—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সমগ্র রাজ্য এক গভীর উদ্বেগ নিয়ে প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে। উদ্বেগ অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের নিয়ে। কার্যত দু’সপ্তাহ অতিক্রান্ত, অনশন চলছে। রাজনীতির এই অস্ত্র সুকঠিন— যিনি প্রয়োগ করেন, তাঁকেই ক্ষতবিক্ষত করে অস্ত্রটি। কোন পরিস্থিতিতে, কোন রাজনীতিবোধে চালিত হয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা অনশনের পথ বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের সামনে ভিন্নতর বিকল্প ছিল কি না, এই প্রশ্নগুলির চেয়ে এখন অনেক গুরুতর হয়ে উঠেছে রাজ্যবাসীর সম্মিলিত প্রার্থনা— এই বার তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করুন। এই অনশন তাঁদের যে রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃশ্যমানতা দিয়েছে, তাকে অস্বীকার করার প্রশ্নই নেই। যে ভঙ্গিতে নাগরিক সমাজ তাঁদের সমর্থনে পথে নেমেছে, আন্দোলনের পক্ষে মতামত গড়ে তুলেছে, ভারতের ইতিহাসে তেমন উদাহরণের সংখ্যা খুব বেশি নয়। জুনিয়র ডাক্তাররা এই মুহূর্তে একটি রাজনৈতিক সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছেন। দলীয় রাজনীতি নয়, প্রকৃতার্থে রাজনৈতিক মুহূর্ত। এই পরিস্থিতিটিকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার, দর কষাকষির কাজে ব্যবহার করাই হবে বিচক্ষণতার পরিচায়ক। মরণপণ জেদ ছেড়ে তাঁরা আলোচনায় ফিরুন। তাঁদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, এখন তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করলে তা কোনও অর্থেই তাঁদের পরাজয় নয়, চাপের মুখে নতিস্বীকার করা নয়। বরং, তা পরিণতমনস্কতার প্রমাণ। এই জোরের জায়গা থেকে তাঁরা আলোচনায় ফিরলে এই কথাটিই প্রমাণ হবে যে, রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থার অসুখ সারাতে তাঁদের সঙ্কল্পটি সত্য— তা কোনও ক্ষুদ্র রাজনৈতিক বা অন্যবিধ স্বার্থ দ্বারা চালিত নয়।
সরকার ও প্রশাসনকে স্বাস্থ্যব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ সংস্কার সাধনে বাধ্য করতে চান তাঁরা। অনশন তুলে নেওয়া মানে সেই দাবি থেকে সরে আসা নয়। বরং, সেই চাপের রাজনীতি থেকে সরে এসে তাঁরা একটি উচ্চতর নৈতিক অবস্থান থেকে দাবি করতে পারেন যে, অতঃপর বল সরকারের কোর্টে— বৃহত্তর নাগরিক সমাজের সামনে সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে যে, ডাক্তারদের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে সরকার কত দূর অগ্রসর হল। প্রয়োজনে প্রতি দশ বা পনেরো দিন অন্তর সাংবাদিক সম্মেলন করে সেই খতিয়ান পেশ করতে হবে। বস্তুত, স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংস্কারের কাজটি একা সরকারের পক্ষে করা অসম্ভব— যাঁরা সেই ব্যবস্থার ভিতরে থেকে কাজ করেন, সেই ডাক্তারদের এই প্রক্রিয়ার শরিক হতেই হবে। সংস্কারের প্রতিটি ধাপেই যাতে চিকিৎসকদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব থাকে, তা নিশ্চিত করতেও সরকারকে বাধ্য করা যায়। সত্যিই যদি সেই সংস্কার সাধিত হয়, তবে তাতে বিপুল মানবসম্পদের প্রয়োজন। ডাক্তাররা যদি মানুষের কথা ভেবেই আন্দোলন করেন, তবে সেই মানুষের স্বার্থেই সুস্থ শরীর-মনে সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করা কর্তব্য।
বৃহত্তর কর্তব্যটি অবশ্য প্রশাসনের, এবং তার শীর্ষ নেত্রীর। গত দু’মাসে মুখ্যমন্ত্রী কত বার আন্দোলনরত ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন, সে কথা ভুলে তাঁকে আরও এক বার সম্পূর্ণ সদিচ্ছার সঙ্গে এই ডাক্তারদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাঁর প্রশাসনের প্রতি যে গভীর অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তাকে অতিক্রম করার দায়ও মুখ্যমন্ত্রীরই। স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রতিটি রন্ধ্রে বাসা বাঁধা দুর্নীতির মূলোচ্ছেদ করার সদিচ্ছা যে তাঁর আছে, সে কথা তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে। মনে রাখতেই হবে যে, জুনিয়র ডাক্তাররা এই সরকারের শত্রুপক্ষ নন, বরং সরকারের কাছে প্রকৃত শাসনের দাবি পেশ করা নাগরিকদের প্রতিনিধি। তাঁদের সঙ্গে শীর্ষনেত্রীর সম্পর্কটি সহযোগিতার হতেই হবে। দু’পক্ষকেই জেদ ছেড়ে সমাধানের পথে এগিয়ে আসতে হবে— গত্যন্তর নেই। রাজ্যের বেহাল জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মোড় ঘোরানোর যে সম্ভাবনা গত দু’মাসে তৈরি হয়েছে, রাজনৈতিক জেদের বেনোজলে তা যাতে ভেসে না যায়, তা নিশ্চিত করা উভয় পক্ষেরই কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy