জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজ়ো আবে-র অকালমৃত্যুতে গোটা বিশ্ব এমন এক জন রাষ্ট্রনায়ককে হারাল যিনি চিরকাল তাঁর দেশের বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী শান্তিবাদী বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা করে এসেছেন। সর্বাপেক্ষা বেশি সময়ের জন্য সে দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন আবের লক্ষ্যই ছিল দেশকে তার পূর্ব মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া। ২০০৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমৃত্যু জাপানের রাজনীতিতে তাঁর উপস্থিতি প্রগাঢ় ভাবে অনুভূত হয়েছে। ২০১২ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য তাঁর হাতে যখন দেশের ভার পড়ে, তখন জাপান আর্থিক মন্দার কবলে। তার আগের বছরই বিধ্বংসী ভূমিকম্প এবং সুনামিতে তছনছ হয়ে গিয়েছে দেশ। এমতাবস্থায় দেশের রাশ হাতে নিয়ে জাপানের রাজনৈতিক তথা আর্থিক স্থায়িত্ব আনতে সাহায্য করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যে জাপান দেশের অস্ত্রভান্ডার বাড়ানোর দিকে নজর দেয়নি, আবের নেতৃত্বে সেই জাপানই সুরক্ষাখাতে খরচ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রশমনে দেশের সংবিধানে বদল আনার স্পর্ধাও দেখিয়েছিলেন আবে। শুধু নিজের দেশেই নয়, সমগ্র মহাদেশ এবং আফ্রিকাতেও তাঁর ‘আবেনমিক্স’ নামে খ্যাত আর্থিক নীতি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এ-হেন দূরদর্শী এক রাষ্ট্রনায়কের হত্যা শুধু মর্মান্তিকই নয়, বিশেষ ভাবে উদ্বেগজনক। কারণ, জাপানের মতো দেশে গত নব্বই বছরে কোনও রাজনৈতিক নেতার হত্যা হতে দেখা যায়নি, রাজনৈতিক হিংসা তো দূর অস্ত। সান্ত্বনা এটাই যে, এমন সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দেশের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের নির্বাচনে জিতল তাঁরই দল লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-র জোট।
আবে-র কাছে ভারত এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, তাঁকে ভারতের ‘বিশেষ বন্ধু’ বলে আখ্যা দিলে খুব ভুল বলা হবে না। একবিংশ শতাব্দীতে তাঁর হাত ধরেই জাপান-ভারত সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। ২০০৭ সালে ভারতীয় সংসদের যৌথ অধিবেশনে বক্তৃতা দেন আবে। সেখানেই তিনি ‘দুই সাগরের সঙ্গমস্থল’, যা অধুনা ইন্দো-প্যাসিফিক নামে পরিচিত, তার ধারণাটি দিয়েছিলেন। তা ছাড়া ওই বক্তৃতাতেই তিনি আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াকে সঙ্গে নিয়ে চার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কূটনৈতিক জোটের কথা উল্লেখ করেন, যা আজ ‘কোয়াড্রিল্যাটারাল সিকিয়োরিটি ডায়ালগ’ বা ‘কোয়াড’ নামে পরিচিত, যার জন্ম হয় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে। এই পদক্ষেপের ফলে এক দিকে যেমন ভারতের সামনে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র তৈরি হয়, তেমনই অন্য দিকে এশিয়ায় চিনের একতরফা বাহুবলের বিরুদ্ধে অপর এক প্রতিপক্ষের জন্ম দিতে সাহায্য করেন আবে। তাঁর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সুসম্পর্কের ফলে দু’দেশের বন্ধন দৃঢ় হয় এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের গুরুত্ব বাড়ে। এক সময় ভারতকে পারমাণবিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় জাপানের যে বাধা ছিল, আবে-র নেতৃত্বেই তা সরে যায়। চিনের সঙ্গে সীমান্তবিবাদেও জাপানকে পাশে পেয়েছে ভারত। ক্ষমতায় না থাকাকালীনও শিনজ়ো আবেকে ভারত-সমর্থকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। তাঁর প্রয়াণে ভারত হারাল এক শুভাকাঙ্ক্ষীকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy