Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Nirmala Sitaraman

অনাগ্রহ

এই মে মাসে দেশে বেকারত্বের হার গত বৎসরের সার্বিক লকডাউন চলাকালীন বেকারত্বের হারের কাছাকাছি পৌঁছাইতেছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৫:০৩
Share: Save:

গত সপ্তাহের মাঝামাঝি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস জানাইলেন, সরকারের টাকা খরচ করিবার উপরই দাঁড়াইয়া আছে ভারতীয় অর্থব্যবস্থার দ্রুত পুনরুত্থানের সম্ভাবনা। সরকার যদি এই ভাবে ব্যয় করিতে পারে যাহাতে বাজারে চাহিদা ফিরে, তাহা হইলে বেসরকারি সংস্থাগুলিও লগ্নি করিতে উৎসাহ পাইবে। শ্রীদাসের কথাগুলিতে অভিনবত্ব নাই— অর্থব্যবস্থার উপর অতিমারির প্রকোপ পড়া অবধি অর্থশাস্ত্রীরা এই কথাটিই বলিয়া চলিয়াছেন। নাগরিক সমাজ এই দাবি করিয়াছে; সংবাদমাধ্যমে বারংবার সরকারি ব্যয়ের কেন্‌সীয় দর্শনের কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া হইয়াছে। সেই গোটা সময়কালে বরং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে একটি কথাও শোনা যায় নাই। শক্তিকান্ত দাসের বর্তমান মন্তব্যের তাৎপর্য সেখানেই— দীর্ঘ নীরবতা ভঙ্গে। দুর্জনে একটি জটিলতর প্রশ্ন করিতে পারে— বর্তমান মন্তব্যের কয় আনা শ্রীদাসের নিজস্ব, আর কয় আনা দিল্লির কর্তারা উইংস-এর আড়াল হইতে প্রম্পট করিয়া দিয়াছেন? ব্যাঙ্কের শীর্ষপদে অধিষ্ঠিত হওয়া ইস্তক শ্রীদাস যাহা বলিয়াছেন, যাহা করিয়াছেন— দুর্জনের অভিযোগ যে, তাহার সিংহভাগই করিয়াছেন দিল্লির অঙ্গুলিনির্দেশে। অতএব, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির সুপরামর্শটিও দিল্লির ইঙ্গিতেই উচ্চারিত হইল কি না, সেই জল্পনা চলিতেছিল। তাহা হইলে কি কেন্দ্রীয় সরকার নিজের অবস্থান পাল্টাইতেছে? শুধুমাত্র ব্যাঙ্কঋণের সহজলভ্যতা বাড়াইয়া অর্থব্যবস্থার হাল ফিরাইয়া দিবার অবাস্তব খোয়াব ত্যাগ করিয়াছে? কিন্তু, পরবর্তী এক সপ্তাহ বুঝাইয়া দিল, তেমন কিছু হইবার নহে। শ্রীদাস যদি দিল্লির ইঙ্গিতেই কথাটি বলিয়াও থাকেন, তবু সেই ইঙ্গিত প্রকৃত প্রস্তাবে অর্থহীন— কেন্দ্রীয় সরকারের আরও অনেক কাজকর্মের মতোই।

অর্থশাস্ত্রীরা যে অতিমারির সূচনালগ্ন হইতেই সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির সুপারিশ করিতেছেন, তাহা অকারণে নহে। সেই ব্যবস্থা মানুষের হাতে নগদের সহজ জোগানের পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে করাই বিধেয়, কারণ সেই টাকার সিংহভাগ ব্যয় হইবে ভোগব্যয়ে। অর্থশাস্ত্রের পরিভাষায় যাহাকে মাল্টিপ্লায়ার বলে— অর্থাৎ, কোনও খাতে এক টাকা বাড়তি খরচ করিলে জাতীয় আয় সেই এক টাকার যত গুণ পরিমাণ বাড়ে— সেই ধ্রুবকটি ভোগব্যয়ের ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ। যত বেশি সাধারণ মানুষের হাতে টাকা পৌঁছাইয়া দেওয়া যাইবে, পিরামিডের নিম্নতম স্তরে চাহিদাও ততই বাড়িবে। পিরামিডের যত ধাপ উপরে উঠা যায়, মোট আয়ে ভোগব্যয়ের অনুপাতটি ততই কমিতে থাকে— ফলে, গরিব মানুষের হাতে টাকা পৌঁছাইলেই বাজারে চাহিদার পরিমাণ সর্বাধিক বাড়িবে। তাহাতে বাণিজ্যিক সংস্থাগুলি জোগান বাড়াইবে। সব মিলাইয়া অর্থনীতির স্থবির চাকা ফের জঙ্গম হইবে।

অর্থশাস্ত্রের এই প্রাথমিক যুক্তি নরেন্দ্র মোদী-নির্মলা সীতারামনরা জানেন না, অথবা গোটা প্রশাসনে এই কথাটি তাঁহাদের বুঝাইয়া বলিবার মতো কোনও লোক নাই, তাহা বিশ্বাস করা কঠিন। এই মে মাসে দেশে বেকারত্বের হার গত বৎসরের সার্বিক লকডাউন চলাকালীন বেকারত্বের হারের কাছাকাছি পৌঁছাইতেছে। এই অবস্থায় সরকার যদি প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তর করে, অথবা একশত দিনের কাজ প্রকল্পে অধিকতর কর্মসংস্থান করে, বা অন্য কোনও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছাইবার ব্যবস্থা করে, তাহাতে যে মানুষের উপকার, এই কথাটি তো বলিয়া দিবারও প্রয়োজন নাই। প্রশ্ন হইল, সব জানিয়াও সরকার কাজগুলি করে না কেন? আশঙ্কা হয়, ক্ষুদ্র হিসাবের কারবারিরা বুঝি সব খরচকেই স্বল্পমেয়াদি লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষিয়া দেখেন। যাহাতে তাৎক্ষণিক আর্থিক লাভও নাই, ভোটও নাই, তেমন জিনিসে এই সরকারের অনাগ্রহ প্রকট। তাহাতে মানুষের ক্ষতি হইলেই বা কী।

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Nirmala Sitaraman COVID19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy