Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Covid Death

নীতিসঙ্কট

চাহিদা অধিক, জোগান অল্প— এই পরিস্থিতিতে টিকার যথাযথ বণ্টনের নীতি কার্যকর করিতে হইবে সরকারকেই।

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২১ ০৫:১৬
Share: Save:

যুদ্ধ অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় অপেক্ষাও ভয়ানক হইতে পারে সরকারের ভ্রান্ত নীতি। তাই যে দেশ সারা বিশ্বকে টিকা জোগান দিয়া আসিয়াছে, সেই ভারতে আজ টিকার অভাব। প্রতি দিন কয়েক সহস্র কোভিড-আক্রান্ত মানুষ প্রাণ হারাইতেছেন। পর্যাপ্ত টিকা আসিবার পূর্বেই অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ আরও অনেক প্রাণ লইয়া যাইবে, তাহা প্রায় নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আঠারো বৎসরোর্ধ্বদের সুযোগ পাইলেই টিকা লইতে বলিয়াছেন, কিন্তু কোথায় টিকা মিলিবে, তাহা বলেন নাই। সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের টিকা পাইতে হয়তো বৎসর ঘুরিয়া যাইবে। হয়তো অপেক্ষা করিতে হইবে, কবে পশ্চিমের দেশগুলিতে টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়। এই সঙ্কটের মূলে রহিয়াছে কেন্দ্রের দুইটি মারাত্মক ভ্রান্তি। এক, ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ধুয়া তুলিয়া আন্তর্জাতিক টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি হইতে ভারত সরকার আগাম টিকা ক্রয় করে নাই। বিশ্বের প্রায় সকল বিত্তবান দেশ তাহা করিয়াছে। দুই, ভারতের নিজস্ব টিকা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির পরিকাঠামো বাড়াইতে সরকার অর্থ বিনিয়োগও করে নাই। উন্নত দেশগুলিতে কিন্তু বেসরকারি টিকা সংস্থার সহিত চুক্তিবদ্ধ হইয়া সরকার তাহাদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াইবার জন্য আগাম টাকা দিয়াছে। ভারতে যথেষ্ট টিকা উৎপাদনের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকার সংস্থাগুলির উপরেই চাপাইয়াছে। তাহাদের সেই অর্থবল নাই, হয়তো উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াইবার যথেষ্ট ব্যবসায়িক তাগিদ ছিল না, তাই উৎপাদনের ক্ষমতা সীমিত রহিয়া গিয়াছে। আজ ভারতে যে হারে কোভিড টিকা উৎপাদন হইতেছে, তাহাতে পঞ্চাশোর্ধ্ব নাগরিকদের দ্বিতীয় ডোজ় জুগাইতেই হাত শূন্য হইতেছে। নবীনরা এখনও সম্পূর্ণ অরক্ষিত। দরিদ্র দেশ না হইয়াও টিকাকরণের হারের নিরিখে ভারতের অবস্থান আজ অনুন্নত দেশগুলির সহিত। ভারতের কোভিড মৃত্যুহার অধিকাংশ দেশকে অতিক্রম করিতেছে।

কেন্দ্রের নীতির ভ্রান্তি বহুস্তরীয়। প্রথমত, শুরু হইতেই সার্বিক টিকাকরণের নীতি গ্রহণ না করা। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি টিকাকরণের পরিকল্পনা গ্রহণ। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আসিবে, এমন সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দেয় নাই কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে আপৎকালীন ভিত্তিতে সর্বাধিক মানুষকে যত শীঘ্র সম্ভব টিকা দিবার ব্যবস্থা করে নাই। ইহার ফলে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুও আজ অপ্রতিরোধ্য হইয়াছে। স্বভাবতই এই ব্যর্থতায় বিরোধীরা কেন্দ্রকে তীব্র আক্রমণ করিতেছেন। এই ক্ষোভ সঙ্গত। কিন্তু সময় থাকিতে বিরোধী দল, বৈজ্ঞানিক মহল, নাগরিক সংগঠনগুলিও কি সরব হইয়াছিল? সার্বিক টিকাকরণের নীতি গ্রহণ ও তদনুযায়ী প্রতিষেধক উৎপাদনের জন্য তাহারাও যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করে নাই কেন্দ্রের উপরে। পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদের প্রচারে কেন্দ্রের কোভিড মোকাবিলার নীতির সমালোচনা প্রাধান্য পায় নাই। নাগরিক সমাজও উদাসীন থাকিয়াছে। অতিমারি দুয়ারে আসিয়া পড়িবার পরে শোরগোল পড়িয়াছে। কেহ বা সার্বিক টিকাকরণ চাহিয়া আদালতের শরণাপন্ন হইয়াছেন। কিন্তু দাবি মিটাইবার উপায় না থাকিলে তাহার ঔচিত্য বিচারে কী লাভ?

তৃতীয় ভ্রান্তি, অভিন্ন নীতি গ্রহণ করে নাই কেন্দ্র। টিকা ক্রয় এবং প্রদানে কেন্দ্র-রাজ্য, সরকারি-বেসরকারি বিভাজন আরও বিভ্রান্তি তৈরি করিয়াছে। চাহিদা অধিক, জোগান অল্প— এই পরিস্থিতিতে টিকার যথাযথ বণ্টনের নীতি কার্যকর করিতে হইবে সরকারকেই। ইহাকে ‘নীতি’ বলিলে ভুল হয়, ইহা দায় এড়াইবার কৌশল। টিকা উৎপাদন যে হেতু কেন্দ্রের নীতির দ্বারা নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাই তাহার যুক্তিযুক্ত বণ্টনও নীতির দ্বারাই নির্দিষ্ট করিতে হইবে। ভ্রান্ত নীতির দায় কেন্দ্রীয় সরকারকে লইতে হইবে, এবং যথাযথ নীতি প্রণয়নের দায়ও স্বীকার করিতে হইবে। ইহাই রাজধর্ম।

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Death coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy