ছবি সংগৃহীত
আজ পৃথিবীর দিন, পৃথিবীর জন্য। প্রতি বৎসর ২২ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী উদ্যাপিত হয় পৃথিবী-দিবস। উচ্চারিত হয় নীল গ্রহটিকে ভাল রাখিবার, তাহার পরিবেশকে বাঁচাইবার মহামূল্যবান অঙ্গীকার। পৃথিবীর জন্য একটি আস্ত দিন বরাদ্দ কেন? কারণ, মানুষের এই একমাত্র বাসভূমিটির ভাল-মন্দ দেখিবার, তাহাকে রক্ষা করিবার ভার মানুষেরই হাতে। সেই কথাটি স্মরণ করাইয়া দেওয়া বড় প্রয়োজন। দিবস পালনের মাহাত্ম্য এইখানেই। পৃথিবী ভাল নাই। সে অসুস্থ, জ্বরতপ্ত। তাহাকে সারাইয়া তুলিবার এই অঙ্গীকারটুকুর গুরুত্ব সেই কারণে অনেক।
পৃথিবী-দিবসের ধারণাটি খুব নূতন নহে। এই বৎসর তাহার ৫১তম বার্ষিকী। ইহার সূত্রপাত আমেরিকায়। সেনেটর গেলর্ড নেলসন অনুধাবন করিয়াছিলেন যে, এই গ্রহ বিপন্ন, অথচ আমেরিকার জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করিবার বিষয়টির জায়গা নাই। আমেরিকার সাধারণ মানুষ পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর দিকগুলির সম্মুখীন হইতেছেন। বৃহৎ কারখানা হইতে অবাধে বিষাক্ত রাসায়নিক মিশিতেছে বাতাসে, নদীতে। রোধ করিবার জন্য কঠোর আইনি পদক্ষেপের দৃষ্টান্তও প্রায় বিরল। এমতাবস্থায় গেলর্ড একেবারে তৃণমূল স্তর হইতে এক প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করিবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়া আমেরিকার জনসংখ্যার প্রায় দশ শতাংশ মানুষ সেই দিন পথে নামিয়াছিলেন। সংখ্যাটি কম নহে। অতঃপর আমেরিকার গণ্ডি ছাড়াইয়া ‘আর্থ ডে’ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মান্যতা পাইয়াছে। পরিবেশকে যে যে-কোনও মূল্যে রক্ষা করিতে হইবে, সেই প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হইয়াছে। বিশ্ববাসী শুনিয়াছে, কিয়োটো প্রোটোকল এবং উন্নত দেশগুলির ঐতিহাসিক দায়িত্বের কথা। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত হইয়াছে প্যারিস চুক্তি। কার্বন নিঃসরণের মাত্রা হ্রাস করিয়া শিল্প-বিপ্লবের পূর্বাবস্থায় লইয়া যাইবার প্রতিজ্ঞা করিয়াছে স্বাক্ষরকারী দেশগুলি। মানুষ দেখিয়াছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ লইয়া সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের আন্দোলন। আবার দেখিয়াছে প্রাক্তন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও, যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদের প্রসঙ্গ অবলীলায় উড়াইয়া দিয়াছেন। দেখিয়াছেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোকেও, যিনি আমাজ়নের অরণ্য বাণিজ্যিক প্রয়োজনে উন্মুক্ত করিয়া দিবার কথা বলিয়া নির্বাচনে জিতিয়াছেন।
সুতরাং, পৃথিবী-দিবসের ৫১তম বর্ষে হাতে রহিল উষ্ণায়নে বিপর্যস্ত অতিমারি-ধ্বস্ত এক পৃথিবী। আজ আলোচনাচক্র আয়োজিত হইবে, মানুষ হয়তো ঘরের আলো নিবাইয়া প্রতীকী উদ্যাপনও করিবেন। কিন্তু পৃথিবী সারিবে কী? জল অপচয় বন্ধ হয় নাই। জলসঙ্কটে ভুগিতেছে বহু দেশ। অতিমারি আসিবার পর খাদ্যাভাব তীব্র হইয়াছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ জানাইয়াছে, অতিমারি যত প্রাণ লইবে, দুর্ভিক্ষে মৃত্যু হইবে আরও অধিক। অর্থাৎ, শেষের সেই দিন বেশি দূরে নহে। মানুষেরই কর্মফল। পৃথিবী-দিবস মানুষকে আরও এক শিক্ষা দিয়াছিল। ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলিয়া বৃহত্তর স্বার্থরক্ষার্থে একত্র লড়াই। কিন্তু সে শিখিল কই? অতিমারি দেখাইল, সে অন্যের ভাল তো দূরস্থান, নিজের ভালটুকুও যথার্থ বুঝে নাই। ইহাদের হাতে পৃথিবী সুরক্ষিত থাকিবে কী উপায়ে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy