প্রতীকী ছবি।
জানুয়ারি থেকে মার্চ, এই তিন মাসে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার কমে দাঁড়াল ৪.১ শতাংশে। এই ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার যে খানিক কমবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। জানুয়ারিতে ওমিক্রন সংক্রমণের ফলে কোভিডের তৃতীয় প্রবাহ নিয়ে যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, এবং তার ফলে অর্থব্যবস্থায় যে নতুন করে কিছু কড়াকড়ি হয়েছিল, আর্থিক বৃদ্ধির হারে তার প্রভাব পড়েছে। ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস গোটা বছরের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ০.১ শতাংশ-বিন্দু কমিয়ে ৮.৭ শতাংশে এনেছে। স্মরণে রাখতে হবে যে, ২০২১-২২ অর্থবর্ষের এই সম্ভাব্য আর্থিক বৃদ্ধির হারটি তার আগের বছরের সাড়ে ছয় শতাংশ সঙ্কোচনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। ফলে, ৮.৭ শতাংশ বৃদ্ধিকে চমকপ্রদ বলা মুশকিল। এই হারটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বদলে বরং দেখা প্রয়োজন, প্রাক্-কোভিড স্তর থেকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ কতখানি বাড়ল। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ভারতে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের প্রকৃত পরিমাণ, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির প্রভাব বাদ দিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ, দাঁড়িয়েছে ১৪৭ লক্ষ কোটি টাকায়। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে, অর্থাৎ অর্থব্যবস্থায় অতিমারির আঁচ লাগার আগে, এই উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৪৫ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ভারতের বর্তমান অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে যৎসামান্য, দুই বছরে দেড় শতাংশের কাছাকাছি। স্পষ্টতই, অতিমারির ফলে অর্থব্যবস্থা যতখানি সঙ্কুচিত হয়েছিল, সেই ক্ষতিটুকু পূরণ করা গিয়েছে মাত্র— ভারতীয় অর্থব্যবস্থার ‘পুনরুত্থান’ এইটুকুই। এবং, একই সঙ্গে এই কথাটিও মনে রাখা প্রয়োজন যে, অতিমারির আঁচ লাগার আগেই ভারতীয় অর্থব্যবস্থার গতিভঙ্গ হয়েছিল। সরকারি পরিসংখ্যানই সেই কথা বলছে। অতএব, দশককাল পূর্বে ভারত আর্থিক বৃদ্ধির যে কক্ষপথে ছিল, তার থেকে চ্যুতি প্রায় অসেতুসম্ভব। বহু দিন যাবৎ প্রধানমন্ত্রী আর পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলার আয়তনের অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলেন না। এই মুহূর্তে স্বীকার করা প্রয়োজন যে, অতিমারি যদি না-ও ঘটত, তবুও ভারতের পক্ষে পাঁচ বছরের মধ্যে সেই মাপে পৌঁছনো সম্ভব ছিল না। অর্থব্যবস্থার পরিচালকরাই সেই উপায় রাখেননি।
ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাকে ভাঙলে ভারতের বর্তমান বিপদের ছবিটি আরও স্পষ্ট হয়। রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের পরিমাণ খানিক কমেছে— ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ ত্রৈমাসিকে এই ব্যয়ের বৃদ্ধির হার ছিল ১১.৩ শতাংশ, এই বছর তা দাঁড়িয়েছে ১০.৭ শতাংশে। তবুও, বেসরকারি বিনিয়োগ বা ব্যক্তিগত ভোগব্যয়ের বৃদ্ধির হারের তুলনায় তা অনেকখানি বেশি। অন্য দিকে, বাণিজ্য খাতে ঘাটতির পরিমাণ নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। টাকার বিনিময়মূল্য ক্রমহ্রাসমান হওয়ায়, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও পণ্যের বিপুল মূল্যবৃদ্ধি ঘটায় এক দিকে আমদানির খরচ বেড়েছে, কিন্তু রফতানি তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। অর্থাৎ, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যে চারটি ইঞ্জিনের জোরে চলে, তার মধ্যে তিনটি এখনও নড়বড়ে, এবং চতুর্থটিও বেগ কমাতে বাধ্য হচ্ছে। ব্যক্তিগত ভোগব্যয় ও বেসরকারি লগ্নির বৃদ্ধির হার স্তিমিত হওয়ার অর্থ, অদূর ভবিষ্যতে পুনরুত্থানের আশা কেউ তেমন দেখছেন না। কিন্তু, এর পরেও ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ভাল হওয়ারই সম্ভাবনা। কারণ, তার হিসাব হবে ২০২১-২২’এর প্রথম ত্রৈমাসিকের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিপ্রেক্ষিতে, যা অতিমারির কারণে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কম ছিল। পরিভাষায় একে বলা হয় লো বেস এফেক্ট। সেই কারণেই, আগামী কয়েকটি ত্রৈমাসিকের বৃদ্ধির হার নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কোভিড-পূর্ব স্তরের সঙ্গে তুলনা করা প্রয়োজন। প্রকৃত ছবিটি তাতেই ধরা পড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy