২০২১-২২ সালে রাজ্যে মোট ১২৩৪টি প্রসূতি-মৃত্যুর মধ্যে ১৭২টিই ঘটেছিল কলকাতায়। প্রতীকী ছবি।
কোনও রাজ্যের রাজধানী অঞ্চল স্বাস্থ্যব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্য জেলার তুলনায় কিছু এগিয়ে থাকবে, এমন পরিস্থিতি কাম্য না হলেও স্বাভাবিক। কলকাতার ক্ষেত্রেও বহুবিধ সরকারি-বেসরকারি সুপার-স্পেশ্যালিটি, মাল্টি-স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল সে ইঙ্গিত দেয়। অথচ, স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, প্রসূতি-মৃত্যুর ক্ষেত্রে এ শহর রাজ্যের শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে। ২০২১-২২ সালে রাজ্যে মোট ১২৩৪টি প্রসূতি-মৃত্যুর মধ্যে ১৭২টিই ঘটেছিল কলকাতায়। এ বছরও সেই প্রবণতা অব্যাহত। সময়ের সঙ্গে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থা এবং পরিকাঠামোর হাত ধরে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা কমবে, তেমনটাই কাঙ্ক্ষিত। সেখানে খাস কলকাতাই যদি মাতৃমৃত্যুতে রাজ্যের মধ্যে প্রথম স্থানটি দখল করে বসে থাকে, তা হলে তা সবিশেষ উদ্বেগের কারণ বইকি।
তবে, কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে এ শহরের স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর ত্রুটির চেয়েও বেশি উঠে আসছে সেই চিরচেনা প্রসঙ্গ— ‘রেফার-রোগ’। অনেক ক্ষেত্রে দূরের জেলা হাসপাতাল থেকে শেষ মুহূর্তে কলকাতায় রেফার করার কারণে রাস্তাতেই প্রসূতির অবস্থার অবনতি হয়। চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়া যায় না। কিন্তু কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হওয়ায় সংখ্যার নিরিখে কলকাতা এগিয়ে থাকে। ইতিপূর্বে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছিল যে, যথাযোগ্য কারণ ছাড়া জেলা থেকে কলকাতার কোনও হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি ও নবজাতকদের রেফার করা যাবে না। স্পষ্টত, সেই প্রবণতায় সম্পূর্ণ লাগাম পরানো যায়নি। অপ্রয়োজনীয় রেফার আটকাতে স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে নিকটবর্তী উন্নত পরিকাঠামোযুক্ত জেলা বা মহকুমা হাসপাতালে প্রসূতি ও নবজাতককে পাঠানোর নিদান দেওয়া হয়েছিল। জেলা হাসপাতালগুলিকেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরির। কোনও প্রসূতিকে রেফার করা হলে সেই গ্রুপে লেখা হবে, ফলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার সুবিধা হবে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে প্রসূতি-মৃত্যু সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলিতে দেখা যায় দেশের সামগ্রিক হারের চেয়ে এই রাজ্যে ‘মেটারনাল মর্টালিটি রেশিয়ো’ বেশি। এবং এর পিছনে অনেকাংশে দায়ী এই রেফার-রোগ। অর্থাৎ, প্রসূতি-মৃত্যু রুখতে রাজ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের উপর বারংবার জোর দিলেও শুধুমাত্র অব্যবস্থার কারণে সেই উদ্দেশ্য বিফলে যাচ্ছে।
কোনও দেশের, বা রাজ্যের প্রসূতি-মৃত্যুর হার সেখানকার সামগ্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সূচক, এবং একই সঙ্গে সার্বিক উন্নয়নেরও মাপকাঠি। এই হার বৃদ্ধির অর্থ সেই অঞ্চলে অপুষ্টি, নাবালিকা বিবাহ, সচেতনতার অভাবের মতো সমস্যাগুলি বর্তমান। সরকারি পরিসংখ্যানেও দেখা যাচ্ছে, যত প্রসূতি মারা যাচ্ছেন, তাঁদের ২৫-৩০ শতাংশের বয়সই ১৯ বছরের নীচে। নাবালিকা বিবাহ এবং অল্প বয়সেই মা হওয়ার অনিবার্য পরিণতি হিসাবে অপুষ্টি, রক্তাল্পতার মতো শারীরিক সমস্যাগুলি মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অর্থাৎ, প্রসূতি-মৃত্যু রুখতে শুধুমাত্র রেফার-রোগ বন্ধের দাওয়াই বা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি যথেষ্ট নয়। যে বদভ্যাসগুলি এখনও সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবহমান, তার গোড়াটি ধরে টান দেওয়াও সমান জরুরি। অন্যথায় এই লজ্জার হাত থেকে পরিত্রাণ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy