ফাইল চিত্র।
সম্পূর্ণ প্লাস্টিক-মুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ হয়তো এত দ্রুত সম্ভব নয়। কিন্তু প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাস করার ক্ষেত্রে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল ১ জুলাই। ওই দিন থেকেই গোটা দেশে ‘এক বার ব্যবহারযোগ্য’ প্লাস্টিকের বস্তুর উৎপাদন, আমদানি, মজুত, সরবরাহ, বিক্রি এবং ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক ব্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল গত বছরেই। এই বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিন থেকে ১২০ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে। অর্থাৎ, প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য এই দেশে উৎপন্ন হয়, তা হ্রাস করার ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়ারই পরিকল্পনা।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তে এত বিলম্ব হল কেন? বহু পূর্বেই প্রমাণিত যে, প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে সার্বিক ভাবে পরিবেশ দূষণের সম্পর্কটি ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত। ২০২১ সালের এক অস্ট্রেলীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী, গোটা পৃথিবীতে উৎপন্ন প্লাস্টিকের এক-তৃতীয়াংশই ‘এক বার ব্যবহারযোগ্য’। এর ৯৮ শতাংশই প্রস্তুত হয় জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে, বায়ুদূষণ কমাতে যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করার কথা বহু-আলোচিত। অবিলম্বে যদি এই প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তবে ভবিষ্যতে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম উৎস হয়ে উঠবে এটি। অন্য সমস্যাটি হল, এই ধরনের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বহুলাংশে অ-সংগৃহীত থেকে যায়। রাস্তার ধারে, ফাঁকা জমিতে দিনের পর দিন জমতে থাকে পরিবেশের সঙ্গে মিশে না গিয়ে। অতঃপর তা সূক্ষ্ম কণায় মিশে গিয়ে খাবারের সঙ্গে মনুষ্যশরীরে প্রবেশ করে বিপদ ঘটায়। পরিসংখ্যান বলছে, গোটা বিশ্বে এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে ভারতের স্থান প্রথম একশোর মধ্যে। সুতরাং, সতর্ক হতে যে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল, সেটাই বিস্ময়ের।
এবং তার পরও এই নিষেধাজ্ঞার সাফল্য নিয়েও সংশয় থেকে যায়। অভিজ্ঞতা বলে যে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার ঢাক পেটাতে যতটা আন্তরিক, প্রতিশ্রুতি পালনে তত নয়। প্রধানমন্ত্রী দূষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দেশের ভিতরেই ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’ কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়। প্লাস্টিকের ক্ষেত্রেও সেই আশঙ্কাটি অগ্রাহ্য করার মতো নয়। অবশ্য রাজ্য সরকারগুলির আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ। গত বছর আরোপিত ৭৫ মাইক্রনের কম ঘনত্বযুক্ত প্লাস্টিক ব্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর ভাবে পালনে এই বছরের ১ জুলাই থেকে সরকার তৎপর হয়েছে। এবং প্রথম দিনেও কলকাতার বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ প্লাস্টিকের ব্যবহার চোখে পড়েছে। অথচ, রাজনৈতিক বিরোধিতা ভুলে পরিবেশ দূষণের প্রশ্নে কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্য সরকারগুলিও সম্মিলিত উদ্যোগ করলে এত দিনে ভারত একটি সম্মানজনক স্থানে থাকত। তা হয়নি। সুতরাং, ১ জুলাই ভারতকে সার্বিক ভাবে দূষণ রোধের প্রশ্নে সত্যিই কিছুটা এগিয়ে দেবে, না কি কেন্দ্রের আরও একটি অন্তঃসারশূন্য ‘উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে, সংশয় মুছল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy