ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক সানা ইরশাদ মাট্টু। ছবি: ফেসবুক।
টিকিট ও ভিসা দুই-ই বৈধ, তবু সম্প্রতি আমেরিকার বিমানে উঠতে দেওয়া হল না ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক সানা ইরশাদ মাট্টুকে। দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসনে আটকে দেওয়া হল, এবং সবচেয়ে বড় কথা, কেন আটকানো হল তার কোনও যুক্তি বা সদুত্তর দেওয়া হল না! কাশ্মীরের চিত্রসাংবাদিক সানা এ বছর ফিচার ফোটোগ্রাফি বিভাগে পুলিৎজ়ার পুরস্কার বিজয়ী রয়টার্স টিমের অন্যতম বিজয়ী সদস্য, যাচ্ছিলেন সেই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানেই, যাওয়া হল না। এ শুধু এক জন সাংবাদিক তথা কর্মী ও শিল্পীর ব্যক্তিগত ও পেশাদারি অসম্মানই নয়, দেশেরও অসম্মান— পুলিৎজ়ারের মতো পুরস্কারের মঞ্চে সানার উপস্থিতি বিশ্বমঞ্চে ভারত গৌরবেরই অভিজ্ঞান হত। তা হল না, রাষ্ট্রেরই হস্তক্ষেপে।
স্বাভাবিক ভাবেই এ ঘটনায় আলোড়ন উঠেছে, প্রভাবিত হয়েছে ভারত-আমেরিকা কূটনীতিও: আমেরিকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিক বলেছেন তাঁরা পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছেন, এবং সংবাদ ও সাংবাদিকের স্বাধীনতা যে স্রেফ আমেরিকার বিশ্বাসই নয়, ভারত-আমেরিকার সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তিও— মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে তা-ও। তাতে ভারতের বর্তমান শাসকদের কিছু আসে যায় না, পুলিৎজ়ার-মঞ্চ থেকে ভারতের এ কাজকে যে ‘সঙ্কীর্ণ, চরম বিভেদকামী’ বলা হয়েছে তাতেও নয়— ‘রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস’-এর ২০২২-এর রিপোর্টে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান এ-যাবৎ কালের মধ্যে সর্বনিম্ন ১৫০-এ থাকলেই বা; ২০১৯-এর অগস্ট থেকে কাশ্মীরের অন্তত ৩৫ জন সাংবাদিক জেরা, তল্লাশি, হুমকি, শারীরিক হেনস্থা, ঘোরাফেরায় বিধিনিষেধ এমনকি মিথ্যা মামলার শিকার হলেই বা কী। কাশ্মীরি এবং সংখ্যালঘু, দুই পরিচিতিই এই ভারতে সাংবাদিকদের ‘অপরাধ’, আর তাঁদের খবর করা বা ছবি তোলার কাজ মানেই ভারতকে নেতিবাচক ভাবে দেখানো— কেন্দ্রীয় সরকারের এই বদ্ধমূল বিশ্বাসেরই ফলে সানার মতো সাংবাদিকদের হেনস্থা।
নরেন্দ্র মোদীর জমানায় সাংবাদিক-হেনস্থার সার্বিক রেখচিত্রটি ক্রমোর্ধ্বমুখী, পরিসংখ্যানই প্রমাণ। ব্যক্তি ও ঘটনাবিশেষে সেই হেনস্থার রূপ আলাদা, পরিণতিও। গত মার্চে সাংবাদিক রানা আয়ুবকেও বিদেশের বিমানে উঠতে দেওয়া হয়নি, এপ্রিলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইন্ডিয়া-র প্রাক্তন প্রধান আকার পটেলকেও না, আদালতের হস্তক্ষেপে পরে তাঁদের বিদেশযাত্রা সম্ভব হয়। শুধু পুলিৎজ়ার-অনুষ্ঠানেই নয়, গত জুলাইয়ে সানাকে প্যারিসে যেতে দেওয়া হয়নি অন্য এক সম্মান-অনুষ্ঠানেও, এবং আরও বড় কথা, সেই ঘটনার পরে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে কারণ জানতে চেয়েও উত্তর মেলেনি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তিই প্রমাণ, খেয়ালখুশি মতো ভ্রমণ আটকে দেওয়ার এই কাজটি স্রেফ রাষ্ট্রের জোর খাটানো, পেশিশক্তি দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। সানার ক্ষেত্রে আদালতের আদেশ বা সমন তো দূরস্থান, লিখিত কোনও ব্যাখ্যাও মেলেনি, এবং সে কারণেই সাংবাদিক-কর্মীদের পক্ষে এই সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করাও মুশকিল। কেন্দ্রীয় সরকার এ কাজটি করছে সুপরিকল্পিত ও অভিসন্ধিমূলক ভাবে। গণতান্ত্রিক স্বরকে স্তব্ধ করতে রাষ্ট্রের এই কৌশলটি চিনে রাখা ভাল— শুধু সাংবাদিকের নয়, নাগরিকেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy