পেট্রল-ডিজ়েলের উপর শুল্ক কমানোর কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার— লিটারপ্রতি যথাক্রমে আট টাকা এবং ছ’টাকা। সেই সঙ্গে উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকদের প্রাপ্য রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে সিলিন্ডার পিছু ২০০ টাকার ভর্তুকির কথাও বলা হয়েছে। যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে চলেছে, তাতে পেট্রোপণ্যের দাম না কমিয়ে রাজনৈতিক মুখরক্ষার উপায় ছিল কি কেন্দ্রের? গত এপ্রিলে খুচরোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল, আর পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৫.১ শতাংশে। পেট্রোপণ্যের মূল্যহ্রাস নিয়ে যথারীতি রাজনৈতিক তরজা আরম্ভ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার তেলের উপর যে উচ্চ হারে বিশেষ উৎপাদন শুল্ক এবং সেস আদায় করত— যে রাজস্বে রাজ্যগুলির কোনও ভাগ নেই— শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে সেখান থেকেই। কেন্দ্রীয় সরকারও শতমুখে জানিয়েছে যে, রাজ্যগুলির ভাগে হাত না দিয়েই এই শুল্ক হ্রাস করা হল। এত দিন কেন রাজ্যগুলিকে বঞ্চিত করে কেন্দ্র একা সেই মোটা অঙ্কের রাজস্ব দখল করত, অর্থমন্ত্রী স্বভাবতই সেই প্রসঙ্গ উত্থাপন করেননি। অন্য দিকে, তাঁরা বিশেষত বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির উপর যুক্তমূল্য কর কমানোর জন্য চাপ তৈরি করছেন। যুক্তমূল্য কর যে হেতু হিসাব করা হয় কেন্দ্রীয় রাজস্বের অঙ্ক যোগ করার পর, ফলে কেন্দ্রীয় সরকার শুল্ক হ্রাস করলে রাজ্যের যুক্তমূল্য করের পরিমাণও কমে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সে কথা উল্লেখও করেছেন। পেট্রোপণ্যের দাম যে রাজনীতির প্রশ্ন নয়, মানুষের জীবনধারণের সঙ্গতির প্রশ্ন, এবং তাকে নিছক রাজনৈতিক হাতিয়ারে পর্যবসিত করলে শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষেরই স্বার্থহানি ঘটে, কেন্দ্রের নেতারা এই কথাটি স্মরণে রাখলে ভাল।
পেট্রোপণ্যের প্রশ্নটি সব মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত কেন? যাঁদের গাড়ি বা মোটরসাইকেল নেই, এমনকি যাঁদের গণপরিবহণে চড়ারও তেমন প্রয়োজন হয় না, ডিজ়েলের দাম তাঁদের জীবনেও প্রভাব ফেলে— পণ্য পরিবহণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে। কাজেই, ডিজ়েলের দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তার উপরে নির্ভরতা কমানোরও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলে খরচ সড়ক পরিবহণের তুলনায় অনেকটাই কম। আরও নানাবিধ কারণে সড়ক পরিবহণের উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে রেলকে ব্যবহার করা যায়। যেমন, বিদ্যুতে চলার কারণে এতে পরিবেশ দূষণ কম হয়, এক সঙ্গে প্রচুর জিনিসপত্র পরিবহণ করা যায়। রেলপথে পণ্য পরিবহণ সময়ও সাশ্রয় করে। অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে পণ্য পরিবহণও বাড়ছে এবং বাড়বে। রেল পরিবহণের বিকল্পটিকে এখনই গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়। বর্তমান রেল পরিকাঠামোর আরও আধুনিকীকরণ, মালবাহী রেলগাড়ির দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ও নতুন ধরনের গাড়ি তৈরি, পণ্য পরিবহণের জন্য নতুন রেলপথ বা করিডর তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে গণপরিবহণের ক্ষেত্রেও ট্রাম ও বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের বিকল্প নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে। এর জন্যও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। জ্বালানি রফতানির ব্যয় কমানো যদি সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য হয়, তা হলে সেই মতো পদক্ষেপ করা আশু প্রয়োজন। না হলে আগামী দিনে জনসাধারণের পাশাপাশি চাপ বাড়বে সরকারের উপরেও।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy