Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Opposition Parties

বিরোধীদের দায়িত্ব

বিরোধী নেতাদের গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কিছু রক্ষাকবচ প্রদানের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিল তারা। সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করেছে।

Supreme Court.

সুপ্রিম কোর্ট। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৪৮
Share: Save:

ঘটনা এবং রটনার মধ্যে ব্যবধান থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যা ঘটে এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী সেই বিষয়ে যা বলেন, দুইয়ের মধ্যে ব্যবধান না থাকাই বিধেয়। কেন্দ্রীয় সরকার সিবিআই বা ইডি-র মতো তদন্ত সংস্থাগুলিকে বিরোধীদের নাজেহাল করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে, এই অভিযোগ জানিয়ে ১৪টি বিরোধী দল সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে দরবার করেছিল। বিরোধী নেতাদের গ্রেফতারির ক্ষেত্রে কিছু রক্ষাকবচ প্রদানের জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছিল তারা। সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন খারিজ করেছে। বিচারপতিদের বক্তব্য, কোনও বিশেষ ক্ষেত্রে এই ধরনের অপব্যবহারের অভিযোগ বিবেচনা করা যেতে পারে, বিবেচনা করা হয়েও থাকে, কিন্তু পাইকারি ভিত্তিতে রক্ষাকবচ দেওয়ার নীতি বা নির্দেশিকা আদালত তৈরি করতে পারে না। বিশেষত, সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে যে রক্ষাকবচ নেই, রাজনীতিকদের জন্য তার বিধান দেওয়া হলে ‘আইনের চোখে সকলে সমান’ নামক মৌলিক আদর্শটি লঙ্ঘন করা হয়। সুতরাং, এই আবেদন অযৌক্তিক। বিরোধী পক্ষের আইনজীবী অতঃপর আদালতের অনুমতি নিয়ে আবেদনটি প্রত্যাহার করেন।

এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রচারে নামেন শাসক শিবিরের মুখপাত্ররা। প্রচারের প্রধান প্রতিপাদ্য: সরকার দুর্নীতি দমনে উদ্যোগী হয়েছে বলেই বিরোধীরা সেই উদ্যোগ বানচাল করতে তৎপর, গোয়েন্দা সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগ তাদের অজুহাতমাত্র; আদালতের নির্দেশে তাদের ‘মুখোশ খুলে গিয়েছে’। প্রধানমন্ত্রীও যথারীতি সেই সুরে সুর মিলিয়ে ঘোষণা করেছেন যে, বিরোধীদের অপচেষ্টা আদালতে ধাক্কা খেয়েছে। কিন্তু— ছুটলে কথা থামায় কে— তিনি জনসভার শ্রোতাদের আরও জানিয়েছেন যে, বিরোধীরা আদালতে বলতে গিয়েছিল তাদের দুর্নীতির তদন্ত যেন কেউ না করে, আদালত সেই আর্জি খারিজ করেছে। স্পষ্টতই, বিরোধীদের আর্জিটিকে তিনি আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে পরিবেশন করেছেন। ঠিক করেননি। বিরোধীরা আদালতে দুর্নীতির তদন্ত বন্ধ করার আবেদন জানাননি। তাঁদের ‘উদ্দেশ্য’ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বা দলীয় মতামত থাকতেই পারে, কিন্তু সেই ধারণা বা অভিমতকে বিরোধীদের আবেদন বলে চালানো প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সঙ্গত আচরণ নয়। কোন আচরণ সঙ্গত, কোনটি নয়, সেই শিক্ষা গ্রহণের কোনও সদিচ্ছা প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর সতীর্থদের আছে কি না, সে অবশ্য কঠিন প্রশ্ন।

সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত থেকে বিরোধীরা কি প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে আগ্রহী? আবেদনকারীদের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য: “আপনারা বলছেন বিরোধিতার পরিসর (সরকারের অন্যায় দাপটে) সঙ্কুচিত হয়েছে; এর প্রতিকারও ওই রাজনৈতিক পরিসরেই (খুঁজতে হবে)... আদালতে নয়।” কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধিপত্যবাদী শাসকরা এ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে যে ভাবে বিভিন্ন দিক থেকে দমন করে চলেছেন, তার প্রতিরোধে ও প্রতিকারে অনেক সময়েই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিচারবিভাগ। কিন্তু রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজ যদি দুঃশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণত আদালতের উপর ছেড়ে দিতে চায়, তা কেবল অযৌক্তিক নয়, আত্মঘাতী। বিরোধী রাজনীতি এবং প্রতিস্পর্ধী সমাজ একটি সার্থক ও সচল গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত। এ দেশে বর্তমান জমানায় সেই শর্ত পূরণে বড় রকমের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বিরোধী দলগুলি নিজেদের মধ্যে, সংহতি দূরস্থান, সমন্বয় সাধনেও সচরাচর অপারগ। শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের অনেকেই— ভয়ের তাড়নায় অথবা সঙ্কীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির অনুপ্রেরণায়— যথেষ্ট সরব এবং সক্রিয় হয় না। এই পরিবেশে সামাজিক প্রতিস্পর্ধাও ক্রমে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর। বিরোধী দলগুলি যদি সচল ও সংগঠিত হয়ে নিজেদের কাজ না করে, তা হলে ভারতীয় গণতন্ত্রের পায়ের নীচে যেটুকু জমি অবশিষ্ট আছে, তা-ও অচিরেই অন্তর্হিত হতে পারে।

অন্য বিষয়গুলি:

Opposition Parties Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy