Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

এ বার ফিরাও মোরে

‘বিজেপি বনাম গণতন্ত্র’: ব্রিটেনের শীর্ষ সংবাদপত্রের সংবাদ শিরোনাম। কেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদীর শাসনে গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে ভারতের দ্রুত অবনমন নিয়ে এই মুহূর্তে বহু দেশে গভীর উদ্বেগ।

Lok Sabha Election 2024

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৪
Share: Save:

আজকের প্রত্যুষটি বড় বিশেষ। কত যে বিশেষ, তা হয়তো বোঝা যাবে ভারতবর্ষের পরবর্তী কালের ইতিহাসে। বিশেষ, কেননা ভারতের অষ্টাদশতম জাতীয় নির্বাচনটি নিশ্চিত ভাবে স্থির করে দিতে চলেছে এ দেশের চরিত্র, অভিমুখ ও গন্তব্য। জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে পরিচিত ভারত কি তার খ্যাতি অক্ষুণ্ণ রাখতে পারবে, না কি পাল্টে যাবে তার সমাজ-রাজনীতির অণু-পরমাণু, এই নির্বাচনই তা ঠিক করে দেবে। ১৯৫২ সাল থেকে এই বিশালকায় দেশ তার বিশালতর জনসমাজে বিস্ময়কর দক্ষতার সঙ্গে গণতান্ত্রিক অনুষ্ঠানটি নিয়মিত ভাবে চালিয়ে এলেও এ বারের নির্বাচনটি অন্য রকম। এই নির্বাচন হয়তো বুঝিয়ে দেবে, এ দেশ কি ইলেক্টোরাল ডেমোক্র্যাসি বা নির্বাচনী গণতন্ত্র থাকবে, না কি ক্রমে ইলেক্টোরাল অটোক্র্যাসি বা নির্বাচনী একনায়কতন্ত্র হয়ে উঠবে। প্রসঙ্গত, সুইডেনের গোঠেনবার্গ-এ এক খ্যাতনামা গণতন্ত্র-নজরদারি প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের রিপোর্টে জানিয়েছে, ভারত এখন বিশ্বের সঙ্কটময় একনায়কতন্ত্র। ফলত, প্রায় দেড় মাস ব্যাপী এই বিপুল রাজসূয় নির্বাচন যজ্ঞের শেষে কী ফল অপেক্ষা করছে ভারতের জন্য, তা জানতে এখন বিপুল প্রতীক্ষা দেশেবিদেশে। ২০২৪ বছরটি অন্য দিক থেকেও বিশেষ, কেননা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র-সহ বহু দেশের নির্বাচন এই বছর, প্রায় চারশো কোটি মানুষ ভোটে অংশ নেবেন। দক্ষিণ এশিয়ার তিন প্রধান শক্তিধর দেশের সাধারণ নির্বাচন ২০২৪ সালে— পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই নির্বাচন শেষ। তবে নিশ্চিত ভাবেই, গণতন্ত্রের দীর্ঘ গৌরবে ভারতের নির্বাচনের মহিমা সম্পূর্ণ অন্য স্তরের।

‘বিজেপি বনাম গণতন্ত্র’: ব্রিটেনের শীর্ষ সংবাদপত্রের সংবাদ শিরোনাম। কেন, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। গত দশ বছরে নরেন্দ্র মোদীর শাসনে গণতান্ত্রিক মানদণ্ডে ভারতের দ্রুত অবনমন নিয়ে এই মুহূর্তে বহু দেশে গভীর উদ্বেগ। তৈরি হয়েছে পর্বতপ্রমাণ গুরুতর অভিযোগ। অভিযোগ বহু রকমের: নাগরিকের স্বাধীনতা হরণ, সংবাদমাধ্যমের উপর নিষ্পেষণ, সরকারের সমালোচনাকে দেশদ্রোহ বলে কঠোর শাস্তিপ্রয়োগ, বিচারবিভাগের উপর শাসনবিভাগের কর্তৃত্বপ্রসারের প্রচেষ্টা, সংখ্যাগুরুবাদ প্রতিষ্ঠা ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুর উপর বৈষম্য ও নির্যাতন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের মাধ্যমে সেই বৈষম্য জোরদার করার পদ্ধতি, সমাজ-সংস্কৃতির বহুত্ব অস্বীকার করে একত্ব নির্মাণের আত্যন্তিক উদ্যোগ, নোটবন্দির মাধ্যমে আর্থিক দুর্নীতির ক্ষেত্রপ্রসার, এবং শেষাবধি বৃহদাকার আর্থিক জাল বিছিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার প্রয়াস। নির্বাচনের ঠিক আগে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলনেতা অরবিন্দ কেজরীওয়ালকে দুর্নীতির অভিযোগে কারারুদ্ধ করার মধ্যেও অনেকেই দেখছেন ভোটের সময়ে বিরোধীদের নিষ্পেষণ করার কৌশল। একই কৌশলের অভিযোগ, ভোটের আগে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের উপর আর্থিক নিষ্পেষণ চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যেও। বিজেপি যদি পুনর্বার জিতে আসে, তা হলে তাকে মনে রাখতে হবে, এই গৌরবময় গণতন্ত্রটির উপর কী বিরাট করালগ্রাস ব্যাপ্ত হয়েছে: তার থেকে আশু উদ্ধার জরুরি।

প্রশ্ন হল, ‘গণতন্ত্র বাঁচানো’ কেন এতটাই জরুরি। উত্তরে বলা যায়, কেবল যে দার্শনিক যুক্তিতে ব্যক্তিনাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ গণতন্ত্র, তা-ই নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকেও কল্যাণকর পদ্ধতিতে চালিত করতে গণতন্ত্রই ভরসা। সমগ্র সমাজ কিছু সম্পদশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কুক্ষিগত হোক, এ যদি না চাওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের পদ্ধতিটিকে প্রাণ দিয়ে আগলানোই নাগরিকের কাজ। ‘গণতন্ত্র ভাল, কেননা আর সমস্ত তন্ত্র খারাপ’: বলেছিলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। তবে কিনা, গণতন্ত্রের একটিই অতি বড় সঙ্কট: এক বার তাকে মৃত্যুপথে ঠেলে দিলে তাকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে আনা বড্ড কঠিন। ভারতভাগ্যবিধাতা পারবেন কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Society Democracy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy