কমেছে মূল্যবৃদ্ধির আঁচ। তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান। গত নভেম্বরে প্রথম বার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ৬ শতাংশ সহনসীমার নীচে নেমেছে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি (৫.৮৮ শতাংশ)। এগারো মাসে যা সর্বনিম্ন। এমনকি পাইকারি বাজারেও মূল্যবৃদ্ধির হার একুশ মাসে সর্বনিম্ন ৫.৮৫ শতাংশ দাঁড়িয়েছে গত মাসে। যদিও এখনও চড়া গম, ডাল, দুগ্ধজাত জিনিস এবং ভোজ্যতেলের দাম। পাশাপাশি সরকারের চিন্তা বাড়িয়েছে শিল্পোৎদানের সঙ্কোচন— গত অক্টোবরের তুলনায় এ বছর শিল্পোৎপাদন কমল চার শতাংশ। মূলধনি পণ্য থেকে ভোগ্যপণ্য, সব ক্ষেত্রেই উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে; প্রাথমিক পণ্য ও পরিকাঠামো পণ্যের ক্ষেত্রে অতি সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছে। অর্থাৎ, লক্ষণ স্পষ্ট যে, বৈশ্বিক আর্থিক কাজকর্মের হ্রাসের পাশাপাশি দেশীয় বাজারে সুদের চড়া হার প্রভাব ফেলেছে সামগ্রিক চাহিদার উপরে। রফতানি, যা গত সেপ্টেম্বরেও ভাল হয়েছিল, কমেছে, পাওয়া যাচ্ছে না নতুন করে বিনিয়োগের ইঙ্গিতও।
মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হওয়ায় যেটুকু স্বস্তি মিলল, শিল্পোৎপাদনের সঙ্কোচন তাকে মুছে দিচ্ছে। নভেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির এই হ্রাস হয়েছে মূলত আনাজ ও ফলের দাম কমার কারণে, যা খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অক্টোবরের ৭.০১ শতাংশ থেকে গত মাসে ৪.৬৭ শতাংশে নামিয়ে আনে। শীতকালে আনাজের ফলন বেশি হওয়ায় কমেছে দাম। গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত অত্যধিক বৃষ্টির কারণে ফলন ব্যাহত হয়েছিল, যা এ বছর হয়নি। সমস্যা ছিল না সারের জোগান নিয়েও। যদিও খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানি ছাড়া অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি (কোর ইনফ্লেশন) কিন্তু এখনও ৬ শতাংশের কাছাকাছিই রয়েছে। অর্থাৎ, চড়া মূল্যবৃদ্ধি এখনও ভারতীয় অর্থনীতির পিছু ছাড়েনি। তা ছাড়া, জ্বালানি এবং পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি টাকার দাম পড়ার ফলে আমদানি খরচ বেড়েছে বিভিন্ন সংস্থার। বিশ্ব জুড়ে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত, যার প্রভাব পড়ছে ভারতের উপরেও। আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম ফের পড়লে সমস্যা আরও বাড়বে।
প্রসঙ্গত, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত মে মাস থেকে এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েক বার রেপো রেট বাড়িয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। ৪ শতাংশ থেকে তা এখন ৬.২৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পাখির চোখ যে এখন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, তা তাদের নীতি সংক্রান্ত সাম্প্রতিকতম বিবৃতি থেকেই স্পষ্ট। কিন্তু এর জন্য কি আরও এক বার সুদের হার বাড়াবে তারা? সম্ভাবনা থাকছেই। যদিও তা এখন করা উচিত নয় বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের মনিটারি পলিসি কমিটির এক সদস্য। মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি এখনও সম্পূর্ণ কেটে যায়নি বটে, কিন্তু সর্বশক্তিতে সেই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে অর্থব্যবস্থায় তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সুদের হার বাড়ালে বিনিয়োগ ও জাতীয় আয়ে তার প্রভাব পড়বে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে রাজস্বনীতির উপরে জোর দিতে হবে। বাজার থেকে ঋণ কম নিয়ে সরকারি খরচ বিনিয়োগে ব্যয় করতে হবে। একই সঙ্গে ভোজ্যতেলে আমদানি কর হ্রাসের মতো রাজস্বনীতিও গ্রহণ করা প্রয়োজনীয় হতে পারে। সামনের পথ কঠিন। ফলে এগোতে হবে বুঝেশুনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy