Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mayanmar

অমানবতন্ত্র

কেন্দ্রীয় সরকার মায়ানমার প্রশ্নে যে গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখাইতেছে, উত্তর-পূর্বের বহু রাজ্য প্রশাসনের নিকট সেই বিলাসিতা অসম্ভব।

প্রতীবাদ। সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মায়ানমার।

প্রতীবাদ। সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে মায়ানমার।

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১১
Share: Save:

সেনা অভ্যুত্থান যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে কতখানি অধঃপাতে ঠেলিয়া দেয়, ইতিহাসে তাহার উদাহরণ ভূরি ভূরি। বলপূর্বক ক্ষমতা দখল করিলে বিরুদ্ধ মত শুনিবার দায়দায়িত্ব থাকে না। তবু বিগত দুই মাস যাবৎ মায়ানমারে যা ঘটিতেছে, তাহার ন্যায় বর্বরতা বিরল। সেনাবাহিনী বুঝাইতেছে, গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীর মৃত্যুসংখ্যা যতই হউক, অভ্যুত্থানবিরোধী শেষতম ব্যক্তিটিকে নিকেশ না করিয়া তাহারা ক্লান্ত হইবে না। আধুনিক প্রজাতন্ত্রে উত্তীর্ণ হইবার প্রতিজ্ঞা ভাঙিলেও, রাষ্ট্র এক দশক পূর্বের অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হইলেও। অদ্যাবধি পাঁচ শতাধিক প্রতিবাদী নিহত, বহু রাজনৈতিক নেতা বন্দি, সংবাদমাধ্যম স্তব্ধ, বিনা অভিযোগে আটক অন্তত দশ সাংবাদিক। গণতন্ত্রের ছিটাফোঁটাতেও সেনার উৎসাহ নাই, যে গণতন্ত্রে তাহাদের অংশীদারি ছিল, তাহাতেও। বন্দুকের নল যাহাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস, তাহারা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পুনর্নির্বাচনের লক্ষ্যে লড়িতেছে শুনিলে বিধাতাপুরুষও অলক্ষ্যে মুচকি হাসিবেন।

প্রাথমিক বিস্ময়ের ঘোর কাটাইয়া নিন্দায় মুখর হইয়াছে আন্তর্জাতিক মহল। ক্রমশ স্পষ্ট হইতেছে, উক্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ‘সংযত’ হইবার চেতাবনি তস্করকে ধর্মকাহিনি শুনাইবার ন্যায়। আমেরিকা, ব্রিটেন ও কানাডা মায়ানমার ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে, সেনার বড় কর্তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিয়াছে। অস্ত্র বিক্রয়ে স্থগিতাদেশও বিবেচনাধীন, প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে আদানপ্রদান বন্ধ করিয়াছে দক্ষিণ কোরিয়া। ঘটনাপ্রবাহের ‘প্রতিক্রিয়া’ লইয়া ভাবনাচিন্তা করিতেছে দ্বিতীয় বৃহত্তম বিনিয়োগকারী জাপান। নূতন নেতৃত্বকে অস্বীকার না করিয়াও ফি-সপ্তাহে আউং সান সু চি-র মুক্তির দাবি জানাইতেছে আশিয়ান গোষ্ঠী। বিপ্রতীপে, ক্রমাগত নির্বান্ধব হইতে বসা রাষ্ট্রটির ‘দুঃসময়’-এর ফসল ঘরে তুলিবার অঙ্ক কষিতেছে সেনামিত্র রাশিয়া ও চিন। বিবিধ আন্তর্জাতিক শক্তির সাঁড়াশিতে নিষ্পেষণ শুধু মায়ানমার নহে, ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চলটির পক্ষেই অশুভ। কাহারও ক্রীড়নক, কাহারও বা ছায়াযুদ্ধের অঙ্গন হইলে দেশের অভ্যন্তরে বিদ্রোহ বাড়িবে, বাণিজ্য মুখ ফিরাইবে, আঞ্চলিক স্থিতি ব্যাহত হইবে।

অঞ্চলের বৃহত্তম গণতন্ত্রের করণীয় কী? নয়াদিল্লি সু চি-র ঘনিষ্ঠ, সেনারও; তাহারা অভ্যুত্থানে ‘উদ্বিগ্ন’, গণতন্ত্রের পক্ষে, কিন্তু ইহার অধিক বাক্যব্যয় করে নাই। ভূতপূর্ব সেনাশাসনে জুন্টা সরকারের সহিত কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং সু চি-র সহিত গণতান্ত্রিক বন্ধুত্বের ভিতর দোদুল্যমানতা কাটাইতে পারে নাই ভারত। এই বার রাজনৈতিক শরণার্থীদের আশ্রয় ও খাদ্য দিতে অস্বীকার করিয়াও শেষাবধি সহায়তার ঘোষণা করিয়াছে সরকার। বস্তুত, কেন্দ্রীয় সরকার মায়ানমার প্রশ্নে যে গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখাইতেছে, উত্তর-পূর্বের বহু রাজ্য প্রশাসনের নিকট সেই বিলাসিতা অসম্ভব। ১৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত তাহাদের অহর্নিশ মাথাব্যথার কারণ। তাই কূটনৈতিক স্তরে দুই সরকারের আগ্রহ ও সম্পর্ক যাহাই হউক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গণতন্ত্রকামী সংগ্রামী নাগরিক সমাজের প্রতি বার্তা পৌঁছাইবার তাগিদটি অগ্রাহ্য করা যায় না। ভারতের ব্যতিক্রমী গণতান্ত্রিক অর্জনের কথা বলিয়া থাকেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। আশা রহিল, মায়ানমার প্রসঙ্গে নয়াদিল্লির অবস্থান ও উদ্যোগ সেই অর্জনকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করিবে।

অন্য বিষয়গুলি:

India Military Mayanmar Dictatorship
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy