Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Facebook

গোকুলে বাড়িছে

তাই অস্ট্রেলিয়াবাসীর ফেসবুকে কোনও রকম খবর দেখিবার বা শেয়ার করিবার পরিষেবাই বন্ধ করিয়া দিয়াছে ফেসবুক!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৩৩
Share: Save:

কে  বেশি ক্ষমতাধর, রাষ্ট্র না বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলি? ভারত সরকার ও টুইটারের মধ্যে সাম্প্রতিক বিসংবাদে এই বিতর্কই সামনে আসিয়াছে। ইহার পূর্বে ফেসবুক প্রসঙ্গেও একই কথা উঠিয়াছিল; বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলি আসলেই গণতন্ত্রের রক্ষক কি না, সময় ও ক্ষেত্র বুঝিয়া কখন তাহারা রাষ্ট্রের বন্ধু, কখনই বা প্রতিপক্ষ, সেই প্রশ্ন উঠিয়াছিল। তবে ভারতে বিশ্বে এই বিতর্ক নূতন নহে। দেশে দেশে সরকার তথা প্রশাসনের সহিত বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলির অম্লমধুর সম্পর্কে অম্লত্বের ভাগই বেশি। সংস্থাগুলির অধিকাংশই আমেরিকান, এবং খাস আমেরিকাতেই দীর্ঘ দিন রব উঠিয়াছে, উহাদের শক্ত হাতে শাসন করা, তাহাদের একচ্ছত্র ক্ষমতায় রাশ টানা প্রয়োজন। এখন দেখা যাইতেছে, আমেরিকা হইতে ভারত, অস্ট্রেলিয়া হইতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন— সকলেই উহাদের বাড়বাড়ন্তে উদ্বিগ্ন।


অথচ, একবিংশ শতকের শুরুতে এই সংস্থাগুলির আবির্ভাবে ভাবা হইয়াছিল, তাহাদের নবপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফল মানুষের হাতে পৌঁছাইলে লাভবান হইবে রাষ্ট্র, প্রসারিত হইবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। তাহা হইয়াছে বটে, অস্বীকারের উপায় নাই। গুগল, ফেসবুক বা টুইটারের দৌলতে আজিকার বিশ্বে ব্যক্তি, গোষ্ঠী হইতে রাষ্ট্র, সকলের স্বর সকলে শুনিতে পাইতেছে। সরকারের বিবৃতি বা ব্যক্তি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি মুহূর্তে ছড়াইয়া পড়িতেছে, পৌঁছাইতেছে সমষ্টির কাছে। সেই কারণেই সম্ভবত এই সংস্থাগুলি রাষ্ট্র বা প্রশাসন হইতে বহুবিধ আইনি ও আর্থিক ছাড় পাইয়াছিল। কিন্তু তাহারা যে ধারে-ভারে বাড়িয়া, বাণিজ্যের পেশি ফুলাইয়া শুধু জীবনই নহে, রাষ্ট্রক্ষমতাকেও প্রভাবিত করিবে, কল্পনায় আসে নাই। কিন্তু তাহাই হইয়াছে। আমেরিকায় বিগত দুই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই বৃহৎ সমাজমাধ্যম সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ’-এর অভিযোগ উঠিয়াছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতার আবহ থাকিবে, তাহাই দস্তুর। কিন্তু গুগল-এর ন্যায় সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতাহীন একাধিপত্য চালাইবার অভিযোগে আইনি রাশ টানিতেছে আমেরিকা সরকার। অস্ট্রেলিয়া সরকার ফেসবুককে বলিয়াছিল, অস্ট্রেলীয় সংবাদ সংস্থাগুলির ‘কনটেন্ট’ ব্যবহারের সুবাদে ফেসবুক হইতে সংবাদ সংস্থাগুলির প্রাপ্য অর্থের ব্যাপারে চুক্তি করিতে। পাছে অন্য দেশও একই দাবি করে, তাই অস্ট্রেলিয়াবাসীর ফেসবুকে কোনও রকম খবর দেখিবার বা শেয়ার করিবার পরিষেবাই বন্ধ করিয়া দিয়াছে ফেসবুক!


টুইটার ট্রাম্পকে আজীবন নিষিদ্ধ করিয়াছে। ট্রাম্প ভাল না মন্দ, এই নির্বাসন গণতন্ত্রের হিতকর না পরিপন্থী, সেই সব ছাপাইয়াও জাগিয়া থাকে এই প্রশ্ন: বাণিজ্য সংস্থার প্রধান কি এতই ক্ষমতাধর যে, চাহিলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রধান মানুষটিকেও ঢিট করিতে পারে? বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলির কাণ্ড দেখিয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি বুঝিয়াছে, ডিজিটাল বিশ্বকে চালাইবার নূতন, স্পষ্ট, স্বচ্ছ আইনকানুন দরকার। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডিজিটাল বাজারে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা আনিতে ‘ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট’ প্রণয়নের কথা বলিয়াছে। কর ফাঁকি হইতে শ্রমিক শোষণ, বৃহৎ প্রযুক্তি সংস্থাগুলি আরও বহু দোষে দুষ্ট। সেই সব অসাম্য দূর করিতেও সরকারি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

social media Facebook
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy