Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
100 Day Work

গরমিল কেন

সরকারি প্রকল্পের হিসাব দাখিল করা হয়েছে না কি হয়নি, এটা মন্ত্রীদের মতামতের বিষয় নয়, প্রশাসনিক স্বচ্ছতার বিষয়।

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২২ ০৭:০১
Share: Save:

পায়ে ধুলো লাগায় বিরক্ত হবুচন্দ্র রাজা বলেছিলেন, “কেন বা তবে পুষিনু এতগুলা/ উপাধি-ধরা বৈজ্ঞানিক ভৃত্যে?” একশো দিনের কাজের প্রকল্পের হিসাব নিয়ে যে ভাবে রাজ্যবাসীর চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তাতে রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতা অনুসরণে বলা চলে, তা হলে এত জন ‘সিভিল সার্ভেন্ট’ রাখা কেন? জনগণের টাকার হিসাব তো আধিকারিকদের রাখার কথা। স্থান-কাল নির্বিশেষে যোগ-বিয়োগ, ভগ্নাংশ-ত্রৈরাশিকের ফলও এক হওয়ার কথা— যদি না ফিতেয় শুধু ছাব্বিশ ইঞ্চির মাপটাই বেঁচে থাকে। কলকাতায় যে হিসাব মিলে যাচ্ছে, দিল্লি যদি তাতে গরমিল পায়, তার দায় কি রাজ্য আধিকারিকদের উপরে বর্তায় না? কেন তাঁরা এমন হিসাব পেশ করলেন, যা দেখে কেন্দ্র চারটি জেলাকে জরিমানা করল? হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ ও দার্জিলিঙের জন্য যে জরিমানা ধার্য হয়েছে, তার অঙ্ককে বহুগুণ ছাপিয়ে যায় রাজ্যবাসীর লজ্জা। সরকারি আধিকারিকরা হয় হিসাবে গরমিল ধরার ক্ষমতা হারিয়েছেন, না হলে কারচুপি দেখেও চোখ বুজে রয়েছেন। উপরন্তু তাঁদের একাংশ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনও এক পক্ষ নিচ্ছেন, এমন ইঙ্গিতও মিলছে। সংবাদমাধ্যমের কাছে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এক আধিকারিক। এ প্রশ্নের সুরে রাজনৈতিক নেতাদের স্বরলিপির ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু কোনও আধিকারিকের মুখে এ-হেন প্রশ্নকে মান্যতা দেওয়া কঠিন। একশো দিনের কাজের প্রকল্পের রূপায়ণ ও মূল্যায়নের যে বিধি, তাতে প্রতি পদক্ষেপে কাজের প্রমাণ ও খরচের হিসাব পেশ করা আবশ্যক। ব্যক্তিগত মতামতের সুযোগ সেখানে সামান্যই। কেন্দ্রীয় সমীক্ষা পক্ষপাতদুষ্ট মনে হলে তা প্রমাণ করা রাজ্যের পক্ষে কঠিন হত না। অথচ, মুখে প্রতিবাদ করেও কাজের বেলা কেন্দ্রের জরিমানা মেনে নিচ্ছে রাজ্য। ফলে, প্রতিবাদটি নেহাতই জোলো ঠেকছে।

সরকারি প্রকল্পের হিসাব দাখিল করা হয়েছে না কি হয়নি, এটা মন্ত্রীদের মতামতের বিষয় নয়, প্রশাসনিক স্বচ্ছতার বিষয়। তা বজায় রাখতে প্রথাগত অডিট ছাড়াও ‘সামাজিক অডিট’-এর নিয়ম রাখা হয়েছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে। তার নিয়মবিধিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। আক্ষেপ, পশ্চিমবঙ্গে কোনও দিনই সেই সব নিয়ম কার্যকর করা হয়নি। ভুয়া কাজ নিয়ে গ্রামবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে গ্রামসভা ডাকা হয় না। তা সত্ত্বেও বার বার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দুর্নীতি, অপচয়, স্বজনপোষণ, কাটমানি সংগ্রহের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং এ বিষয়ে তাঁর দলীয় কর্তাদের সতর্ক করেছেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। যে পুকুর বা রাস্তার জন্য টাকা খরচের হিসাব দাখিল হয়েছে, কেন্দ্রীয় দল পশ্চিমবঙ্গে এসে সে সব খুঁজে পাননি।

এতে দু’ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাজ্য। এক, এ বছর প্রস্তাবিত তিন হাজার কোটি টাকার ‘লেবার বাজেট’ পাশ করেনি কেন্দ্র। ফলে প্রকল্প আটকে গিয়েছে, গ্রামবাসী কাজ পাচ্ছেন না, বকেয়া মজুরির জন্য বিক্ষোভ চলছে জেলায় জেলায়। জনরোষ সামলাতে রাজ্যের টাকায় একশো দিন কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজকোষ সে অর্থের জোগান দিতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন থাকছেই। দুই, রাস্তা বা জলাধারের মতো স্থায়ী সম্পদের জন্য খরচ হলেও, সে সব বাস্তবে তৈরি না হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে রাজ্যেরই। একটি জলপূর্ণ পুকুর বহু জমিকে দু’ফসলি করতে পারে, কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে যাত্রা কমাতে পারে, অন্যান্য রাজ্যে তা প্রমাণিত। পশ্চিমবঙ্গেও এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রয়েছে। আক্ষেপ, প্রকল্প রূপায়ণে সততা ও স্বচ্ছতার অভাব এমন সমৃদ্ধির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে রাজ্যবাসীকে। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

100 Day Work
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy