প্রতীকী ছবি।
যে কোনও সম্পদের হিসাব রাখিতে হয়। জলেরই বা হিসাব থাকিবে না কেন? বিশেষত একশত দিনের কাজের প্রকল্পের মূল্যায়ন বড়ই প্রয়োজন। ইহা বিশ্বের সর্ববৃহৎ জলসংরক্ষণ প্রকল্পের একটি। ২০০৬ সাল হইতে শুরু করিয়া দেশের ৫০ লক্ষ গ্রামে তিন কোটিরও অধিক জলসংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ হইয়াছে এই প্রকল্পের অধীনে। একটি অসরকারি সংস্থার হিসাব, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলাতে ৪৩ হাজারের অধিক জলসংরক্ষণের কাজ হইয়াছে, এবং আটশত কোটি টাকার উপর খরচ হইয়াছে। উদ্দেশ্য— পুকুর খুঁড়িয়া, বাঁধ নির্মাণ করিয়া, ভূগর্ভে জলসঞ্চার। ভারতের গ্রামে সেচ এবং পানীয় জল, উভয়ই প্রধানত ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরশীল। আক্ষেপ, একশত দিনের কাজের প্রকল্পের ‘সাফল্য’ দাবি করিতে সকল রাজনৈতিক দলের মধ্যে হুড়াহুড়ি লাগিয়া রহিয়াছে। কিন্তু সেই সাফল্যের হিসাব হইতেছে শুধুমাত্র প্রকল্পের সংখ্যা, কর্মদিবসের পরিসংখ্যান ও প্রদত্ত মজুরির পরিমাণ দিয়া। কত পুকুর বাস্তবিক জলপূর্ণ হইয়াছে, বাঁধ নির্মাণের ফলে ভূগর্ভের জলস্তর কতখানি বাড়িয়াছে, কত গ্রামে বাড়তি সেচের জল মিলিয়াছে এবং তাহার জন্য উৎপাদন বাড়িয়াছে, তাহা অনুসন্ধানের চেষ্টাও হয় নাই।
অথচ, এই প্রতিটি বিষয়ের হিসাব জরুরি। কর্মদিবস বাড়াইবার রাজনৈতিক তাগিদ অধিক হইবার জন্য বহু সময়ে জল সংরক্ষণের প্রশ্নটি উপেক্ষিত থাকে। নানা সমীক্ষায় অজস্র অপরিকল্পিত এবং অর্ধসমাপ্ত পুকুরের খোঁজ মিলিয়াছে। সেগুলি চাঁদের বুকে গর্তের ন্যায় পড়িয়া রহিয়াছে, জলের চিহ্ন নাই। আবার ইহার বিপরীত চিত্রও আছে। নানা রাজ্যের কিছু কিছু গ্রামে সকল গ্রামবাসী মিলিত হইয়া জল ধরিবার প্রকল্পের সার্থক রূপদান করিয়াছেন। একটি অসরকারি সমীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে, সেই সকল গ্রামে কৃষির প্রসার হইয়াছে, গ্রাম হইতে অন্যত্র কাজের সন্ধানে যাইবার মানুষের সংখ্যা কমিয়াছে। ২০০৬ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুরামু জেলার যে খরাপ্রবণ গ্রামটিতে মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্পের সূচনা করিয়াছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, সেই বান্দলাপল্লি খরামুক্ত হইয়াছে। এই সাফল্যের কাহিনিগুলি দেশের বহু গ্রামবাসীকে অনুপ্রাণিত করিতে পারে। একশত দিনের কাজের প্রকল্পের মূল তাৎপর্য যে দৈনিক মজুরি নহে, তাহা কৃষি ও সংশ্লিষ্ট জীবিকার নিরাপত্তা ও উন্নতি, সেই বার্তাটি সকলের নিকট পৌঁছায় নাই।
অপর পক্ষে, ভূগর্ভের জলের পরিস্থিতির উপর নজরদারি, তাহার উত্তোলন, বণ্টন ও ব্যবহারের নীতি কী হইবে, তাহা ঘোষণা করিতে হইবে রাজ্যগুলিকে। পরিবেশ নীতি, বিদ্যুৎ নীতি, কৃষি নীতি এবং খাদ্যসুরক্ষা নীতি, প্রতিটির সহিত গভীর সম্পর্ক রহিয়াছে জল সংরক্ষণের। একটি উদাহরণ— এ রাজ্যে ধানের ন্যায় জলনিবিড় শস্যই কেবল সরকার ক্রয় করিয়া থাকে। তাহার ফলে রুক্ষ জেলাগুলিতেও ধানের চাষ ছড়াইয়াছে। ভূগর্ভের জল এবং তাহা তুলিবার জ্বালানি, উভয়েই অতিরিক্ত খরচ হইতেছে। অতএব কৃষিতে জলের যুক্তিযুক্ত ব্যবহার নির্দিষ্ট করিবার অন্যতম উপায়, সরকারি খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে ক্রয়নীতি। জল বাঁচাইতে হইলে সরকারি ক্রয়ে ফসল-বৈচিত্র আনিতে হইবে। এমন কর্তব্য সম্পাদনে আর বিলম্ব নহে। জল জীবন, জীবিকাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy