Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Population Explosion

যৌবন-সম্পদ

বিশ্বে সর্বাধিক জনবহুল দেশের পরিচিতি চিন থেকে ভারতে আসবে ২০২৫ সালের আশেপাশে, বহু আগেই তা জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২২ ০৫:১২
Share: Save:

আগামী বছরেই ভারতের জনসংখ্যা ছাপিয়ে যাবে চিনকে। এ সংবাদ অপ্রত্যাশিত নয়— বিশ্বে সর্বাধিক জনবহুল দেশের পরিচিতি চিন থেকে ভারতে আসবে ২০২৫ সালের আশেপাশে, বহু আগেই তা জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এ বছর বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস (১১ জুলাই) উপলক্ষে প্রকাশিত রিপোর্টে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, সম্ভবত ২০২৩ সালে চিনকে অতিক্রম করে ভারত নেবে জনসংখ্যায় শীর্ষস্থান, বিশ্বের আটশো কোটি মানুষের সতেরো শতাংশই হবেন ভারতীয়। ২০৫০ সালে চিনের চাইতে তিরিশ কোটি বেশি লোক বাস করবে ভারতে। বৈজ্ঞানিক এবং প্রশাসনিক দৃষ্টিতে এই তথ্য-পরিসংখ্যানে বিস্ময়ের কিছু নেই, উদ্বেগেরও কারণ নেই। ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণ’-এর তত্ত্ব বহু আগেই খারিজ হয়ে গিয়েছে। এ কথা প্রমাণিত যে, ভারত তথা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে দারিদ্র, ক্ষুধা, অপুষ্টির প্রধান কারণ ভ্রান্ত প্রশাসনিক নীতি, জনস্বার্থ-বিমুখ রাজনীতি। যেখানেই সরকারি নীতি-প্রকল্প মানব উন্নয়ন ঘটাতে পেরেছে, সেখানেই দ্রুত কমেছে জন্মহার। কেরলে নব্বইয়ের দশকেই জন্মহার ছিল উন্নত দেশের সমান। সেই লক্ষ্যে এখন পৌঁছে গিয়েছে দেশের অধিকাংশ রাজ্য। পঞ্চম জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (২০১৯-২০)-র ফলে প্রকাশ, সমগ্র ভারতেই গড় সন্তান সংখ্যা দ্রুত কমে এখন দুইয়ে দাঁড়িয়েছে। যে রাজ্যগুলি এখনও সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি, সেগুলির মধ্যে প্রধান উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ঝাড়খণ্ড— মানব উন্নয়ন, বিশেষত নারী উন্নয়নে সে রাজ্যগুলির অবস্থান নীচের দিকে। দেখা গিয়েছে, নারীশিক্ষা বাড়ানো, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, এই দু’টি উদ্যোগ জন্মহার কমানোয় সব চাইতে কার্যকর।

আক্ষেপ, রাজনীতি এই বহু-পরীক্ষিত সত্যকে স্বীকার করতে চায় না। তাই জনসংখ্যা দিবসের ঘোষণার পরেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ জনসংখ্যায় ‘ভারসাম্যহীনতা’ আশঙ্কা করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনও কোনও সম্প্রদায়ের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হবে, আর ‘মূলনিবাসী’-দের জন্মহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হবে, এটা অনুচিত। তাঁর দল বিজেপি, এবং সঙ্ঘ পরিবার বরাবরই ভারতে মুসলিম জনসংখ্যার আধিক্য, হিন্দুদের সংখ্যালঘু হওয়ার আশঙ্কার কথা প্রচার করেছে। আর, বিজ্ঞানীরা বার বারই এই তত্ত্ব খারিজ করেছেন। যে কোনও সম্প্রদায়ের মতো, মুসলিমদের ক্ষেত্রেও অনুন্নয়নই অধিক জন্মহারের কারণ, এ কথা প্রমাণিত। জনকল্যাণ, জনস্বাস্থ্যের নীতিতে ধর্ম, শ্রেণি, বর্ণের কোনও স্থান নেই। কে কত সন্তান চাইবেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, সরকারের কাজ তাকে সম্মান করা। ভারতে নারী-পুরুষের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণের উপায়ের চাহিদা যথেষ্ট। সুষ্ঠু ভাবে জোগান দেওয়াই সরকারের কর্তব্য।

সেই সঙ্গে, জোর করে নিবীর্যকরণ বা বন্ধ্যাকরণ করানোর চেষ্টাতেও যে হিতে বিপরীত হয়, ইতিহাস সে সাক্ষ্য দিচ্ছে। চিনের পীড়নমূলক ‘এক সন্তান নীতি’-র দৃষ্টান্তের সপ্রশংস উল্লেখ করেন অনেকে। অথচ, চিন যে সত্তর-আশির দশকেই সাক্ষরতা, শিশুমৃত্যুহার, গড় আয়ুতে বহু এগিয়ে গিয়েছিল ভারতের থেকে, তা রয়ে যায় আড়ালে। একবিংশের বিশ্বেও রাষ্ট্র জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে অকারণ উৎপীড়ন করবে কেন? যে ‘ভারসাম্য’ চাইছেন আদিত্যনাথ, তা থাকা দরকার ভারতের নেতা-মন্ত্রীদের কথায় ও কাজে। সর্বোপরি, জনসংখ্যাকে ‘বোঝা’ বলে মনে করার অভ্যাসটাও ছাড়া দরকার। বার্ধক্যের ভারে ন্যুব্জ অধিকাংশ ধনী দেশগুলি, চিনেও মধ্যবয়সি বাড়ছে। ভারতে এখনও যৌবনই প্রধান। এই বিপুল মানবসম্পদকে সুস্থ, শিক্ষিত, কর্মদক্ষ করে তুলতে পারলে অতুলনীয় সম্পদ সৃষ্টি হবে দেশে। আগামী দুই-তিন দশক সেই দুর্লভ সুযোগ দেশের সামনে। তার সদ্ব্যবহারই হোক সরকার তথা দেশবাসীর লক্ষ্য।

অন্য বিষয়গুলি:

Population Explosion India population
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy