ক্ষতিপূরণের অঙ্কটি সামান্য নয়।
অঙ্কটি সামান্য নয়। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। দেশের শীর্ষ আদালত কঠিন ও তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিয়মবিধি পালনের ব্যাপারে নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালিত হয়নি। এমনকি পরিবেশ আদালতের নির্ধারিত সময়সীমাও অতিক্রান্ত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালত তরল ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাজ্যকে আগামী দু’মাসের মধ্যে আলাদা ভাবে একটি তহবিল গঠন করে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা জমা রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
রাজ্য পরিবেশ দফতর জানিয়েছে যে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে তদারকি করতে জেলা স্তরে নোডাল কমিটি গঠন করা হবে। তবে যে রাজ্য পূর্বে একাধিক বার অ-নিয়মের দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে, তার প্রতি আস্থা পোষণ করা মুশকিল। রাজ্যের শতাধিক পুর এলাকায় প্রতি দিন যে পরিমাণ কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার মধ্যে মাত্র তিন হাজার টনের কিছু বেশি পরিমাণ জঞ্জাল দৈনিক প্রক্রিয়াকরণের আওতায় আসে। বাকি দৈনিক দশ হাজার টনের অধিক জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের বাইরেই থেকে যায়। অন্য দিকে, ভাগাড়গুলিতে জমা হওয়া স্তূপীকৃত জঞ্জালের জন্য যে পরিবেশগত ক্ষতি হচ্ছে, ক্ষতিপূরণ ধার্য হয়েছে তার উপরেও। স্তূপীকৃত জঞ্জাল নিয়ে পরিবেশবিদদের উদ্বেগ নতুন নয়। কলকাতার ধাপার প্রসঙ্গটি উল্লেখযোগ্য। কিছু মাস পূর্বেই রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, ধাপায় প্রায় ৬০ একর জায়গা জুড়ে স্তূপীকৃত বর্জ্যের পরিমাণ চল্লিশ লক্ষ টনের মতো। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত বায়ো-রেমিডিয়েশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দু’লক্ষ টনেরও কম পরিমাণ বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হয়েছে। অবশিষ্ট সুবিশাল পরিমাণ বর্জ্য দীর্ঘ দিন ধরে বিস্তীর্ণ এলাকার দূষণের কারণ হয়ে উঠেছে। এই ‘দূষণ বোমা’ রুখতে পরিবেশ আদালত ২০২৪ সালের মধ্যে অবশিষ্ট বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ করে ৬০ একর জমি পুনরুদ্ধারের সময়সীমা ধার্য করেছে। কিন্তু সেই সময়সীমা মানাও সম্ভব হবে কি না, সংশয় রয়েছে।
একই রকম উদাসীনতার চিত্র তরল বর্জ্যের ক্ষেত্রেও। বস্তুত, এই ক্ষেত্রে ধার্য হওয়া ক্ষতিপূরণের অঙ্কটি সর্বাধিক। রাজ্যে দৈনিক যে পরিমাণ তরল বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তার অর্ধেকের বেশি প্রক্রিয়াকরণের বাইরে থেকে যায় বলে অনেক জায়গায় দরিদ্র মানুষ অপরিশোধিত জল খেতে বাধ্য হন। কলকাতায় প্রতি দিনের তরল বর্জ্য পরিশোধনের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় পূর্ব কলকাতা জলাভূমি অঞ্চল। প্রতি দিন উৎপন্ন ১৪০ কোটি লিটার তরল বর্জ্যের মধ্যে ৯০ কোটি লিটারেরও বেশি প্রাকৃতিক ভাবে পরিশোধনের কাজটি করে এই জলাভূমি। অথচ, বেআইনি নির্মাণের ফলে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে বুজে যাচ্ছে এই প্রাকৃতিক পরিশোধনের ক্ষেত্রটিও। এই উদাসীনতা পরিবেশের পক্ষে মর্মান্তিক। সাম্প্রতিক নির্দেশে জাতীয় পরিবেশ আদালত ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের ত্রুটি সংশোধনের কথা বলেছে। কিন্তু যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে এত দিন ধরে যে ক্ষতি পরিবেশের উপর সাধিত হল, অর্থের অঙ্কে তা পূরণ হবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy