হোর্ডিঙের জঙ্গল।
কলকাতা বহু দিনই ‘কুৎসিত’ হয়েছে। সৌজন্যে, যত্রতত্র হোর্ডিং টাঙানোর কু-অভ্যাস। অথচ, কলকাতা পুরসভা প্রায় এক দশক আগে শহরটিকে ‘সুন্দর’ বানানোর সঙ্কল্প করেছিল। সেই উদ্দেশ্যে শুরু হয় অভিযানও। সে সময় এসপ্ল্যানেড-ডালহৌসি চত্বর থেকে বহু হোর্ডিং সরিয়ে দিয়েছিল তারা। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল নতুন কোনও হোর্ডিং না বসানোরও। শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি পালন হয়নি। সে অঞ্চলে বেশ কিছু দৃষ্টিনন্দন ইমারত রয়েছে, যার অনেকগুলিই ঐতিহ্যবাহী। কিন্তু সে সব মুখ লুকিয়েছে হোর্ডিঙের জঙ্গলের আড়ালে। পুরসভা এত দিনেও হোর্ডিং সরানোর কাজটি করে উঠতে পারেনি কেন?
কলকাতার ঐতিহ্য বড় কম নয়। শহরের আনাচেকানাচেই ছড়িয়ে রয়েছে নানাবিধ ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্বও প্রশাসনের। কিন্তু ‘হোর্ডিঙে ঢাকা’ শহরের মুখ সেই দায়িত্ব পালনে খামতির ছবিই তুলে ধরছে। বিশ্বের অন্য কোনও ঐতিহ্যমণ্ডিত শহরে নান্দনিক বোধের এমন প্রকট অভাব চোখে পড়ে কি? শুধু এসপ্ল্যানেড-ডালহৌসি চত্বরই নয়, গোটা শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, অফিসপাড়া, আবাসিক এলাকা, সরকারি দফতর— সর্বত্র একই ছবি। রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কিংবা বাণিজ্যিক সংস্থা, বিভিন্ন প্রকল্পের বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ দৃষ্টিপথ। এমনকি বিজ্ঞাপনের হোর্ডিঙের আওতার বাইরে নেই বাতিস্তম্ভ, ফুটব্রিজ বা রাস্তার আইল্যান্ডও। ভোট কিংবা পুজোর সময়ে শহর ছেয়ে যায় নানা আকারের হোর্ডিঙে। এবং বহু ক্ষেত্রেই সে সব লাগানো হয় কলকাতা পুরসভার অনুমতি ছাড়াই। উদ্দেশ্যপূরণের পরেও সেগুলি বহু দিন নিজ স্থানে থেকে যায়। পুরসভার তরফে সেগুলি সরানোর উদ্যোগও বিশেষ চোখে পড়ে না। এই সব হোর্ডিং শহরের রাজপথে দৃশ্যদূষণ তো ঘটায়ই, পাশাপাশি এর থেকে জনসাধারণের বিপদের আশঙ্কাও থেকে যায়। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পুরনো হোর্ডিং ভেঙে পড়লে প্রাণহানি ঘটাও আশ্চর্য নয়। প্রসঙ্গত, একটি হোর্ডিং পড়ে চেন্নাইয়ে এক মহিলা স্কুটার আরোহীর মৃত্যু বা পুণেতে বেআইনি হোর্ডিং সরাতে গিয়ে একাধিক ব্যক্তির প্রাণহানির নজির রয়েছে। কিন্তু চেন্নাই বা পুণের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়নি কলকাতা পুরসভা।
এটা ঠিক যে, বিজ্ঞাপন থেকে রাজস্ব আয় হয় কলকাতা পুরসভার। কিন্তু দুর্নীতি-সহ প্রশাসনিক গাফিলতির মতো নানাবিধ কারণে অধিকাংশ হোর্ডিং থেকেই প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় হয় না। যার ফলে, গত কয়েক বছর ধরে ধুঁকছে কলকাতা পুরসভার রাজকোষ। তাই বিজ্ঞাপন থেকে আগামী দিনে যথাযথ আয়ের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে পুরসভাকে। একই সঙ্গে হোর্ডিং লাগানোর বিষয়েও সতর্ক নজর দিতে হবে তাদের, যাতে শহরের প্রস্তাবিত সৌন্দর্যায়নের প্রচেষ্টা জলে না যায়। পুরসভার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, হেরিটেজ বিল্ডিংগুলি থেকে হোর্ডিং সরানোর কাজটি অবিলম্বে সারতে চায় তারা। প্রশাসনের ইঙ্গিত পেলেই শুরু হবে কাজ। যদিও সেই ইঙ্গিত পেতে সময় লাগতে পারে আরও তিন মাস। অর্থাৎ, ফের বিলম্ব। আশঙ্কা, হোর্ডিং আড়াল সরিয়ে তিলোত্তমার নিজ রূপটি প্রকাশ করার আশু সম্ভাবনা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy