—প্রতীকী চিত্র।
লোকসভা নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে, কাজেই প্রধানমন্ত্রীর ঝুলি থেকে যে ‘উপহার’ বেরোতে আরম্ভ করবে, তাতে আর আশ্চর্য কী। এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ২০০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তটি ‘দেশের বোনেদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর রাখির উপহার’। যাঁরা উজ্জ্বলা যোজনার অধীন, তাঁদের জন্য আরও দু’শো টাকা ভর্তুকির ব্যবস্থা হয়েছে। কেউ বলতেই পারেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের দু’টি বৈঠকেই এমন চাপ তৈরি হল যে, গ্যাসের দাম কমানোর কথা মনে পড়ে গেল। যদি তা-ই হয়, তবে তা গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ। শাসকপক্ষকে চাপে রাখা, তাদের জনগণের স্বার্থের অনুকূল সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করা বিরোধীর প্রধানতম দায়িত্ব। তবে, ইউপিএ জমানার শেষ পর্বে যে সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪০০ টাকা, তার দাম বেড়ে সাড়ে এগারোশো টাকায় পৌঁছনোর পর তার উপরে ২০০ টাকা ছাড় দিয়ে সেই সিদ্ধান্তকে ‘উপহার’ বলে প্রচার করার চেষ্টা দেখলে মোল্লা নাসিরুদ্দিনের গল্প মনে পড়াও বিচিত্র নয়— ‘দুঃখীকে সুখ দেওয়ার এ-ও এক উপায়’। ভারতবাসীর মনে পড়তে পারে, গত লোকসভা নির্বাচনের আগেও দেশের কৃষকদের জন্য এমনই এক উপহারের ব্যবস্থা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী: পিএম কিসান প্রকল্পে দেশের প্রতিটি কৃষি পরিবারের জন্য বছরে ছ’হাজার টাকা অর্থসাহায্য। তখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হবে। সেই প্রতিশ্রুতি যমুনার কালো জলে ভেসে গিয়েছে— গত বছর প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী পঁচিশ বছরের উন্নতির রূপকথা ফেরি করেছিলেন, এ বছর একেবারে হাজার বছরের পথনির্দেশিকার কথা বলেছেন। সেই বায়বীয় প্রতিশ্রুতির মহাসমুদ্রে যদি গ্যাসের দাম কমার হাতে-গরম সুফলটুকু পাওয়া যায়, মন্দ কী?
এলপিজি সিলিন্ডারের দাম একবারে ১৮ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্তটির একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ঘটছে সাড়ে এগারো শতাংশ হারে। সেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ যে সরকারের সাধ্যাতীত, এত দিনে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ দিকে, রাজনীতিকমাত্রেই জানেন, ভোটের বাজারে মূল্যস্ফীতি একটি কঠিন সমস্যা— প্রতি দিনের বাজার যাওয়া যদি আর্থিক সঙ্কটের কথা মনে পড়িয়ে দেয়, তবে যে কোনও শাসকই বিপাকে পড়বেন। অতএব, যে দাম নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে সহজ, ‘উপহার’ হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকার তাকেই বেছে নিয়েছে। খেয়াল করা ভাল যে, প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দামও বাড়েনি। অতীত অভিজ্ঞতা যদি নির্দেশক হয় তবে বলা চলে যে, বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন ও তার পর লোকসভা— এই পর্বে পেট্রল-ডিজ়েলের দামও আর বাড়বে না।
নির্বাচনের মরসুমে জ্বালানির দাম কমিয়ে রাখা সরকারের পক্ষে সুবিধাজনক কেন? তার কারণ, তাতে যে ঘাটতি তৈরি হয়, আপাতত সে টাকা যাচ্ছে পেট্রো-পণ্য বিপণনকারী সংস্থাগুলির কোষাগার থেকে। পেট্রল-ডিজ়েলের ক্ষেত্রে তা-ই ঘটেছে। এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময়ও জানানো হয়নি যে, সেই টাকা কোথা থেকে আসবে। ফলে, ধরে নেওয়া যায়, আপাতত সংস্থাগুলিই সেই ঘাটতি বহন করবে। রাজ্য সরকারগুলির হাতে সেই উপায় নেই। ফলে, কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী যখন অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে এলপিজি-র উপরে ভ্যাট কমানোর কথা বলেন, তিনি বিলক্ষণ জানেন যে, সেই কাজটি করা মানে রাজ্যগুলির কোষাগারে আরও বেশি চাপ পড়বে। এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে কেন্দ্রের বকেয়া বিপুল, বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দও ক্রমহ্রাসমান। তার উপর এই চাপ বহন করা যে রাজ্যগুলির পক্ষে দুঃসাধ্য হবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তা বিলক্ষণ জানেন। তবুও সস্তা রাজনীতির মোহ তাঁরা কাটাতে পারেন না। হীনতাকেই রাজনীতির অভিজ্ঞান করে তোলার কৃতিত্বটি তাঁদের বিলক্ষণ পাওনা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy