ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সরকারের রথী-মহারথীরা অষ্টাদশ অক্ষৌহিণী সহকারে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে ঝাঁপাইয়া পড়িতেছেন, নরেন্দ্র মোদীর ভারতে ইহাই রীতি। পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকরা গত বৎসরের ম্যারাথন-প্রমাণ ভোটপর্বে বিস্ফারিতনয়নে সেই দৃশ্য দেখিয়াছিলেন। রাজ্যের নির্বাচনে দিল্লীশ্বরদের হাঁকডাক নূতন কিছু নহে, তবে নরেন্দ্র মোদীর জমানায় তাহা এক অভূতপূর্ব মাত্রা অর্জন করিয়াছে। সন্দেহ নাই, ইহা বর্তমান অতিনায়কতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য, এক অর্থে তাহার ধর্ম। কিন্তু তাহার পরেও মানিতে হইবে— গোয়ার নির্বাচনী প্রচারে দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আদি বিজেপির নায়করা যে ভূমিকা পালন করিলেন তাহা কিঞ্চিৎ অস্বাভাবিক। কেবল জনসংখ্যার বিচারে নহে, ভারতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বের মাপকাঠিতেও গোয়া তুলনায় ছোট রাজ্য বলিয়াই পরিচিত। তাহা অগৌরব নহে, বাস্তবের স্বীকৃতিমাত্র। সেই বাস্তবের অনুপাতে বিজেপির ‘জাতীয়’ নায়কদের এমন বিসদৃশ রকমের বিপুল উপস্থিতিতে আর যাহাই হউক, স্বাভাবিক সামঞ্জস্যের অভাব।
কিন্তু তাহা অস্বাভাবিকতার একটি অংশ মাত্র। সাড়ম্বর প্রচারে বিজেপির সহজাত উৎসাহ এবং পারদর্শিতার প্রমাণ মিলিয়াছে। কিন্তু মুখ্য প্রশ্ন, প্রচারের নামে দলনেতারা এমন তীব্র আক্রমণ চালাইলেন কেন? উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে মেরুকরণের প্রচণ্ড অভিযান লইয়া নূতন করিয়া বলিবার কিছু নাই, কিন্তু গোয়ার মতো একটি রাজ্যেও প্রচারের বাণীতে এত ঝাঁঝ? গোয়ার স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস টানিয়া আনিয়া নেহরু তথা কংগ্রেসের নামে দোষারোপ? নেহরুর জন্যই পর্তুগিজদের নিয়ন্ত্রিত গোয়ার স্বাধীন হইতে দীর্ঘ বিলম্ব হইয়াছিল— এমন তত্ত্ব খাড়া করিয়া নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহেরা তাঁহাদের ইতিহাসবোধের যে প্রমাণ দিয়াছেন তাহা লইয়া একটি শব্দ ব্যয়ও নিছক অপচয়, কারণ ইতিহাস লইয়া তাঁহাদের কোনও মাথাব্যথা নাই। কিন্তু এই মরিয়া প্রচারের তাগিদটি কোথা হইতে আসিতেছে?
উত্তর কঠিন নহে। প্রথমত, ২০২৪ সাল যতই কাছে আসিতেছে, নরেন্দ্র মোদী ও তাঁহার দলের প্রচার ক্রমশ প্রবল রূপ গ্রহণ করিতেছে। তাঁহাদের নিকট সামনের বিধানসভা নির্বাচনগুলি আগামী লোকসভার একের পর এক মহড়া বইকি। দ্বিতীয়ত, মনে রাখা ভাল, উত্তরপ্রদেশের মতোই, গোয়াতেও গত পাঁচ বছরে রাজ্যের বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা সর্বব্যাপী। দুর্নীতির অভিযোগ, কোভিডের মোকাবিলায় অপদার্থতা এবং সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের অর্থনীতিতে বদ্ধদশার যে ইতিহাস তাহারা রচনা করিয়াছে, নাগরিকদের একটি বড় অংশ স্বভাবতই এখন তাহাদের প্রতি বিরূপ। নিজেদের কৃতিত্বের উপর ভরসা রাখিতে পারা যাইতেছে না বলিয়াই বিরোধীদের যথেচ্ছ আক্রমণের পথ। তৃতীয়ত, এই আক্রমণে বাড়তি তীব্রতা সরবরাহ করিয়াছে গোয়ার রাজনীতিতে কংগ্রেসের পুনরুত্থান। গত নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাইয়াও যে ভাবে কংগ্রেস সরকার গঠনের ‘খেলা’য় বিজেপির নিকট হারিয়া গিয়াছিল তাহা সর্ব অর্থেই লজ্জাকর। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে, বিশেষত এই নির্বাচনের প্রস্তুতিপর্বে কংগ্রেস সেই অতীতের গ্লানি অতিক্রম করিয়া এক ধরনের সংহতি এবং প্রত্যয় অর্জন করিয়াছে— দলীয় প্রার্থীদের দলবদল না করিবার ‘প্রতিজ্ঞা’ করাইবার উদ্যোগটি তাহারই প্রতীক। বিরোধী দলের এই প্রত্যাবর্তন প্রধানমন্ত্রীর ‘কংগ্রেস-মুক্ত ভারত’-এর স্বপ্ন পূরণের অনুকূল নহে। গোয়াতে কংগ্রেস কী ফল করিবে তাহা জল্পনার বিষয়, আপ নিজে কতটা সফল হইবে এবং বিজেপিকে কতটা সুবিধা করিয়া দিবে তাহাও দেখিবার। কিন্তু পশ্চিমের এই প্রান্তিক রাজ্যটি মোদী-শাহের কপালে ভাঁজ না ফেলিলে তাঁহারা সম্ভবত প্রচারে এতটা মরিয়া হইতেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy