Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

কেবলই ছবি

কেন সরকার সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করিবে না, শীর্ষ আদালতের এই প্রশ্নের উত্তরে সরকার পক্ষের মুখে কথা জুগাইতেছে না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২১ ০৬:১১
Share: Save:

রাজনীতির বিচিত্র গতিতে অতঃপর পশ্চিমবঙ্গে কোভিড টিকার শংসাপত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি থাকিবে। কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত— আরও স্পষ্ট ভাষায় বলিলে, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের সহিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংঘাত— গত কয়েক সপ্তাহে যে তীব্রতায় পৌঁছাইয়াছে, তাহাতে এই ঘটনাকে অপ্রত্যাশিত বলিলে শব্দটির অপব্যবহার হইবে। কিন্তু, যাহা ভুল, তাহা ভুল। নরেন্দ্র মোদী করিলেও ভুল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করিলেও। বস্তুত, কোভিড টিকার শংসাপত্রে কোনও ব্যক্তিবিশেষের ছবি মুদ্রণের যে অত্যন্ত যুক্তিগ্রাহ্য সমালোচনা এত দিন তৃণমূল কংগ্রেস করিয়াছে, তাহার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সিদ্ধান্তটি আরও বিচিত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা অন্য কোনও মুখ্যমন্ত্রীর দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করিবার পূর্বে অবশ্য স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে, তাঁহাদের সিদ্ধান্তগুলি প্রতিক্রিয়া— এই প্রবণতার সূত্রপাত যাঁহার সিদ্ধান্তে, মূল সমালোচনাও তাঁহারই হওয়া বিধেয়। বিশ্বের কার্যত কোনও দেশে যাহা ঘটে নাই, নরেন্দ্র মোদী তাহাই ঘটাইয়াছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের বিবিধ বিজ্ঞাপনে, প্রচারপত্রে তাঁহার হাস্যমুখ (বা, ক্ষেত্রবিশেষে যথোচিত গম্ভীব মুখ) ছবি প্রকাশিত হইয়াই থাকে। কিন্তু, কোভিড টিকার শংসাপত্র বিজ্ঞাপন নহে। তাহা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, যাহার গুরুত্ব কালক্রমে আরও বাড়িবে বলিয়াই অনুমান করা চলে। অতিমারি দীর্ঘস্থায়ী হইলে এই নথিটি পাসপোর্ট বা আধার কার্ডের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিতে পারে। সেই নথিগুলিতে যেমন প্রধানমন্ত্রীর মুখমণ্ডল নাই, টিকার নথিতেও তাহা না থাকাই বিধেয় ছিল।

এই শংসাপত্রে যে কোনও রাজনৈতিক নেতারই ছবি থাকিতে পারে না, তাহা তর্কাতীত। ইহা কোনও নেতার নিজস্ব রাজনৈতিক প্রকল্প নহে, নিজস্ব উদ্যোগও নহে। গোটা দুনিয়ায় একই উদ্দেশ্যে এই টিকাকরণ মহাযজ্ঞ চলিতেছে। তবুও নরেন্দ্র মোদী টিকার শংসাপত্রে নিজের ছবি ছাপাইয়া দিলেন কেন? এই প্রশ্নের সরলতর উত্তর হইল, প্রচারের লোভ তিনি সংবরণ করিতে পারেন নাই। দেশের ঘরে ঘরে যে শংসাপত্র পৌঁছাইবে, তাহাতে যদি তাঁহার ছবি থাকে, তবে অনেকেই টিকাকরণকে তাঁহার বদান্যতা বলিয়া ভুল করিবেন, এই প্রত্যাশা অবশ্যই একটি কারণ। বস্তুত, এই আশঙ্কাটি ঠেকাইতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ন্যায় বিরোধী নেতারা নিজেদের ছবি ছাপাইবার বাধ্যবাধকতার মুখে দাঁড়াইতেছেন। কিন্তু, ছবি ছাপাইবার বৃহত্তর কারণটি হইল— নিজের ব্যক্তিসত্তা, ব্যক্তি অস্তিত্বকে রাষ্ট্রের সত্তার সহিত অবিচ্ছেদ্য করিয়া দেখাইবার রাজনৈতিক প্রকল্প। তাঁহার সমালোচনা করিলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ দায়ের করা যেমন এই প্রকল্পের একটি প্রকাশ, কোভিড শংসাপত্রের উপর ছবিও তেমনই একটি।

মজার কথা, যে টিকার শংসাপত্রকে তিনি নিজের রাজনৈতিক প্রকল্পের হাতিয়ার বানাইয়াছেন, গোটা দুনিয়ায় কার্যত সব দেশ সেই টিকা সব নাগরিককে বিনামূল্যে দিতেছে। ব্যতিক্রম ভারত, যেখানে নাগরিককে পকেটের টাকা খরচ করিয়া প্রাণদায়ী টিকা লইতে হইতেছে। টিকার অর্থ সংস্থান করিতে রাজ্য সরকারগুলি নাজেহাল হইতেছে। কেন সরকার সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে টিকার ব্যবস্থা করিবে না, শীর্ষ আদালতের এই প্রশ্নের উত্তরে সরকার পক্ষের মুখে কথা জুগাইতেছে না। কোনও অবস্থাতেই কোনও নেতার কোভিড টিকার শংসাপত্রে নিজের ছবি ছাপাইবার অধিকার জন্মে না, কিন্তু যে নেতা নাগরিকদের জন্য টিকার ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকুও করিতে পারেন না, তিনি এই কাজটি করিলে তাহা সব সীমা লঙ্ঘন করিয়া যায়। বিপুল হয়রানির পর কষ্টার্জিত অর্থে টিকা গ্রহণ করিয়া যে শংসাপত্র হাতে পাইবেন, তাহাতে প্রধানমন্ত্রীর মুখচ্ছবি দেখিয়া নাগরিকের মনে প্রীতির সঞ্চার হইবে কি না, এই কথাটিও প্রধানমন্ত্রী ভাবিয়াছেন কি?

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy