তাইল্যান্ডে প্রবল বায়ুদূষণ। ছবি: রয়টার্স।
এক সপ্তাহে দুই লক্ষ। তাইল্যান্ডে প্রবল বায়ুদূষণে অসুস্থ হয়ে সম্প্রতি এত জন নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পরিসংখ্যানটি উদ্বেগজনক। বস্তুত, এই বছর জানুয়ারি মাসের গোড়া থেকেই সে দেশে চলছে তীব্র বায়ুদূষণের প্রকোপ। এ-যাবৎ প্রায় তেরো লক্ষ নাগরিক দূষণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টের মতো রোগে ভুগছেন তাঁরা। কিন্তু সেই উদ্বেগকেও ছাপিয়ে গিয়েছে গত এক সপ্তাহে গুরুতর অসুস্থদের সংখ্যাবৃদ্ধি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে শিশু ও অন্তঃসত্ত্বাদের ঘর থেকে বেরোনোর উপর জারি হয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। বাধ্যতামূলক হয়েছে এন৯৫ মাস্কের ব্যবহার। কোনও নতুন অতিমারি নয়, তাইল্যান্ডে সুস্থ স্বাভাবিক যাপনের পথ অবরুদ্ধ করেছে বায়ুদূষণ।
তাইল্যান্ডে দূষণের এমন বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী— যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানা নিঃসৃত ধোঁয়া, এবং ফসলের গোড়া পোড়ানো। কারণগুলি ভারতের অতি পরিচিত। প্রতি শীতে দেশের রাজধানী দিল্লির গ্যাস-চেম্বার হয়ে ওঠার পিছনেও এই কারণগুলিই মূলত দায়ী। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ব্যাঙ্ককের ৫০টি জেলায় বাতাসে পিএম ২.৫ কণার মাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে বিপজ্জনক রকম বেশি। ভারতের চিত্রটি খুব আলাদা নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, ভাসমান কণার স্তর ২.৫ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত সহনীয়। সেখানে ভারতে প্রতি ঘনমিটারে তার পরিমাণ ৫৩.৩ মাইক্রোগ্রাম। সুতরাং, দূষণের বিচারে ভারতের তাইল্যান্ড হওয়া সময়ের অপেক্ষামাত্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে এই অতি সূক্ষ্ম দূষণ কণিকার মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকলে তা শ্বাসগ্রহণের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। দীর্ঘ দিন এর সংস্পর্শে থাকলে ভয়ঙ্কর শ্বাসজনিত অসুখের সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তী কালে ফুসফুসের ক্যানসারের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। এই দূষণের কারণেই তাইল্যান্ডের মতোই দিল্লি সরকারও এ বছর স্কুল বন্ধ, বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ, ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ-সহ একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছিল। তাতে তাৎক্ষণিক ফল মিললেও, দীর্ঘমেয়াদি ফল এখনও অধরা।
সমস্যা শুধুমাত্র দিল্লির নয়। সুইস সংস্থা আইকিউএয়ার-প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত শহরগুলির মধ্যে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাজস্থানের ভিওয়াড়ী। চতুর্থ দিল্লি। কলকাতা বেশ কিছুটা পিছনে থাকলেও তার বিপন্নতাকে তুচ্ছ করে দেখার উপায় নেই। গত জানুয়ারি মাসে কলকাতার সবচেয়ে দূষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল ‘শহরের ফুসফুস’ ময়দান চত্বর। সর্বোপরি, বায়ুদূষণ হ্রাসের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদাসীনতাও মর্মান্তিক। শুধুমাত্র কিছু পরিবেশবান্ধব বাসের সূচনা করাই যথেষ্ট নয়, বায়ুদূষণের মোকাবিলায় প্রয়োজন এক দীর্ঘমেয়াদি নিবিড় পরিকল্পনার। দুর্ভাগ্য, তেমনটা এখনও দেখা যায়নি। রাজ্য স্তরেও না, জাতীয় স্তরেও না। ২০২৪ সালের মধ্যে গোটা দেশে দূষিত কণার মাত্রা ৩০ শতাংশ হ্রাসের উদ্দেশ্যে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জাতীয় স্বচ্ছ বাতাস প্রকল্প তৈরি হলেও সেই লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করা অসম্ভব প্রতিপন্ন হচ্ছে। বায়ুদূষণজনিত কারণে প্রতি বছর গোটা বিশ্বে যত মানুষ প্রাণ হারান, তাঁদের প্রতি চার জনে এক জন ভারতীয়। তাই এই বিপদটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব না দিলে তাইল্যান্ডের মতো অচিরেই শ্বাসের বাতাস কম পড়বে এ দেশেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy