Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Earthquake in Turkey and Syria

অসহনীয়

ভূমিকম্পের প্রাবল্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে শীতের প্রচণ্ডতা, এবং তার পিছনে অনতিক্রম্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেক্ষাপট।

A Photograph of people suffered in Turkey and Syria because of massive Earthquake

তুরস্ক এবং সিরিয়া প্রায় গত একশো বছরে এত ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্বিপাক দেখেনি। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:৪১
Share: Save:

দুর্ভাগ্য এক-এক সময় কোনও কোনও দেশের পিছু ছাড়ে না। তুরস্ক এবং সিরিয়া, দুই দেশের দিকে তাকিয়ে আজ কথাটা মনে হয়। দুই দেশই প্রায় গত একশো বছরে এত ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্বিপাক দেখেনি। তাদের বিপুল মানবিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সমগ্র বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে। কত হাজার জন আহত বা নিহত, সেই সংখ্যা নেহাতই হিমশৈলের চূড়া, কেননা যাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন, তাঁরাও পরিবার পরিজন, বাড়িঘর হারিয়ে আপাতত সম্পূর্ণ দিশাহারা— সেই সামগ্রিক ক্ষতিকে কোনও সরল সূচকে ধরা মুশকিল। ভূমিকম্পের প্রাবল্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে শীতের প্রচণ্ডতা, এবং তার পিছনে অনতিক্রম্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত প্রেক্ষাপট। সব মিলিয়ে মানুষের কষ্টযন্ত্রণা এবং হারানোর বেদনা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে এ বার, তা সত্যিই মূক করে দেওয়ার মতো। শিশুর দেহ হাতে নিয়ে বহন করছেন পিতা, শিশু খুঁজে বেড়াচ্ছে নিখোঁজ পিতামাতা আত্মীয়ের দেহ, এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে রোজ পাওয়া যাচ্ছে দেহস্তূপ— তুরস্ক আর সিরিয়ার দুঃসংবাদ-স্রোত থামবে কবে, জানা নেই। কোভিড-১৯, যুদ্ধ ও গৃহযুদ্ধ মিলিয়ে এমনিতেই মধ্য এশিয়ার এই অঞ্চলটির পরিস্থিতি অবর্ণনীয় রকমের খারাপ। জ্বালানির অভাবে ঠান্ডায় মারা যাচ্ছেন কেউ, খাবার নেই বলে পুষ্টির অভাবে দুরারোগ্য অসুখের কোলে ঢলে পড়ছেন কেউ, অসহায় চোখে তাকিয়ে দেখছে তাঁদের পরিবার। স্বভাবতই বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতাটিকে বলছেন ‘আ ক্রাইসিস উইদিন মাল্টিপল ক্রাইসিস।’

এ বারের সঙ্কট আরও একটি বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এত খারাপ হলে, পরিকাঠামো এত দুর্বল হলে যে কোনও সঙ্কট আরও বহু গুণ বেশি তীব্র মনে হয়, কেননা সঙ্কটের মোকাবিলার কাজটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়। খননযন্ত্রের অপ্রতুলতা, জ্বালানির অভাব, গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের অমিল, সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনে যে কোনও স্বাভাবিক ত্রাণকার্যও এখন অস্বাভাবিক বড় চ্যালেঞ্জ। কাজ যত কঠিন হচ্ছে, সময় তত বেশি লাগছে, অসহায় মানুষের দেহসংখ্যাও বাড়ছে। প্রসঙ্গত, সিরিয়ার উত্তরে কুর্দ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় অভিযান, এবং ইরানি প্রভাবাধীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলপন্থী সামরিক অভিযানও ত্রাণকার্য অনেক বেশি কঠিন করে দিয়েছে। বাস্তবিক, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যকৃত দুর্যোগ যে কেমন করে হাত মিলিয়ে মানুষের জীবনকে খেলাচ্ছলে খাদের ধারে ঠেলে দেয়, এ বার সেটাই দেখা গেল।

ভারতেরও একটি কথা বোঝার আছে এই অবকাশে। এই দুই দেশই কিন্তু অনুধাবন করছে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের চোটে কত অবহেলিত হয়েছে বাড়িঘর রাস্তাঘাট তৈরির সাধারণ প্রযুক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রগুলি। প্রায় অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এই অবহেলা, কিংবা অনবধান। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই সব কাজের গুরুত্ব বোঝার কথা নয়, এ সব নিতান্ত ভাবে রাষ্ট্রের নজরদারিতে থাকার কথা। সরকার যদি দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধবিগ্রহ ও বিক্ষোভবিদ্রোহে শামিল হয়, তা হলে এই ভাবেই নাগরিকের প্রাণ প্রায় মূল্যহীন দাঁড়িয়ে যায় তার কাছে। একই ঘটনা ঘটে জাতীয়তাবাদের চাপে উন্নয়ন করতে বসে পরিবেশ ও মানবিক নিরাপত্তার দিকটিকে অগ্রাহ্য করলে। ভারতের হিমালয়-পর্বতাঞ্চলেও বারংবার এই প্রবল অবহেলা দেখা যাচ্ছে— আবার প্রমাণ করল জোশীমঠ। পরিকল্পনাহীন পরিকাঠামো তৈরিতে নিয়ন্ত্রণ না হলে যে কত বড় বিপদ আসন্ন— তা কি ভারতের শাসকরা বুঝতে পারছেন? প্রকৃতির খামখেয়ালের উপর কারও কোনও হাত থাকে না। কিন্তু প্রকৃতির রোষ কমানোর জন্য মানুষ অনেকটা করতে পারে। সেটুকুতে অন্তত বিশেষ মন দেওয়া উচিত— মানুষের প্রাণের দায়টুকু স্বীকার করে।

অন্য বিষয়গুলি:

Earthquake in Turkey and Syria Natural Disaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy