Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Online Examination

অনধিকার

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পত্রযোগে অনুরোধ করেছেন, কলেজ পরীক্ষাগুলি যেন ‘অফলাইন’ নেওয়া হয়।

শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২২ ০৫:১৩
Share: Save:

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পত্রযোগে অনুরোধ করেছেন, কলেজ পরীক্ষাগুলি যেন ‘অফলাইন’ নেওয়া হয়। তাঁদের অভিযোগ, ‘অনলাইন’ পরীক্ষায় কোনও স্বচ্ছতা রাখা যাচ্ছে না বলে পরীক্ষা পদ্ধতিটিই অর্থহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষকরা কী বলতে চাইছেন, বুঝতে অসুবিধা হয় না। ব্যক্তিগত, পরিবারগত ও সমাজগত অভিজ্ঞতায় ইতিমধ্যে অনেকেই অবগত যে, কেন ও কী ভাবে অনলাইন পরীক্ষার কোনও স্বচ্ছতা রাখা যায় না। প্রয়োজন হলে অনলাইন পাঠদান ও পরীক্ষাগ্রহণ ছাড়া উপায় থাকে না, সে তো গত দুই বছরের অভিজ্ঞতা বলে দিচ্ছে। কিন্তু ২০২২ সালের মাঝামাঝি, যখন সেই প্রয়োজনবোধটি আর অনুভূত হচ্ছে না, প্রায় সব রকম অফিস-কাছারি ব্যবসা-বাণিজ্য আনন্দ-উৎসব নিয়মিত স্বাভাবিক ভাবে চলছে, তখন হঠাৎ সরকারি নির্দেশে কেন পড়াশোনা ও পরীক্ষার ক্ষেত্রে ‘অসুবিধা’ বোধটি বিশেষ রকম বেশি হতে বসেছে? দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর পার করে দু’বছর পর স্কুল-কলেজ খুলেছিল। মে মাসের গোড়ায় সরকারি নির্দেশে ফের তা দেড় মাসের জন্য বন্ধ। ক্ষেত্রবিশেষে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে, যাদের সেই সংস্থান নেই তাদের পুরোপুরি ছুটি। অজ্ঞানবাদী বলবেন, সরকারের মন দেবা ন জানন্তি— কোভিড বা গরম, কোনও যুক্তিই টেকসই নয় যখন, তখন কেনই বা এই ছুটি এবং অনলাইনের ডাক। আর দুর্জনে বলবেন, পড়াশোনা বস্তুটি উঠে গেলেই হয়তো ক্ষুদ্র রাজনীতির রমরমার সুবিধা, তাই ভেবেচিন্তেই এই সিদ্ধান্ত।

কারও কারও ক্ষুদ্র স্বার্থের যে এতে বিস্তর সুবিধা, তা বোঝা যায় ছাত্রদের ‘অনলাইন’ পরীক্ষার আন্দোলন দেখেও। অাপন অধিকারের গণ্ডি এ রাজ্যের ছাত্ররা বোঝে না, এবং রাজনৈতিক নেতারা তাদের সে শিক্ষা থেকে বিরত রাখতে চান। সুতরাং, এখন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা অনলাইন পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে সরব। ছাত্রদের এই দাবি কেবল অন্যায় বা অন্যায্য নয়, স্পষ্টত অনধিকার-চর্চা। পাঠ্যক্রম, প্রশ্নপত্র, পরীক্ষার ধরন ইত্যাকার পদ্ধতিগত প্রশ্নগুলি শিক্ষক ও শিক্ষা-প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের বিবেচ্য, তাতে শিক্ষার্থীদের কিছু বলার থাকতে পারে না। গণতন্ত্রের বিকৃত প্রয়োগ শিক্ষাঙ্গনে চললে তাতে ভূরি ভূরি অমঙ্গল, এবং সেই অমঙ্গলের ভাগ ছাত্রদের উপরই বেশি বর্ষায়। পড়াশোনার শর্টকাট ছাড়া অনলাইন দাবির অন্য কোনও অর্থ থাকতে পারে না। তরুণ নাগরিকরা এমন এক স্পষ্টত অনৈতিক ও দুর্ভাগ্যজনক দাবি নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছে, এ হয়তো পশ্চিমবঙ্গেই সম্ভব। ছাত্ররা যা চাইছে, তা প্রকৃত শিক্ষারই পরিপন্থী। এই সামান্য কথাটি তারা বুঝতে পারছে না, এমন ভাবা অসম্ভব।

কোভিডকাল অনলাইন-অফলাইন সম্বলিত মিশ্র শিক্ষাপদ্ধতির গুণ বুঝিয়েছে যেমন, তেমনই বুঝিয়েছে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসঘরের কোনও বিকল্প নেই— অন্তত এই দেশে, এখনও। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা গত দুই বছরে অনেক কম শিখেছে, স্কুলশিক্ষায় বিপুল ভাবে বেড়েছে ড্রপআউটের সংখ্যা। কোনও বিশেষ পরিস্থিতিতে সাময়িক ভাবে অথবা বিশেষ কোনও কোর্সের অংশবিশেষ অনলাইন ব্যবস্থায় হতে পারে, কিন্তু সামগ্রিক পড়াশোনা সে ভাবে হওয়ার কোনও যুক্তি পাওয়া অসম্ভব। ডিজিটাল ডিভাইড নিয়েও কম কথা হয়নি: বহু ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে ডিভাইসের দূরত্বই পড়াশোনার সঙ্গে দূরত্ব রচনা করছে। যে পড়ুয়ারা অনলাইনের দাবিতে উপাচার্য ও শিক্ষকদের ঘেরাও করছে, তারা কি ক্ষুদ্রতার বশে সহপাঠীর কথা ভাবার মতো স্বাভাবিক মনটুকুও বিসর্জন দিয়েছে? রাজনীতির ক্ষুদ্রস্বার্থের কারণে এই রাজ্যের সর্বপ্রকার পরিসরে বিকারের নানা রূপ। তবে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণাদায়ক রূপ শিক্ষাব্যবস্থারই।

অন্য বিষয়গুলি:

Online Examination Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy