পুলিশের কাজ শুধু অকুস্থলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নয়, এমন পরিস্থিতি যাতে আদৌ তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করা। ছবি: পিটিআই।
ফের এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি। ফের তা ক্রমে হিংসাত্মক হয়ে ওঠা। এবং, ফের পুলিশের তাণ্ডব। শনিবার ধর্মতলায় আইএসএফ-এর কর্মসূচি উপলক্ষে যে ঘটনাগুলি ঘটল, তা যেন গত কয়েক বছরের হুবহু পুনরাবৃত্তি। রাজনৈতিক সমাবেশ সামলানোয় কলকাতা পুলিশের দক্ষতা বা পারদর্শিতা নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে। প্রশ্ন বহুমাত্রিক। প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলি যা-ই দাবি করুক না কেন, সমাবেশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এমন হিংসাত্মক হয়ে ওঠে না, তার পিছনে পূর্বপ্রস্তুতি থাকে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বলেছেন, ধর্মতলার মোড়ে এত ইট-পাথর কোথা থেকে এল, পুলিশ তা তদন্ত করে দেখবে। পাথর স্বভাবত স্বয়মাগত নয়, কেউ তা ধর্মতলায় নিয়ে এসেছে। সমাবেশ উপলক্ষে যে ইট-পাথর কলকাতায় আসছে, পুলিশের রেডারে যদি সেই কথাটি ধরা না পড়ে, তা হলে বাহিনীর সংবাদ সংগ্রহের দক্ষতা কমেছে বলেই মানতে হবে। দ্বিতীয়ত, হিংসাত্মক ঘটনা সচরাচর পূর্বাপরহীনও হয় না। এই ক্ষেত্রেও তার সূত্রপাত ঘটেছিল ভাঙড়ে। কলকাতা পুলিশের কাছে সেই সংবাদ পৌঁছলে, এবং কর্তারা তার গুরুত্ব অনুধাবন করলে পূর্বপ্রস্তুতি আরও জোরদার হওয়ার কথা ছিল।
তৃতীয়ত, পুলিশের কাজ শুধু অকুস্থলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নয়, এমন পরিস্থিতি যাতে আদৌ তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করা। কূটনীতির ক্ষেত্রে যেমন, পুলিশের কাজেও তেমনই ‘ব্যাক চ্যানেল’-এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সমাবেশের আগেই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতৃস্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অশান্তির রাশ টানার চেষ্টা কলকাতা পুলিশ আদৌ করে কি? কেউ বলতে পারেন যে, এমন বিশৃঙ্খলা থেকে বিরোধীরা সচরাচর রাজনৈতিক ভাবে লাভবান হন— তাঁরা পুলিশের কথায় সেই লাভ হাতছাড়া করবেন কেন? অভিজ্ঞ পুলিশকর্তারা এই প্রশ্নের উত্তর জানেন। কী ভাবে ক্ষুব্ধ বা লাভসন্ধানী বিরোধী নেতাকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, কলকাতা পুলিশ পূর্বতন অফিসারদের থেকে সেই পাঠ গ্রহণ করলে পারে। অবশ্য, একটি ভিন্ন প্রশ্নও থাকে— পুলিশ আদৌ এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় কি না। যে কোনও প্রকারে বিরোধীদের উপর চড়াও হওয়াই পুলিশের উদ্দেশ্য কি না। সেই কাজ পুলিশ স্বেচ্ছায় করবে, এমন কথা চরম সমালোচকও বলবেন না। তবে, যে পুলিশ রাজনৈতিক শাসকদের অঙ্গুলি নির্দেশে চালিত হতে বাধ্য হয়— তা সেই শাসক যে রঙেরই হোক না কেন— তাদের পক্ষে এমন পদক্ষেপ, কিংবা পদক্ষেপের অভাব, অসম্ভব নয়।
তাতে অবশ্য বিশৃঙ্খলাকামী বিরোধীর দায় ফুরোয় না। গণতন্ত্রে বিরোধীদের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ, শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলাও বিরোধীদের অবশ্যকর্তব্য। কিন্তু সেই আন্দোলন গণতন্ত্রের গণ্ডিকে অস্বীকার করতে পারে না। আগে বিজেপি বা বামফ্রন্টের কর্মসূচিতে যা হয়েছে, এ দিনও সেই ঘটনাই ঘটল— রাজনৈতিক কর্মীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য হয়ে উঠল অশান্তি সৃষ্টি করা, পুলিশকে যথেচ্ছ মারধর করা, শহরের জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া। একে গুন্ডামি বলে, রাজনীতি বলে না। বিরোধীদের যে অজুহাতই থাক না কেন, কোনও ভাবেই পুলিশের উপর আক্রমণ সমর্থনীয় নয়। পুলিশের ব্যর্থতা এ-হেন পরিস্থিতি তৈরি হতে দেওয়ায়, এবং গোড়াতেই অশান্তি ঠেকাতে না পারায়— কিন্তু রাজনীতির নামে রাজপথে এ-হেন হিংস্রতা চললে পুলিশেরও উপায়ান্তর থাকে কি? রাজপথ অচল করে, নাগরিককে বিপাকে ফেলে খবরের শিরোনাম হওয়ার পথটি অতি সহজ; গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ব্যবহার করে, জনমত গড়ে তোলার পথটি তুলনায় কঠিন। একের পর এক ঘটনায় প্রমাণিত: এ রাজ্যের বিরোধীরা দ্বিতীয় পথটি নিতে অত্যন্ত অনাগ্রহী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy