Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Indian Rupee

ভারসাম্য

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ডলার বিক্রি করে টাকার দামের পতন ঠেকাবে, স্বভাবতই এটা স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছু হতে পারে না।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২২ ০৫:১৩
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে ডলারের দাম চল্লিশ টাকায় নামিয়ে আনবেন। তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের আট বছর পার করে এক ডলারের দাম ছুঁল আশি টাকা। কিন্তু, এখন সময় তাঁর প্রতি রাজনৈতিক বিদ্রুপ করার নয়— কী ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়, এই মুহূর্তে সে কথা চিন্তা করতে হবে। ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ডলারের প্রবল মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে ইতিমধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ পরিমাণ ডলার নিজেদের ভান্ডার থেকে বাজারে ছেড়েছে। এই নীতিটির মেয়াদ নিয়ে সাবধান হতে হবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ডলারের ভান্ডার যথেষ্ট গভীর— এই মাসের এক তারিখ ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল যে, তাদের ভান্ডারে প্রায় ষাট হাজার কোটি ডলার মজুত আছে। এই পরিমাণ ডলারে আগামী দশ মাসের আমদানির দাম মেটানো সম্ভব, কাজেই চিন্তার কারণ নেই। হাতে আটমাসের আমদানির দাম মেটানোর মতো ডলার মজুত না থাকলে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়তে পারে, তার আগে নয়। সমস্যা হল, ডলারের বর্ধিত দামের পথ বেয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যবৃদ্ধিও ভারতে ঢুকছে। পেট্রোলিয়ামের দাম ফের ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, অন্তর্বর্তী পণ্যেরও দাম বাড়ছে। সেই বেশি দামি পণ্য ডলারের চড়া দামের কারণে আরও দামি হয়ে ভারতের বাজারে পৌঁছচ্ছে। দেশের বাজারে পাইকারি মূল্যসূচকের বৃদ্ধির হার পনেরো শতাংশের বেশি। ডলারবাহিত মূল্যস্ফীতি বাজারকে আরও অগ্নিমূল্য করবে বলেই আশঙ্কা।

ঘটনা হল, ডলারের সাপেক্ষে শুধু টাকার দামই নিম্নমুখী নয়, দুনিয়ার প্রায় সব মুদ্রাই বেহাল। এ বছরের শুরু থেকে সাত মাসে জাপানের মুদ্রা ইয়েনের দাম ডলারের সাপেক্ষে প্রায় কুড়ি শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সেই তুলনায় একই সময়কালে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়েছে সাত শতাংশ। তবে, জাপানের সঙ্গে না করে এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান মুদ্রার সঙ্গে ভারতীয় টাকার তুলনা করলে ছবিটা আর একটু স্পষ্ট হবে। একটি সূচক জানাচ্ছে, ২০২২ সালে এশিয়ার সব মুদ্রার দাম ডলারের তুলনায় গড়ে কমেছে সাড়ে ছয় শতাংশ, অর্থাৎ টাকার পতন তুলনায় বেশি। চিনের মুদ্রা ইউয়ানের সাপেক্ষে এই সময়কালে টাকার দাম কমেছে ১.৩ শতাংশ। এখানে দু’টি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন— এক, ভারত যে হেতু রফতানির তুলনায় আমদানি বেশি করে, ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে টাকার দাম কমলে ভারতের সমস্যা প্রবল; এবং দুই, এই পতনের পিছনে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দুর্বলতা প্রকট। কেন্দ্রীর সরকারও ইদানীং আর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’-র কথা তেমন উল্লেখ করে না— বিশ্ববাজারকে ধরার চেষ্টার সম্ভবত সলিলসমাধি ঘটেছে। সাঙাততন্ত্রের পুষ্টিবিধান করার কুফল কখন কোন পথে ফিরে আসে, আঁচ করা দুষ্কর।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ডলার বিক্রি করে টাকার দামের পতন ঠেকাবে, স্বভাবতই এটা স্বল্পমেয়াদি ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছু হতে পারে না। মাঝারি মেয়াদের কথা ভাবলে, রেপো রেট বাড়ানোর মাধ্যমে সুদের হার বাড়িয়ে টাকার দামের অবাধ পতন ঠেকানো যেতে পারে। অর্থব্যবস্থায় সুদের হার বাড়লে বিদেশি লগ্নি পুঁজি আকৃষ্ট হয়। ফলে, দেশে ডলার ঢোকে, টাকার দামও বাড়ে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও এটি অতিব্যবহৃত নীতি। কিন্তু, মুশকিল হল, সুদের হার বাড়লে বিনিয়োগের ব্যয়ও বাড়ে, ব্যবসার লাভযোগ্যতা কমে— তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে অভ্যন্তরীণ বেসরকারি লগ্নির উপর। তা আবার এক দিকে প্রভাব ফেলে কর্মসংস্থানের উপর, অন্য দিকে লগ্নি হ্রাস ও কর্মসংস্থান হ্রাসের ফলে ভোগব্যয় হ্রাস, এই দুইয়ের প্রভাব পড়ে জিডিপি-র উপর। ফলে, নীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখা এই মুহূর্তে অতি গুরুত্বপূর্ণ। এক দিকে টাকার দাম বজায় রাখা, অন্য দিকে বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে অব্যাহত রাখা— রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে দু’টি কাজই করতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Rupee US dollar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy