Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Indian Economy

পতন (ও মূর্ছা?)

টাকার এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় মূল্যের পতন অব্যাহত। এক ডলারের দাম আশি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, সেই আশঙ্কা এখন তীব্র।

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২২ ০৫:২২
Share: Save:

টাকার এক্সচেঞ্জ রেট বা বিনিময় মূল্যের পতন অব্যাহত। এক ডলারের দাম আশি টাকা ছাড়িয়ে যাবে, সেই আশঙ্কা এখন তীব্র। বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম যে ভাবে স্থির হয়, সেই চাহিদা আর জোগানের অঙ্ক মেনেই বিদেশি মুদ্রার সাপেক্ষে টাকার দাম (বা, টাকার সাপেক্ষে বিদেশি মুদ্রার দাম) নির্ধারিত হয়। বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন হয় বৈদেশিক বাণিজ্যের কাজে। বিদেশ থেকে পণ্য বা পরিষেবা কিনতে হলে টাকায় সেই দাম মেটানো যায় না, তার জন্য সেই দেশের মুদ্রা (অথবা, আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলার) প্রয়োজন হয়। আবার, ভারত থেকে অন্য কোনও দেশ কোনও পণ্য বা পরিষেবা কিনলে সেই মূল্য চোকাতে হয় টাকায়। অর্থাৎ, এই লেনদেনের জন্য বিদেশি মুদ্রা কেনা-বেচা চলে। পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, ভারতীয় পণ্য ও পরিষেবার দাম মেটানোর জন্য বাজারে যত টাকার চাহিদা, তার তুলনায় বিদেশি পণ্য ও পরিষেবার দাম মেটাতে ভারতে ডলারের চাহিদা বেশি, তা হলে স্বভাবতই ডলারের দাম বাড়বে, অর্থাৎ টাকার দাম কমবে। তা হলে, ডলারের অঙ্কে যে সব পণ্য ও পরিষেবা কিনতে হয়— অর্থাৎ, বিদেশ থেকে ভারত যা আমদানি করে— তার খরচ বাড়বে। অন্য দিকে, সুবিধা হবে ভারতীয় রফতানিকারকদের— টাকার অঙ্কে তাঁদের পণ্য বা পরিষেবার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম কমার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমবে। স্মরণে রাখা জরুরি যে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক খানিকটা হলেও টাকার দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে— ডলারের দাম বাড়লে নিজস্ব তহবিল থেকে বাজারে ডলার বিক্রি করে; দাম কমলে বাজার থেকে ডলার কিনে।

এই মুহূর্তে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের পতনের বহুবিধ কারণ থাকলেও প্রধান কারণ দু’টি। এক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পেট্রোলিয়াম থেকে রকমারি পণ্য, মহার্ঘ হয়েছে সবই। অর্থাৎ, ডলারের অঙ্কে সেই পণ্যগুলির দাম বেড়েছে। বহু ক্ষেত্রেই আমদানির পরিমাণ যে হেতু অন্তত স্বল্পমেয়াদে কমানো অসম্ভব, ফলে আমদানি খাতে ব্যয় বেড়েছে। শুধু ভারতের নয়, সব দেশেরই। তাতে ডলার মহার্ঘ হয়েছে, উল্টো দিকে টাকার দাম পড়েছে। দ্বিতীয় কারণটি হল, আমেরিকার ফেডারাল রিজ়ার্ভ সুদের হার বাড়িয়েছে। গোটা দুনিয়াতেই আর্থিক ক্ষেত্রে তুমুল অনিশ্চয়তা চলছে— এই অবস্থায় লগ্নিকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করেন। সুদের হার বাড়ায় আমেরিকান ডলারে সে দেশে টাকা জমা রাখা লাভজনক, নিরাপদতর। ফলে, ভারতের মতো বাজার থেকে লগ্নি তুলে নেওয়ার ঢল পড়েছে। গোটা এশিয়াতেই স্থানীয় মুদ্রা দুর্বল হয়েছে এখন— চিনের ইউয়ান, জাপানের ইয়েন, সবেরই পতন ঘটছে। ভারতীয় টাকাও ব্যতিক্রম হয়নি।

টাকার বিনিময় মূল্য কমার প্রভাব সরাসরি পড়ে সাধারণ মানুষের উপর। পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়া মানেই এক দিকে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব, অন্য দিকে পণ্য পরিবহণের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির পরোক্ষ প্রভাব। এ ছাড়াও বহু পণ্য নিয়মিত আমদানি করতে হয়— তার কিছু সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছয়, কিছু অন্তর্বর্তী পণ্য। সেগুলিরও দাম বাড়বে। ভারতের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয়, আবশ্যিক পণ্যের দাম তুমুল হারে বাড়ছে— পাইকারি মূল্যসূচকের বৃদ্ধির হার দীর্ঘ দিন ধরে দুই অঙ্কের ঘরে রয়েছে। টাকার দাম কমায় সেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলেই আশঙ্কা। অন্য দিকে, এমন কিছু পণ্যও রয়েছে, যেখানে আমদানি খাতে বর্ধিত খরচ তৎক্ষণাৎ দাম বাড়িয়ে ক্রেতার কাছে চালান করা যায় না। এই স্ট্যাগফ্লেশনের পরিস্থিতিতে পণ্যমূল্য বাড়ালে বিক্রি কমার সম্ভাবনাও যথেষ্ট। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাজারে ডলার ছাড়ছে, ব্যাঙ্কের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারও দ্রুত কমছে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামলানো যাবে কি না, সংশয় থাকছেই। টাকার বিনিময় মূল্য আপাতত গভীর উদ্বেগের কারণ।

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Economy indian currency
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy