বিশ্বের সর্বত্র স্কুল খুলেছে বা খোলার তোড়জোড় চলছে। ফাইল চিত্র।
অবশেষে দ্বার খুলিল বিদ্যালয়ের। পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় রাজ্যে যদিও সেই দ্বার খুলিবার গতি অতি ধীর, এবং সকলের জন্য নহে। কিন্তু এই প্রথম সমস্ত স্তরের শিক্ষার্থীর জন্য কিছু গঠনমূলক ভাবনাচিন্তা করা হইয়াছে সরকারের পক্ষ হইতে। অষ্টম হইতে দ্বাদশ শ্রেণির অফলাইন পঠনপাঠন শুরু হইয়াছে। অন্য শ্রেণিদের জন্য শুরু হইয়াছে পাড়ায় শিক্ষালয়। সম্প্রতি শহরের বেশ কিছু বেসরকারি স্কুলও এই উদ্যোগে শামিল। প্রায় দুই বৎসর পরে বদ্ধ ঘরের অনলাইন ক্লাস হইতে আংশিক মুক্তি মিলিয়াছে শিশুদের। বিভিন্ন আর্থিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট হইতে আগত শিশুদের মধ্যে ভাব বিনিময় ঘটিতেছে, সর্বোপরি উন্মুক্ত স্থানে পাঠগ্রহণের মধ্য দিয়া শিশুদের শারীরিক, মানসিক বিকাশের সম্ভাবনাটিও জল-হাওয়া পাইতেছে। সুতরাং, এ-হেন ভাবনাচিন্তা সুন্দর, প্রশংসার্হ।
কিন্তু কিছু মৌলিক প্রশ্ন থাকিয়া গেল। প্রথমত, এই উদ্যোগ এখন কেন? এখন তো বিদ্যালয় খুলিবার সময়। বিশ্বের সর্বত্র স্কুল খুলিয়া গিয়াছে, বা খুলিবার তোড়জোড় চলিতেছে। ভারতের অন্যত্রও সেই ধারা অনুসৃত হইতে দেখা গিয়াছে। এমতাবস্থায় এই রাজ্যে পড়ুয়াদের পাড়ার শিক্ষালয়ের পথ দেখাইয়া দেওয়া হইল কেন? স্পষ্টতই, দুই বৎসরের ক্ষতি এই উদ্যোগে পূরণ হইবার নহে। অনলাইন ক্লাসের সুযোগ সকল পড়ুয়ার কাছে পৌঁছাইতে পারিতেছে না, তাহারা এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখে দাঁড়াইয়া, অবিলম্বে বিকল্প ভাবনা প্রয়োজন— এই কথাগুলি নূতন নহে। সেই বিকল্প ভাবনায় দুই বৎসর সময় লাগিল, ইহা আক্ষেপের। এখন বিকল্প ভাবনার প্রয়োজন ফুরাইয়াছে। প্রয়োজন, অবিলম্বে স্কুল খুলিবার। বিপক্ষে যে যুক্তি দেওয়া হইতেছে, অর্থাৎ সংক্রমণের ভয়, তাহা কি পাড়ার শিক্ষালয়ে নাই? সেইখানে যে জীবাণুমুক্তির কাজটি যথাযথ ভাবে হইতেছে, সেই নিশ্চয়তা কে দিবে? শ্রেণিকক্ষেই সংক্রমণ অধিক ছড়ায়, আর গাছতলায় কম— এই ধারণার কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নাই। নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্রছাত্রী লইয়া কোভিডবিধি মানিয়া যদি উন্মুক্ত স্থানে ক্লাস বসিতে পারে, তাহা হইলে একই পদ্ধতি মানিয়া শ্রেণিকক্ষেও বসিতে পারে। এত দিনেও যে নিচু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করা গেল না, তাহা কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার দায় শিক্ষার্থীর উপর চাপিবে কেন?
দ্বিতীয় প্রশ্নটি পাঠদানের পদ্ধতি লইয়া। বিভিন্ন শিক্ষার্থীর শিখিবার গতি, ভাবনার প্রকাশ এক নহে। তাহাদের কোন পদ্ধতিতে শিখানো যায়, মূল্যায়নই বা কী রূপে করা যায়, তাহা একমাত্র বিদ্যালয়ই স্থির করিতে পারে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানেন, কোন শিশুর জন্য কোন পদ্ধতি যথার্থ, কাহার বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। ইহাই বিদ্যালয়ের কাজ। সেই প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাহিরে বিদ্যালয়ের ন্যায় কার্যক্রম চালাইয়া যাইবার চেষ্টা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হইতে পারে না, কারণ সেখানে সদিচ্ছা থাকিলেও দক্ষতা নাই, পরিকাঠামোও নহে। ইহার উপর আবার বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন বোর্ডকে মিলাইবার চেষ্টা করা হইলে মূল লক্ষ্যটিই মুখ থুবড়াইয়া পড়িতে বাধ্য। তখন ইহার মূল লক্ষ্য আর শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নতি নহে, নিতান্তই এক অন্তঃসারশূন্য রাজনৈতিক চমকে পর্যবসিত হয়। দুই বৎসরের ক্ষতির পর সেই চমকের আর প্রয়োজন নাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy