Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
BJP

BJP: সর্পিল

ছকটি বেশ স্পষ্ট। বিজেপির কিছু আঞ্চলিক নেতা বাংলাকে ভাঙিয়া টুকরা করিবার দাবি তুলিবেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের মুখ্য নেতারা বলিবেন, আহা, উহা কিছু নহে।

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২১ ০৫:০৯
Share: Save:

ভারতীয় জনতা পার্টির কাজকর্ম দেখিয়া মনে হয়, এই দলটি ইতিহাসের ধুয়া তুলিয়া চলিতে ভালবাসিলেও ইতিহাস জানিবার তিলমাত্র আগ্রহ বা ক্ষমতা তাহার নাই। নতুবা ২০২১ সালে অকস্মাৎ পশ্চিমবঙ্গকে ভাঙিবার মতো বিপজ্জনক কথা এই দলের নেতারা তুলিতেন না। ইতিহাস বলিয়া দিতেছে, বাংলার অতীতে কেবল ১৯৪৭ সালের বিভাগই নাই, ১৯০৫ সালের ঘটনাও রহিয়াছে— যখন প্রশাসনিক অজুহাত দেখাইয়া বিদেশি শাসক বাংলা প্রদেশকে ভাঙিয়া দুই খণ্ড করিতে চাহিবার ফলে সমগ্র বাঙালি জাতির ক্রোধবহ্নি জ্বলিয়া উঠিয়াছিল, এবং এমন লাগাতার আন্দোলন, বিক্ষোভ ও সন্ত্রাস তৈরি হইয়াছিল যে, ১৯১১ সালে মহাপরাক্রমশালী ব্রিটিশ রাজকে সেই বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত রদ করিয়া সাততাড়াতাড়ি পুরাতন ব্যবস্থায় ফিরিতে হইয়াছিল। বাস্তবিক, এইটুকু তথ্য স্কুলপাঠ্য ইতিহাসেরই অন্তর্গত। যাহা স্কুলপাঠ্যের বাহিরে গিয়া জানিতে হয়, তাহা হইল, এই এক বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের ফলে ঔপনিবেশিক শাসক নিজের অজানতে বহু বাঙালি রাজনৈতিক নেতার প্রবল উত্থানের কারণ হইয়াছিলেন, এবং বাংলা প্রদেশটিকে চরমপন্থী হিংসাত্মক রাজনীতির শক্তপোক্ত ঘাঁটি করিয়া তোলেন। অধুনা ভারতবর্ষে জাতীয়তাবাদের ধুয়া ধরিয়া যাঁহারা রাজনীতির খেলা খেলেন, তাঁহারা কি জানেন না যে, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বলিয়া একটি বস্তু বিলক্ষণ অস্তিত্বশীল? জানেন না যে, প্রয়োজনে সেই বাঙালিত্ব সহস্রফণা ধরিয়া বিভেদকামী শাসককে বিস্তর ভুগাইতে সক্ষম?

ছকটি বেশ স্পষ্ট। বিজেপির কিছু আঞ্চলিক নেতা বাংলাকে ভাঙিয়া টুকরা করিবার দাবি তুলিবেন। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের মুখ্য নেতারা বলিবেন, আহা, উহা কিছু নহে। তাহার পর সেই বিভেদকামী নেতাকে বিশেষ গুরুত্ব ও ক্ষমতা দিয়া দিল্লির মন্ত্রিসভায় অভিষিক্ত করা হইবে— তাঁহার কোনও নেতৃত্বগুণের পরিচয় না মিলিতেই। উত্তরবঙ্গে একটি কেন্দ্রশাসিত প্রদেশ তৈরির দাবি তুলিবার পর নেতা জন বার্লার সাম্প্রতিক মন্ত্রিত্ব-অভিষেক: এই সবই আসলে একটি বৃহৎ কু-পরিকল্পনার নানা অংশ। ইঁহারা আগুন ধরাইবার ইন্ধন জুগাইবেন, উঁহারা প্রকাশ্যে ইঁহাদের বকিয়া প্রচ্ছন্নে যৎপরোনাস্তি পিঠ চাপড়াইবেন। নির্বাচনী পরাজয়ের পর পশ্চিমবঙ্গে এই ভাবেই রাজনৈতিক খেলা খেলিতে চাহে বিজেপি, বাংলাভাগের প্রস্তাব হইতে শুরু করিয়া মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাস পর্যন্ত ঘটনাসমূহ তলাইয়া দেখিলে বুঝিতে বিলম্ব হয় না। অন্যান্য অবিজেপি-শাসিত রাজ্যেও (যেমন তামিলনাড়ু) একই ধরনের কাণ্ড ঘটিতেছে। ফলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের বঞ্চনা-ক্ষোভের এই নবগ্রথিত আখ্যানকে বৃহত্তর ভারতীয় রাজনীতির আখ্যান হইতে আলাদা করিয়া দেখিবার কোনও কারণ নাই।

ছকের পিছনে কারণটিও স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের জেলাগুলি ইতিমধ্যেই বিজেপির ঘাঁটিতে পরিণত। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়ি, এই পাঁচটি জেলায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভাগ্যে ৭৮ শতাংশ বিধায়ক জুটিয়াছে। কিন্তু এই সব জেলার জনসংখ্যা কম হওয়ায় বিজেপির পক্ষে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে সুবিধাজনক অবস্থায় যাওয়া সম্ভব হয় নাই— সুতরাং একটি নূতন (বিজেপি-শাসিত) প্রদেশের ভাবনা। সকল প্রদেশেই যেমন হয়, পশ্চিমবঙ্গেও রাজধানী হইতে দূর স্থানগুলিতে নানা প্রকার বঞ্চনা-ক্ষোভের কারণ ঘটিয়া থাকে। সে সকল বঞ্চনা গুরুতর, ক্ষোভও যথার্থ। কিন্তু তাহার জন্য পৃথক প্রদেশের দাবি সঙ্গত নহে। পশ্চিমবঙ্গবাসী জানেন, বিভেদের রাজনীতি লইয়া ছেলেখেলা করিলে তাহা কত সাংঘাতিক দুর্বিপাক টানিয়া আনিতে পারে, কত প্রাণ কত সম্পদ বিনষ্ট করিতে পারে। ঘরে বিভেদসর্প ঢুকাইয়া যাঁহারা রাজনীতি করেন, তাঁহাদের বিষবৎ পরিহার করাই ঘরের লোকের কর্তব্য।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP John Barla Gorkhaland
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy