা শিক্ষার্থীদের আসন্ন পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার কাজে ব্যয় করা যেত, সেই সময়ে তাঁরা অনুদান বিতরণে ব্যস্ত থাকবেন— এমনটি আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থার ছবি হতে পারে না। সর্বোপরি, উপরোক্ত উদাহরণটি ওড়িশার হলেও তা থেকে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যকেও সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া চলে না। এ রাজ্যে সরকারি এবং সরকারপোষিত বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষা-বহির্ভূত বিষয়ে নিযুক্ত করার উদাহরণ কিছু কম নেই। সেখানেও তাঁদের এক বড় অংশকে মিড-ডে মিল, কন্যাশ্রীর মতো নানাবিধ সরকারি প্রকল্পের কাজ দেখভাল করতে হয়। তা ছাড়া নির্বাচনী দায়িত্বটিও আলাদা উল্লেখের দাবি রাখে। সেই দায়িত্ব শুধুমাত্র ভোটের ডিউটি-তেই শেষ হয় না। আগাম প্রস্তুতি থেকে নির্বাচনপর্ব সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সেই কাজেই অধিকাংশ সময় ব্যয় হয় শিক্ষকদের।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি এবং সরকারপোষিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি দীর্ঘ দিন যাবৎ অব্যবস্থার শিকার। অতিমারি-অন্তে পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হয়েছে। অধিকাংশ স্কুলেই শিক্ষক-ছাত্র অনুপাতটিতে বড় ধরনের গোলযোগ স্পষ্ট। কোথাও শিক্ষক আছে, ছাত্র নেই। আবার কোথাও এক জন শিক্ষককেই একাধিক বিষয় পড়াতে হয়। বহু স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষাকর্মী না থাকায় সেই কাজও শিক্ষকদেরই সম্পন্ন করতে হয়। তদুপরি যদি হরেক সরকারি প্রকল্পের বোঝা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে পড়াশোনার কাজটি হবে কখন? ওড়িশার উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে এখনই প্রশাসনের উদ্যোগী হওয়া জরুরি। শিক্ষকের দায়িত্ব শিক্ষার্থীর পঠনপাঠনের। তাঁরা সেই কাজটিতেই যেন পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য কাজের জন্য পৃথক লোক নিয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে তার জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করতে হবে। ভুললে চলবে না যে, শিক্ষা নির্বাচনী স্বার্থপূরণের ঊর্ধ্বে এক সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Teachers India Government Society Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy