Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tehrik-i-Taliban

দুস্তর পারাবার

কিন্তু ইতিপূর্বে দুই ক্ষেত্রেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার প্রয়োজনীয় বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের পরিচয় দিতে পারে নাই, সাফল্য দূরস্থান।

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ ০৫:৩০
Share: Save:

আফগানিস্তান হইতে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের পরিণতি ভারতের পক্ষে ক্রমশ প্রতিকূল হইয়া উঠিতেছে। ইতিপূর্বে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলিলেও ক্ষমতার ভারসাম্য স্পষ্টত আমেরিকা-সমর্থিত ও ভারতবন্ধু আফগান সরকারের দিকেই ছিল। পুরাতন ভারসাম্য আর নাই, তালিবানও দ্রুত ক্ষমতাবৃদ্ধি করিতেছে, যাহার ফল সরাসরি ভারতের উপর আসিয়া পড়িবার আশঙ্কা অমূলক নহে। এক দিকে কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদ ও অপর দিকে তালিবানের ক্ষমতালাভ— দুইয়ের পশ্চাতেই পাকিস্তানের ভূমিকাটি অগ্রাহ্য করা যায় না। এমতাবস্থায় দোহায় ভারত-তালিবান ‘গোপন’ বৈঠকের খবর বাতাসে ভাসিতেছে, ইসলামাবাদের সহিত আলোচনার খিড়কিটি খুলিয়াছে বলিয়াও শুনা গিয়াছে। বিশেষজ্ঞদের মত, বর্তমানে নয়াদিল্লির সক্রিয় ভূমিকা লইবার না থাকিলেও পর্যবেক্ষণ এবং উপস্থিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলি গুছাইয়া লওয়া জরুরি। আসন্ন সঙ্কটের মোকাবিলায় এবংবিধ নূতনতর পথই তাই নয়াদিল্লির অন্বিষ্ট— যদিও এখনও তাহা বহুলাংশে তমসাচ্ছন্ন।

বস্তুত, কূটনীতি ও বিদেশনীতির ক্ষেত্রে নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক কার্যক্রম ভরসা জাগাইতে পারে না। ভারত আপাতত নড়িয়া বসিয়াছে, সন্দেহ নাই। কিন্তু ইতিপূর্বে দুই ক্ষেত্রেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার প্রয়োজনীয় বুদ্ধিমত্তা ও কৌশলের পরিচয় দিতে পারে নাই, সাফল্য দূরস্থান। একাধিক প্রতিবেশী দেশে পূর্ববর্তী ক্ষমতাধর অবস্থানটি খোয়াইতে হইয়াছে। এই পরিস্থিতিতে আফগান-সঙ্কট উদ্বেগ বাড়াইয়াছে। কাবুলে এখন বহুমুখী আন্তর্জাতিক টানাপড়েন ক্রিয়াশীল, অতি কৌশলী পদক্ষেপ করিতে না পারিলে সঙ্কটের অভিঘাত দেশের মাটিতে পৌঁছাইতে পারে। সুতরাং, ইসলামাবাদ তথা রাওয়ালপিন্ডির সহিত কার্যকর আলোচনা এবং কাশ্মীর-সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের ন্যায় বহু বিকল্পের পথ বিবেচনায় রাখিতেই হয়। হামিদ কারজ়াই বর্ণিত ‘সবচেয়ে মূল্যবান সঙ্গী’ যে পূর্বতন জমানায় কাবুলে দূতাবাসটি পর্যন্ত জঙ্গিদের হস্তে সমর্পণ করিতে বাধ্য হইয়াছিল— ইতিহাসের এই শিক্ষা বিস্মৃত হইবার ভুল ভারত নিশ্চয়ই করিবে না।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু স্বার্থের খেলা সঙ্কটকে জটিলতর করিতেছে। সেনা প্রত্যাহার করিলেও কাবুলের পাশে থাকিতে অঙ্গীকারবদ্ধ ওয়াশিংটন। সেই দেশের মাটি সন্ত্রাসবাদীদের মুক্তাঞ্চল হইয়া ওঠা তাহাদের পক্ষে বিপদ। আন্তর্জাতিক ভাবে তালিবানদের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বীকৃতি এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক সহায়তার চাবিকাঠিটিও তাহারা খোয়াইতে চাহিবে না। উক্ত সঙ্কটে রাশিয়ার দীর্ঘ ছায়াও এড়াইবার নহে। তালিবানকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ সংগঠন চিহ্নিত করিয়াও গত মার্চে শান্তি বৈঠকে তাহাদের আমন্ত্রণ জানাইয়াছিল মস্কো। জল মাপিতেছে চিনও। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অবিশ্বাস-দীর্ণ রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ হইলেও, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের সূত্রেই পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ায় পদচিহ্ন রাখিতে তাহারা বিশেষ আগ্রহী। আবার, কাবুল বিমানবন্দরের দায়িত্ব লইতে আমেরিকার সহিত সংলাপ চালাইতেছে তুরস্ক। বহু শক্তির সক্রিয়তায় অভিনীত উচ্চগ্রামের নাট্যের অগ্রগতিতে নয়াদিল্লির নজর রাখা জরুরি। না হইলে দুস্তর পারাবার পার হইবার সূত্র মিলিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Tehrik-i-Taliban US Military Joe Biden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy