Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Environment

সবার নীচে

ভারত পরিবেশ রক্ষায় ভাল কাজ করছে, খারাপ কাজের প্রমাণ অবৈজ্ঞানিক— এমন দাবিও কত দূর বাস্তবসম্মত, প্রশ্ন থেকে যায়।

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২২ ০৬:২৬
Share: Save:

পরিবেশের স্বাস্থ্যরক্ষায় কোন দেশ কেমন কাজ করছে, সেই সংক্রান্ত মূল্যায়নের উপর ভিত্তি করে একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে ইয়েল সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল অ্যান্ড পলিসি এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি আর্থ ইনস্টিটিউট। সেই পরীক্ষায় চূড়ান্ত ভাবে অকৃতকার্য ভারত। তালিকায় একশো আশিটি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান সর্বনিম্ন। স্বভাবতই এমন মূল্যায়নে চরম অসন্তুষ্ট ভারত। সম্প্রতি বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্র এনভায়রনমেন্টাল পারফরম্যান্স ইনডেক্স-এর তালিকাটি নস্যাৎ করেছে। দাবি করেছে, এই তালিকা তৈরি হয়েছে অবৈজ্ঞানিক ভাবে এবং অনুমানের উপর ভিত্তি করে। এই তালিকায় দেখানো হয়েছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ভারত পরিবেশ দূষণ রুখতেও ব্যর্থ। তালিকার এ-হেন বিশ্লেষণই কেন্দ্রের আপত্তির মূল কারণ।

কিন্তু ভারত পরিবেশ রক্ষায় ভাল কাজ করছে, খারাপ কাজের প্রমাণ অবৈজ্ঞানিক— এমন দাবিও কত দূর বাস্তবসম্মত, প্রশ্ন থেকে যায়। পরিবেশের স্বাস্থ্যরক্ষায় দেশের অরণ্যভূমি রক্ষা করা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, তার জন্য দেশে অরণ্য এবং অরণ্যের গুণমান বৃদ্ধির চেষ্টা করা উচিত। ফরেস্ট সার্ভে অব ইন্ডিয়া-র রিপোর্টগুলি দেখলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, ভারত এই ক্ষেত্রে ভালই ফল করছে। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে অরণ্য আচ্ছাদন ২০১৯ সালের তুলনায় ১৫৪০ বর্গকিলোমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা এই রিপোর্টের সঙ্গে একমত নন। কারণ, বনভূমির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি বর্তমানে অবলম্বন করা হচ্ছে, তা মূলত উন্নততর প্রযুক্তিনির্ভর। এতে মাঠে নেমে এলাকা যাচাইয়ের সুযোগ কম। ফলে, এমন অনেক এলাকাকেই বন হিসাবে দেখানো হচ্ছে, যা বাস্তবে হয়তো খুব ছোট এলাকার সবুজ জমি। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে চা-বাগান, নারকেল বাগান, বৃক্ষ-আচ্ছাদিত পথকেও ‘অরণ্য’ তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত ‘গ্রাউন্ড ট্রুথিং’ ছাড়া এই পরিসংখ্যান গ্রহণযোগ্য নয়।

বরং বিভিন্ন সমীক্ষায় প্রকাশ, ভারতে গভীর বনভূমির পরিমাণ ক্রমশ কমছে। এবং এই অরণ্য ধ্বংসের পরিণাম হিসেবেই বাতাসে বাড়ছে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ, যার উল্লেখ ইপিআই-তেও করা হয়েছে। কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, বন নষ্ট করার ক্ষতিপূরণ হিসাবে বনের পরিধির বাইরে সমপরিমাণ জমিতে গাছ লাগাতে হবে। অথচ, যে গাছ লাগানো হচ্ছে, যেমন— ইউক্যালিপটাস, অ্যাকাসিয়া প্রভৃতি, সেগুলি বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেও কার্বন শোষণের ক্ষমতা মূল বনভূমির তুলনায় যথেষ্ট কম। উপরন্তু, এগুলি ভূগর্ভের জলস্তর হ্রাস করে। ভারতে ভাল বনভূমি ধ্বংসের অন্যতম কারণ, এই ধরনের বনভূমির তলদেশ খনিজ পদার্থপূর্ণ। সেই কারণেই হয়তো উন্নয়নের এমন তাড়না। শুধুমাত্র ২০১৭-১৮ সালেই প্রায় পাঁচশো বর্গ কিমি বনভূমি নষ্ট হয়েছে উন্নয়নের নামে। এবং উন্নয়নের প্রবল তাগিদেই অসমের শিলচরে গ্রিনফিল্ড এয়ারপোর্ট তৈরির নামে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর পূর্বেই ৩০ লক্ষ চা গাছ উপড়ে ফেলেছে জেলা প্রশাসন। সুতরাং, শুধুমাত্র ঢক্কানিনাদে কাজ হবে না। পরিবেশ রক্ষায় ভারতের অবদান যে তলানিতে, তা প্রমাণের জন্য ইপিআই রিপোর্ট অবধিও যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Environment India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy