অন্য দেশ থেকে উঠে আসা এমন অভিযোগ স্বভাবতই ভারতের পক্ষে লজ্জাজনক। প্রতীকী ছবি।
পশ্চিম আফ্রিকার মর্মান্তিক পুনরাবৃত্তি এশিয়াতেও। ফের ভারতীয় কাশির ওষুধ খেয়ে শিশুমৃত্যুর অভিযোগ উঠল। ডক-১ ম্যাক্স কাশির সিরাপ খেয়ে আঠারো জন শিশু মারা গিয়েছে, এমনই অভিযোগ এসেছে উজ়বেকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে। প্রাথমিক তদন্তে ওষুধে ইথিলিন গ্লাইকলের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের অস্বাভাবিক মাত্রায় উপস্থিতি এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। তিন মাস আগে পশ্চিম আফ্রিকার গাম্বিয়ায় অস্বাভাবিক মাত্রায় ডাইইথিলিন গ্লাইকল (ডিইজি) এবং ইথিলিন গ্লাইকলের (ইজি) উপস্থিতির কারণে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হয় সত্তর জন শিশুর।
অন্য দেশ থেকে উঠে আসা এমন অভিযোগ স্বভাবতই ভারতের পক্ষে লজ্জাজনক। আরও লজ্জার বিষয়, ওষুধে ডিইজি সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভারতের নিজেরই দুঃখজনক ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে চেন্নাই, মুম্বই, বিহার, গুরুগ্রাম এবং জম্মু মিলিয়ে অন্তত পাঁচটি ক্ষেত্রে ডিইজি-র কারণে গণ-বিষক্রিয়ার সাক্ষী থেকেছে দেশ। বিষক্রিয়ার মূল কারণ খুঁজে তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করলে নিশ্চয়ই পরিস্থিতির পরিবর্তন হত— যা স্পষ্টতই হয়নি। উপর্যুপরি ঘটনার এ আর নিছক অনুমান নয় যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রক বা দেশে ওষুধের গুণমান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশন (সিডিএসসিও) কোনও শিক্ষাই নেয়নি। পরিবর্তে দেশের ওষুধ শিল্পের পরিচিতি রক্ষার্থেই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাদের। গাম্বিয়ায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রেরিত তথ্যকে সিডিএসসিও-র অপর্যাপ্ত আখ্যা দিয়ে অভিযুক্ত সংস্থার বদলে এক অর্থে হু-কেই ওষুধের গুণমাণ প্রমাণের দায় চাপানোর পদক্ষেপ তারই ইঙ্গিতবাহী। অনেক ক্ষেত্রেই বাজারজাত করার আগে ওষুধে ব্যবহৃত রাসায়নিক ঠিকমতো পরীক্ষা না করা, কোনও দুর্ঘটনার পরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে দেখা এবং বাজার থেকে সংক্রমিত ওষুধ সরিয়ে ফেলার উপযুক্ত আইনি প্রক্রিয়া না থাকার ফলে বারংবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
আপাতত নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাটির সদস্যপদ বাতিল করেছে দেশের সর্বোচ্চ ওষুধ রফতানি পর্ষদ ফার্মেক্সিল। বন্ধ করা হয়েছে ওষুধ উৎপাদনও। কিন্তু এই পদক্ষেপ সাময়িক, এবং সম্ভবত যথেষ্ট নয়। প্রতিটি স্তরে সিডিএসসিও-র কার্যকলাপ আরও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। ওষুধ পরীক্ষার পর সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট জনসমক্ষে আনা উচিত। দেশে যতগুলি ওষুধ পরীক্ষার গবেষণাগার রয়েছে, জনস্বার্থে তাদের বিভিন্ন রিপোর্টের একটি তথ্যভান্ডারও তৈরি করা প্রয়োজন।সেই সঙ্গে ওষুধের লাইসেন্স ও পরীক্ষার প্রক্রিয়াগুলিও নিয়মিত নজরদারির আওতায় আনা দরকার। প্রসঙ্গত, বহু নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশ তাদের ওষুধের জোগানের জন্য ভারতের উপরে নির্ভর করে। কিন্তু সাম্প্রতিক শিশুমৃত্যুর ঘটনাগুলি জেনেরিক মেডিসিন তৈরির ক্ষেত্রে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকাংশে বিনষ্ট করেছে। বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক মঞ্চে ভারত যখন নিজেকে নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, এই সব ঘটনা তার ভাবমূর্তির পক্ষে সহায়ক কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy